বাগান খুলুক, চাইছেন বন্ধ রেড ব্যাংকের চৌকিদাররা

শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটাঃ জাতীয় রাজনীতি এখন চৌকিদারময়। তবে প্রকৃত অর্থেই যাঁরা চৌকিদার, বন্ধ রেডব্যাংক চা বাগানের সেই ৪০ জন শ্রমিক কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন, এসব করে তাঁদের লাভ কী হচ্ছে? সব দেখেশুনে চূড়ান্ত হতাশ ওই চৌকিদারদের সাফ কথা, রাজনীতি নয়। নেতাদের যদি চৌকিদারদের নিয়ে এতই চিন্তা তবে তাঁরা ভালো কিছু করে দেখান। নিদেনপক্ষে বাগানের তালাটুকু তো খুলুন।

২০১২ সালে ঠিক পুজোর আগে বানারহাট থানার অন্তর্গত রেডব্যাংকের পরিচালকরা মজুরি, বোনাস বকেয়া রেখে সেই যে চম্পট দেন তারপর থেকে আর কারও দেখা মেলেনি। বাস্তবে ওই বাগানটির এরকম খোলা-বন্ধের সাপলুডো খেলা চলছিল ২০০৩ সাল থেকেই। যার অর্থ, ১৫ বছর ধরে এই অবস্থায় আছেন সেখানকার সাড়ে আটশোরও বেশি শ্রমিক। যদিও ৪০ জন চৌকিদারের ভবিষ্যৎ চড়ান্ত অনিশ্চিত জেনেও বাগান পাহারার কাজে খামতি নেই। পালা করে ওই ৪০ জন ২৪ ঘণ্টা ধরে চৌকিদারি চালিযে যান বাগানের ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল ও ম্যানেজারের বাংলোতে। তাঁদের মধ্যে ২৬ জন ফ্যাক্টরি ও হাসপাতালে, ৬ জন বাংলোতে ও বাকি ৮ জনের ডিউটি বাগানের আনাচে-কানাচে। প্রতি দুঘণ্টায় দুজন করে শ্রমিক পাহারাদারির কাজ করেন। রাতে থাকেন ৪ জন। বিনিময়ে অবশ্য মজুরি দেওয়ার কেউ নেই। ভরসা বলতে সরকারি মাসিক অনুদান, ২ টাকা কিলোর সরকারি চাল, ব্লক প্রশাসন থেকে পাওয়া জিআর সহ অতিরিক্ত আরও ১টি জিআর মিলিয়ে মোট ২৪ কিলো চাল এবং অগতির গতি ১০০ দিনের কাজ। যদিও ১০০ দিনের কাজের টাকা অনিয়মিত।  সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে ডুয়ার্সের ২৮টি বকেয়া প্রাপক বাগানের  শ্রমিকদের মজুরি রাজ্যের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও রেডব্যাংকের শ্রমিকরা এখনও তা পাননি। বকেয়া সংক্রান্ত নথি না মেলায় ওই টাকা তাঁদের এখনও দেওযা সম্ভব হয়নি বলে শ্রম দপ্তর আগেই জানিয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে বাগানে চৌকিদারির কাজ করছেন আপার লাইন শ্রমিক মহল্লার ৬১ বছরের সীতারাম মুন্ডা। তিনিই বাকি পাহারাদারদের সর্দার। চৌকিদার শব্দ নিযে ভোট ময়দান যে সরগরম তা বিলক্ষণ জানা আছে তাঁর। রবিবারের বারবেলায় বাড়ির দাওয়ায় বসে বিহ্বল দৃষ্টিতে বলেই চলেন, আসল চৌকিদার তো আমরাই। অথচ আমাদের মতো মানুষের কথা কিন্তু নেতারা ভাবছেন না। রাজনীতি বুঝি না। তবে সত্যিই দেশের নেতারা যদি চৌকিদারপ্রেমী হযে থাকেন তাহলে বাগানটা খুলে দিন।

গর্জু লাইনের প্রধান লোহার, টিন লাইনের শিলাস মুন্ডা, নিচ লাইনের পারু ওরাওঁ, তিন নম্বর লাইনের মুনু মুন্ডার মতো অন্য চৌকিদাররাও একই সুরে জানান, কীভাবে বেঁচে আছেন তার খবর কে রাখে! আসল চৌকিদারদের পরিস্থিতি জানার সময় কারও নেই। থাকলে বাগানটা অন্তত এতদিনে খুলে যেত। রেডব্যাংক দেখভালের জন্য স্থানীয উদ্যোগে যে কমিটি রয়েছে তার আহ্বায়ক সুশীল সরকার, সদস্য পার্থ সরকার জানান, ওই ৪০ জন যেভাবে বিনা পারিশ্রমিকে এখনও কাজ করে যাচ্ছেন তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2FojqJx

March 25, 2019 at 12:48PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top