ঢাকা, ০১ মার্চ- অনেক দিন আনুশেহ আনাদিলকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। অভিমান করে কিংবা ক্ষোভ থেকে দূরে সরে ছিলেন। কী এমন ক্ষোভ বা অভিমানসেটাই জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা ভেবেই উঠে যাই রাজধানীর বনানীর যাত্রাবিরতির ছাদঘরে। আনুশেহ হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে যান যাত্রার ক্যাফেতে। নকশিকাঁথায় তৈরি একটি পোশাক ছিল তাঁর পরনে। কাঁথার অসংখ্য সেলাই তাতে। বাউলাঙ্গের পোশাকটি যাত্রার তৈরি। আলাপ শুরু করার আগে দুই কাপ আদা চা চাইলেন তিনি। মাটির কাপে সেই চা আসার আগেই আলাপ শুরু হয় লাল দিয়ে। মাসিকের রং লাল। মাসিক নিয়ে তেমন কথা বলতে চায় না লোকে। আনুশেহ এ নিয়ে কথা বলতে চান, বলাতে চান। সে জন্যই নানা শিল্পমাধ্যমে মাসিক নিয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। অনলাইনে ঝাঁকে ঝাঁকে নারী শিল্পীরা সেখানে নিজেদের কাজ জমা দিয়েছেন। মাসিক নিয়ে ছবি, শিল্পকর্ম, কবিতা, বাউল গান, কর্মশালাসহ অনেক কিছু। লাল-এর ভাবনাটা কী? দেখুন যাত্রায় আমরা বোতলে পানি দিই না, টিস্যু পেপার ব্যবহার করি না। এসি আছে বটে। বিকল্প কিছু বের করতে পারলে এটাও রাখব না। যতটা পারি পরিবেশবান্ধব জিনিস ব্যবহারের চেষ্টা করি। পুরোনো ফেলনা জিনিস দিয়ে কাজ সারি। যেগুলো প্রকৃতির ক্ষতি করে না, সেগুলো ব্যবহার করি। এমনকি কাপড়ে যে রংগুলো ব্যবহার করি, সেটাও। মাসিকের ক্ষেত্রে যেটা হয়, ঢাকা শহরে প্রতিদিন আমরা এক কোটিরও বেশি প্যাড ফেলি। এটা তো একটা সমস্যা। এত প্যাড কোথায় যায়? মেয়েরা তাহলে একটা সমস্যা? তা কিন্তু না। আর এ সমস্যাটা কিন্তু আমাদের মেয়েদের তৈরি করা না। এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে এসব নিয়ে কথা বলতে পারি না। কথা বলা না গেলে বিকল্প ব্যবস্থা কীভাবে বের করব? গ্রামগঞ্জে সারা জীবন শাড়ি ভাঁজ করে কাপড় তৈরি করে মাসিকের জন্য ব্যবহার করা হয়। এনজিও, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করল, এটা নাকি স্বাস্থ্যকর না। প্যাডের মতো একটা দামি জিনিস গ্রামের লোকেরা কিনবে কীভাবে? যদি ওদের ভেতর থেকে লজ্জাটা তুলে নেওয়া যায়, তাহলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা মাসিকের কাপড়টুকু ধুয়ে রোদে শুকাতে পারি। তাহলে তো আর প্যাড দরকার হচ্ছে না। যুগ যুগ ধরে আমাদের মেয়েরা এভাবেই ব্যবহার করে আসছে। সারা পৃথিবী এখন নবায়নযোগ্য জিনিসে ফিরছে। আপনি ঘাঁটেন ইন্টারনেটে, রিইউজ্যাবল প্যাড লিখে সার্চ দেন। ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলো ফিরে যাচ্ছে সেদিকে। কাপড় ভাঁজ করছে, সেলাই করছে, ব্যবহার করছে। ধুয়ে শুকিয়ে আবার ব্যবহার করছে। আমরা করছি উল্টো। অথচ আমাদের স্যুয়ারেজ সিস্টেম, নদী-নালার অবস্থা খারাপ। প্যাডগুলো সেসব জায়গায় আটকে থাকছে। মাসিক নিয়ে লজ্জা ভুলতেই সবাই মিলে কিছু একটা করার চেষ্টা। মাসিকের সঙ্গে বাউল গানের যোগসূত্র টানলেন কীভাবে? আমি যেহেতু গান করি, অনেক দিন বাউল দর্শনের সঙ্গে ছিলাম, তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করেছি। যেমন আমার অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল। অপারেশন