জলপাইগুড়িতে বন্ধ হতে পারে নিশ্চয়যান পরিসেবা

ধূপগুড়ি, মার্চঃ গত বছরের জুন-জুলাই মাস থেকে জলপাইগুড়ি জেলায় নিশ্চয়য়ান চালকদের ভাড়ার টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এর জেরে জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অন্তঃসত্ত্বা ও নবজাতকদের দেওয়া নেওয়ার কাজে যুক্ত নিশ্চয়যান চালকরা সমস্যায় পড়েছেন। জানা গিয়েছে, গত সাত-আট মাসে টাকা না দেওয়ায় জেলায় নিশ্চয়য়ান চালকদের পাওনা বেড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা হয়েছে। দীর্ঘদিন টাকা না পাওয়ায় জেলার ১৩৬টি নিশ্চয়য়ান পরিসেবা প্রদানকারী অ্যাম্বুলেন্সচালক ও মালিকরা সমস্যায় পড়েছেন। সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করে জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ জগন্নাথ সরকার বলেন, ফান্ডে টাকা নেই বলেই নিশ্চয়য়ান চালকদের বকেয়া মেটানো যাচ্ছে না। রাজ্য থেকে ভাড়া বাবদ টাকা চলে এলেই দ্রুত সমস্ত ব্লকে টাকা দিযে দেওয়া হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, এমন কোনো সমস্যার কথা বা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তহবিলে টাকা না থাকার কথা আমার অন্তত জানা নেই। সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিশ্চয়ই প্রয়োজনমতো অর্থ বরাদ্দ হবে। জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা পুরো বিষয়টি দেখবেন বলে তিনি জানান।

নিশ্চয়য়ান পরিসেবার মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও তার নবজাতককে বিনামূল্যে বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফের বাড়িতে পেঁছে দেওয়া হয়। এজন্য সরকারের তরফে কিলোমিটার প্রতি আট টাকা হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। এই ভাড়ার পরিমাণ নিয়ে নিশ্চয়য়ান মালিকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। সারা মাস নিশ্চয়য়ান পরিসেবা দিয়ে চালক তথা মালিকরা এক-একটি গাড়ির জন্য গড়ে পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা ভাড়া ও তেল খরচ পান। এই হিসেবে সারা জেলায় গত জুন-জুলাই মাস থেকে বকেয়া পড়ে থাকা ভাড়ার পরিমাণ বেড়ে প্রায় তিন কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। ধূপগুড়ির এক নিশ্চয়য়ান চালক দুলাল ঘোষ বলেন, ২০১১ সালে যখন পেট্রোলের দাম ছিল ৬০ টাকার আশপাশে তখনও আমরা যে ভাড়ায় কাজ করতাম আজও যখন ৭৫ টাকা লিটার দরে পেট্রোল কিনতে হয় তখনও আমরা ভাড়া বাবদ সেই আট টাকাই পাই। শুধুমাত্র পেটের জ্বালায় কাজ করে চলেছি। এরপরেও টানা আট মাস হতে চলল টাকা পাই না। নিশ্চয়য়ান চালকদের ইউনিয়নের পক্ষে জলপাইগুড়ি জেলা অ্যাম্বুলেন্সচালক সমিতির সম্পাদক দিলীপ দাস বলেন, আমাদের জেলার নিশ্চয়য়ান মালিক ও চালকরা চরম সংকটে রয়েছেন। কোনো ব্লকে সাত মাস আবার কোথাও আট মাস যাবত্ ভাড়ার টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি জানান, মা ও নবজাতকরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে সেকথা ভেবেই দীর্ঘদিন বিল না পাওয়া সত্ত্বেও পকেট থেকে খরচ জুগিযে পরিসেবা চালিযে যেতে হচ্ছে। অনেক চালক বাজার থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে নিশ্চয়যান পরিসেবা সচল রেখেছেন। তিনি বলেন, এবিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করে জানতে পারি কেন্দ্র সরকার টাকা না পাঠানোয় রাজ্য সরকার আমাদের টাকা দিতে পারছে না। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্তাদেরও আমরা আমাদের দুরবস্থার কথা জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি বকেয়া টাকা না পেলে এভাবে পরিসেবা চালিযে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। আশা করি, স্বাস্থ্য দপ্তর আমাদের বিষয়টি নিযে দ্রুত সদর্থক কিছু করবে। এদিকে, চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এবিষযে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিযে ভাড়ার বকেয়া টাকা না মেটানো হলে চালকরা পরিসেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে লোকসভা ভোটের মুখে কোনোভাবেই যাতে এই পরিসেবা বন্ধ না হয় সেজন্য বিভিন্ন মহল উদ্যোগী হয়েছে।



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2tTliom

March 08, 2019 at 02:18PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top