করতে হয়েছে। বাউল দর্শনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার পর থেকে আমার অনেক সমস্যা চলে গেছে। আমার সন্তানদের অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে বড় করিনি। তুলসীর পাতা-মধু খেতে খেতে বড় হয়েছে তারা। তাদের নিয়েই আমি কেরালায় আয়ুর্বেদ পড়তে গিয়েছিলাম। আয়ুর্বেদ মতে, পাঁচটি বিশেষ উপাদানের (পঞ্চ মহাভূত) সমষ্টিতে মানুষের সৃষ্টি। পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু এবং মহাশূন্য। হিসাব কষে যার ভেতরে যেটার আধিক্য রয়েছে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই মানুষকে জীবনযাপন করতে হবে। আমার মহাশূন্য ও বায়ুর আধিক্য আছে। এ দুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই খেতে হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে চাঁদ। চাঁদের সঙ্গে মাসিকের সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর মতো আমার শরীরেও তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। আমার রক্তের ভেতর দিয়েই ওই জল চলাচল করে। নদীর জোয়ার-ভাটা যেমন চাঁদের ওপর নির্ভর করে। একইভাবে মানুষের ক্ষেত্রেও সেটা হয়। চাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তৈরি হলে মাসিকের সাইকেলটা ক্লিন ও ক্লিয়ার হয়। এই জিনিসগুলো আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন। এই দর্শনগুলো আমাদের ছিল। আমরা সেগুলোকে ভুলে ছিলাম। এমন এক যান্ত্রিক যুগে বাস করতে শুরু করেছি যে, এসব নিয়ে কথা বলা বা চর্চার সুযোগ নেই। এখন আমার শরীর সম্পর্কে মনে হয় ওষুধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো আমার চেয়ে বেশি জানে। বাউল শফি মণ্ডল এ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন এখানে। তাঁরা জানেন, চর্চা করেন। আমাদের এখানে অর্ধেক বাউল গান হয়েছে চাঁদ নিয়ে। নারীর সঙ্গে চাঁদের যে সম্পর্ক, সেটা জানা জরুরি। নাগরিক জীবনে তাহলে দেহতত্ত্ব জানাটাও জরুরি? দেহতত্ত্ব আমার কাছে জরুরি। দেখুন, আমার বাচ্চারা স্কুলে যায় না। এক সময় সিদ্ধান্ত নিই, ওদের স্কুলে পাঠাব না। আমি স্কুলে-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছি। এখন ব্যবসা করছি। কিন্তু স্কুলিংয়ের কিছুই আমার মাথায় নেই। একটা জিনিসও এখন ব্যবহার করি না। কারণ সেগুলো কোনো কাজে আসে না। এখানে প্রতি মাসেই কাউকে না কাউকে নিয়োগ দিই। কারও থেকে সিভি নিই না। ধরা যাক, একজন ডিজাইনারকে নিলাম, তাঁকে একটা গামছা ধরিয়ে দিয়ে বলি, কিছু একটা বানিয়ে দেখাও। তার মেধা যাচাই করার জন্য এর থেকে ভালো কোনো উপায় নেই। একটা সিভি দেখে আসলে কারও ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেখেছি, একটা চিঠি লিখতে পারে না। কেউ হয়তো ফাইন্যান্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, মাসের হিসাবটা ঠিকমতো করতে পারে না। তাকে থেকে থেকে শিখতে হচ্ছে। এসবের কারণ, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা তেমন কাজের না। আমি বিদেশে পড়ালেখা করেছি। বিদেশি গান, হলিউডের ছবি দেখে বড় হয়েছি। সবকিছু ছেড়ে আমি শেকড়ে ফিরেছি, বাউল দর্শনের কাছে। দেহতত্ত্ব শেখার কারণে আমার এখন কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। তাই আমি মনে করি, ওই শিক্ষাটা নিশ্চয়ই জরুরি। [ চেয়ারে একটা বেড়াল এসে বসে। আনুশেহ বলেন, ওর নাম মোমো। ও এখানেই থাকে। ] বলুন, মাসিক নিয়ে যেটা বলছিলেন? মেয়েদের নিজেকে চেনাটা জরুরি। আমরা যদি নিজেরা নিজেদের সম্পর্কে না জানি, তাহলে পুরো মানবজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একজন পুরুষকে যদি আমি তার সম্পর্কে না বলি, তাহলে সেও নিজের সম্পর্কে জানতে পারবে না। না জেনে আমি শুধু নিজেকে প্রত্যাখ্যান করছি না। সমগ্র মানবজাতিকে প্রত্যাখান করছি। নারীদের লুকিয়ে থেকে লাভ নেই। বাউলতত্ত্ব বলে, নারী ও পুরুষ বাদে আর কোনো জাতি নেই। এ দুটি জাতি একদম আলাদা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে থাকি বলে আমাদের তাদের মতো করে চলতে হয়। মাসিক হোক, বাচ্চা হোক, আমাকে অফিস করতেই হয়। পুরুষের এসব নেই, তাই তা নিয়ে ভাবে না তারা। ক্ষেত্রবিশেষে মেয়েদের কাজ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আমাকে এ রকম কত কথা শুনতে হয়মেয়েরা এটা পারবে না, ওটা পারবে না। আমি এটা কখনো মানতে রাজি না। লাল-এ অনেক শিল্পী এসেছিলেন? অনেক। পারফরম্যান্স আর্টিস্ট প্রেমা আন্দালিব এসেছিলেন, গান করেছে ঘাসফড়িং কয়ার, সৌরিন। এক বাবা গান করেছে মেয়েকে নিয়ে। রাজশাহী, খুলনা থেকেও অনেক কাজ জমা পড়েছিল। কবিতা এসেছে। আমার সঙ্গে অনেক মেয়ের এবার পরিচয় হয়েছে, যাদের আমি আগে চিনতাম না, কিন্তু তারা ভালো ভালো কাজ করছে। প্রদর্শনীটা তাঁদের কেমন লেগেছে? এতগুলো মেয়ে একসঙ্গে হয়েছি, সেটা খুবই ইতিবাচক। আস্থা ফাউন্ডেশন ছিল আমাদের সঙ্গে। ইউটিউবে তারা একটা ভিডিও আপলোড করেছে, পিরিয়ড নিয়ে যত কুসংস্কার আছে, সেগুলোকে ভেঙে ভেঙে মজা করে, অভিনয় করে দেখিয়েছে। তারা গ্রামগঞ্জ, স্কুল-কলেজে গিয়ে কাজ করে। প্রজেক্ট কন্যা ছিল, যুগলদের নিয়ে কর্মশালা করিয়েছে। কথা ফাউন্ডেশন কর্মশালা করিয়েছে। ভাবছি লাল আবার করব। শিল্পকলা বা অন্য কোথাও, বড় করে। আপনি গান গাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, না ছেড়ে দিয়েছেন? ছাড়ব কেন। মা নামে একটা গান করেছি। এই প্রদর্শনীতে গানটা গেয়েছি। নতুন অনেকগুলো গান লিখেছি। বের করতে করতেও করিনি। সবাই বলছিল, আজকাল অ্যালবাম হয় না। ভিডিও করো। সেটাও তো একটা এক্সট্রা কাজ। সবাই নাকি আজকাল ভিডিও দেখে। আমার মনে হলো তাহলে তো খবর আছে। এখন ভিডিও করতে হবে! কিন্তু একটা বিরতি তো ছিলই। কারণটা কী? কাজের চাপ, নাকি অভিমান? বিরতি ছিল বটে। সেটা গান থেকে নয়, পারফরম্যান্স থেকে। প্রথমত, কাজের চাপের থেকে বেশি...যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারব না। হয়েছে কি, বাচ্চারা বাড়িতে পড়ে, সেটা একটা কারণ। কাজটাজ মিলে একটা ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, যাদের সঙ্গে গান করতে চাই, তাদের সঙ্গে গান করা হয় না। সবাই ব্যস্ত। গান অনেক লেখা হয়েছে, বের করা হয় না। ইদানীং অবশ্য উপলব্ধি হচ্ছে যে, গানটা করা উচিত। না করতে করতে, না করার অভ্যাস হয়ে যাবে। দহন নামের একটা ছবিতে আপনার গান ব্যবহার করা হয়েছিল। জিজ্ঞেস না করেই আমার গাওয়া গানটা ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রায় মামলা করেই দিচ্ছিলাম। পরে ভাবলাম, গানটা ব্যবহার করে কোনো টাকা দেয়নি। মামলা করলে উল্টো আমার টাকা খরচ হবে। সেটাও আবার এক্সট্রা একটা কাজ। অনুমতি না নিয়ে গান ব্যবহার করেছে। তাতে মন খারাপ হয়েছিল? কিছু একটা করা উচিত ছিল। ফেসবুকে লিখেছিলাম। আলোড়ন তৈরি হওয়ার পর আবদুল আজিজ আমাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। তখন আমি বললাম, অনুমতি না নিয়ে কেন ব্যবহার করলেন? তিনি বলেছেন, যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি বললাম, এখন তো করলেন। সামান্য সৌজন্য বোধের ব্যাপার এটা। এতটুকু বললেই হতো যে, আমি গানটা ব্যবহার করছি। সেদিন আমি মা গানটি গাইলাম। একটা ছেলে সেটা ভিডিও করে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় বলল, আমি একটা ডকুমেন্টারি করছি। আমি কি গানটা ব্যবহার করতে পারি? আমি বলেছি, করতে পারো। ওইটুকু জিজ্ঞেস করতেই পারত। আজিজরা যে ঝামেলাটা করেছেন, ওই গানটার রাইট কলকাতার শান্তনু মৈত্রর। অনি সেন নামে একজন একটা ডকুমেন্টারি করেছিল। শান্তনু মৈত্র তাতে সাউন্ডের কাজ করেছিলেন। তাঁদের অনুমতি ছাড়া আবদুল আজিজ দহন ছবির ট্রেলারে গানটা ব্যবহার করেন। কপিরাইট নিয়ে এত কথা, এত দৌড়াদৌড়ির পর বড় বড় প্রযোজক যদি সেটা অমান্য করে, মিউজিশিয়ানরা যাবে কোথায়, বলেন? টাকা চাইনি, জিজ্ঞেস তো করবে? নামটাও তো দিতে পারত! গানটা করছে কে? আগে যখন কথা হয়েছিল, তখন বলেছিলেন ব্যবসা নিয়ে কী একটা ঝামেলা হয়েছিল? বাইরে থেকে দেখলে হয়তো বোঝা যায় না, হয়তো বোঝা যায়। ঢাকা শহরটা অনেক বদলে গেছে। গত ১০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজার ওপেন হয়ে গেছে। আমাদের এখন প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বার্গার কিং, পিৎজা হাটের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। তারা অনেক মূলধন নিয়ে এখানে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠি কীভাবে? ধানমন্ডিতে আমাদের যে দোকানটা বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে স্বপ্ন ঢুকেছে। সেখানেও বিদেশি জিনিস বিক্রি হচ্ছে। সুপারশপ আমাদের এখানে ১০ বছর আগেও ছিল না। ঢাকায় জিনিসপত্রের দাম এখন কলকাতা বা ব্যাংককের থেকে অনেক বেশি। বাচ্চাদের নিয়ে কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডে থাকতে হয়েছিল, বাসা ভাড়া করে। এত সস্তায় ঢাকায় থাকা আর ভালো ভালো খাবার খাওয়া সম্ভব না। আশপাশে তাকালে দেখবেন প্রবর্তনা নেই, বাংলার মেলা নেই। ১০ বছর আগে দেখা ছোট ছোট দেশি ব্র্যান্ড কয়টা আছে? দেশি দশ খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। আমাদের টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব কিন্তু ক্রেতারও। ঈদের আগে পাকিস্তানি একটা শাড়ি ৫ লাখ টাকা দিয়ে কেনা যায়, কিন্তু দেশি একটা শাড়ি ৩ হাজার টাকায় কিনতে গেলে মনে হয় দাম বেশি। অনেকেই বলেন, আনুশেহ লুকিয়ে থাকেন? কখন লুকালাম! এখানে তো প্রতিদিনই আসি। একটা ব্যাপার অদ্ভুত লাগতে পারে আপনার কাছে। কিন্তু আমার জন্য সেটা অনেক বড় ঘটনা। আমার বাচ্চারা তখন অনেক ছোট। তাদের নিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছিলাম। খেলছি খেলছি, হঠাৎ জানাজানি হয়ে গেছে যে আনুশেহ এসেছে। তখন আমি অনেক গান করছি। চেনা মুখ। মানুষ এমনভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ল! আমার সঙ্গে ছবি, বাচ্চাদের সঙ্গে ছবি। তাদের কোলে নিয়ে ছবি। আমার দুই বাচ্চা ভ্যা ভ্যা... করে কেঁদে ফেলল। তখন আমার মনে হয়েছিল, বোরকা পরে গান করব, চেহারা দেখাব না। (হাসতে হাসতে)। বাচ্চাকে নিয়ে চুপচাপ কোথাও বসতে পারি না, গল্প করতে পারি না। সেটা ছিল একটা বড় কারণ। শো না করার পেছনে একটা ঘটনা এটা। ভেবেছিলাম বাচ্চারা একটু বড় হোক। এখন আমি রাস্তায় চলতে পারি, বাসে উঠতে পারি। তিন মাস টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করলে এই স্বাধীনতাটা আমার থাকবে না। আমার কাছে এই স্বাধীনতাটা অনেক জরুরি। আপনি বিরক্ত? অনেক বিরক্ত। কিন্তু আবার অনেক আশাবাদীও। অনেক ইয়াং ছেলেকে দেখি বাইরে থেকে পড়ালেখা করে অনেক আশা নিয়ে দেশে ফেরে। আমি বিদেশে থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু এখানেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার শেকড়েই আমার সবকিছু। আমার মতো এ রকম হাজার হাজার ছেলে আছে, যারা বাইরে গিয়ে পড়ালেখা করে ফিরেছে। যদিও তাদের অনেক সুযোগ ছিল বাইরে। দেশে কিছু একটা করতে চেয়েছে তারা। কিন্তু পদে পদে বাধা এখানে। এথিক্যালি ব্যবসা করতে গেলে বাধা। নষ্ট হয়ে যেতে হবে। ডাকাত হতে হবে। সবার সঙ্গে খাতির রাখতে হবে। সবাইকে একটু একটু করে টাকা দিতে হবে। তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না। যাত্রার কারণে তিনবার আদালতে গিয়েছি। কোনো কারণ ছাড়াই। ঘুষ দিইনি, সেই জন্য। এত ঝড়ঝাপ্টা সামলে পারবেন? ২০২০ সালে যাত্রার বয়স ২০ বছর হবে। এত দিন যখন পেরেছি, আরও কিছুদিন হয়তো পারব। আসলে ডিজিটালি যদি ট্যাক্স দিতে পারতাম, কেন আমার ট্যাক্সের জন্য অফিসে যেতে হবে। কেন ট্যাক্সে অফিসের একজনের সই লাগবে? সই যার লাগবে, সে-ই হচ্ছে ঘুষখোর। পাসপোর্ট অফিসে কেন একজন লোকের কাছে গিয়ে সই নিতে হবে। সে-ই তো ঘুষ খাচ্ছে। ওই লোকটিকে বাদ দিয়ে দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে ঘুষখোরের প্রয়োজন নেই। খুব সহজ একে বাদ দেওয়া। কে চোর কে সাধু, সেটা তো দেখা সহজ এখন। মনিটর করা সম্ভব। আগের নিয়ম এখন কেন মানতে হবে? আগের নিয়মে কেন চলতে হবে, বড় বড় কোম্পানি ট্যাক্স দেবে না, ছোটগুলোকে দিতে হবে! ভারতে হ্যান্ডিক্র্যাফটসের আয়কর খুবই কম। আমাদের এখানে যদি আমি চাইনিজ জিনিস এনে বেচতাম, কোটিপতি হয়ে যেতাম। যেহেতু দেশি জিনিস বিক্রি করছি, ভুগতে হচ্ছে। দেশি জিনিসের ব্যাপারে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। ভারতে রাষ্ট্র দেশি জিনিস নিয়ে কাজ করছে। আমাদের এখানে করছে ব্যক্তি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এমএ/ ০৪:২২/ ০১ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2XtC8Yw
March 01, 2019 at 10:28PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন