ঢাকা, ১১ মার্চ- অপার রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ওয়েলিংটনের উইকেট। যেখানে রানের বন্যা বইয়েছেন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা, সেখানে খাবি খাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। সাবলীল হতে পারছেন না তারা। ব্ল্যাক ক্যাপস পেসারদের পেস-সুইং-বাউন্সার-ইয়র্কারে রীতিমতো ঘাম ঝরছে তাদের। দিন শেষে ৩ উইকেটে ৮০ রান করেছে টাইগাররা। মোহাম্মদ মিঠুন ২৫ ও সৌম্য সরকার ১১ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। ইনিংস হার এড়াতে এখনও বাংলাদেশের দরকার ১৪১ রান। হাতে আছে ৭ উইকেট। ইতিমধ্যে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক ও সাদমান মান ইসলাম। টপঅর্ডারের মূল তিন ব্যাটসম্যান ফেরায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা জাগছে, হার এড়াতে পারবেন সফরকারীরা? পঞ্চম দিন মূলত হবে মাহমুদউল্লাহ বাহিনীর টিকে থাকার লড়াই। গোটা দিন টিকে থাকতে হবে। ব্যত্যয় ঘটলে লিড শোধ করলেও হারের শংকা থাকবে। কারণ, শেষ দিন ৯০ ওভারের ওপরে খেলা হবে। কাজেই বাকি ভারটুকু ঘাড় থেকে নামালেও চলবে না। ৬০/৭০ ওভার ব্যাট করে ৫০-৬৫ রানের টার্গেট দিলেও জিতে যাবে নিউজিল্যান্ড! দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ট্রেন্ট বোল্টের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে মাত্র ৪ রান করে ফেরেন ইনফর্ম তামিম ইকবাল। এর রেশ না কাটতেই তার শিকার বনে ফেরেন মুমিনুল হক। পরে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন সাদমান ইসলাম। ভালোই সঙ্গ পাচ্ছিলেন। এবার থেমে যান তিনি। ম্যাট হেনরির শর্ট বলে বিজে ওয়াটলিংকে ক্যাচ দিয়ে আসেন বাঁহাতি ওপেনার। ড্রেসিংরুমের পথ ধরার আগে ৪৪ বলে ৪ চারে ২৯ রান করেন সাদমান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৫৫। মোহাম্মদ মিঠুন ১২ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। ক্রিজে তার নতুন সঙ্গী সৌম্য সরকার। চতুর্থ দিন নিয়ে বড় আশা ছিল বাংলাদেশের। দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন টাইগাররা। উইকেট থেকে সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে চিত্র ঠিক উল্টো। উইকেট হয়ে যায় ব্যাটিংবান্ধব। বল সোজা ব্যাটে আসে। পেস-স্পিন অকার্যকর হয়ে যায়। এর পুরো ফায়দা লুটেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। রানের পাহাড় গড়েন তারা। রস টেইলরের ডাবল সেঞ্চুরি, হেনরি নিকোলসের সেঞ্চুরি ও কেন উইলিয়ামসনের হাফসেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৪৩২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেন স্বাগতিকরা। বৃষ্টিতে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দুই দিন ভেসে গেছে। ফলে দ্বিতীয় টেস্ট কার্যত তিন দিনের ম্যাচে পরিণত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ভালো সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ২২১ রানের লিড নেয় কিউইরা। স্বাভাবিকভাবে জয়ের আশায় ব্যাট ছাড়েন তারা। অবশেষে তৃতীয় দিন শুরু হয় ব্যাট-বলের লড়াই। এদিনও শেষ বিকালে বৃষ্টি ঝরে। এর আগে কিউই বোলিং তোপে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ২ উইকেটে ৩৮ রান তুলে দিন শেষ করে নিউজিল্যান্ড। ১০ রান নিয়ে কেন উইলিয়ামসন ও ১৮ রান নিয়ে টেইলর পরের দিনের খেলা শুরু করেন। শুরুতেই দুবার লাইফ পান টেইলর। এরপর দুর্দমনীয় গতিতে ছুটতে থাকেন তিনি। লাগামহীনভাবে ছুটতে থাকেন উইলিয়ামসনও। রানে পিছিয়ে থাকলেও আগে ফিফটি করেন তিনিই। খানিক পর ফিফটি পেয়ে যান টেইলরও। পরে ঝড়ের গতিতে রান তোলেন তারা। বাংলাদেশ বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালান এ জুটি। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে কচুকাটা করেন মোস্তাফিজদের। সাজান নান্দনিক সব স্ট্রোকের পসরা। সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান দুজনই। তবে হঠাৎই খেই হারান উইলিয়ামসন। তাইজুল ইসলামের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ১০৫ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৭৪ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন অধিনায়ক। সঙ্গী ফিরে গেলেও মন্থর হননি টেইলর। বরং তার তাণ্ডব আরও বাড়ে। ওয়ানডে মেজাজে রান তোলেন। সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন মাত্র ৯৭ বলে। পরের ফিফটি করেন ৩৬ বলে। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ১৮তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন টেইলর। কোনোভাবেই তাকে দমানো যায়নি। অন্যপাশে যথার্থ সঙ্গ পান হেনরি নিকোলসের। তাতে ছোটে স্বাগতিকরা। ধীরে ধীরে লিড বাড়ে তাদের। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বাড়ে হতাশা। পথিমধ্যে দেড়শ রান স্পর্শ করেন টেইলর। তাতেই ক্ষ্যান্ত হলে তাও একরকম হতো। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে তার ব্যাট আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে। রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে এগিয়ে যান ডাবল সেঞ্চুরির পথে। যোগ্য সমর্থন পান নিকোলসের কাছ থেকে। তিনিও কম যাননি। ক্রিজে এসেই উইলিয়ামসনের জায়গাটা পূরণ করে ফেলেন। মাঝে ফিফটি তুলে চোখ রাঙাতে থাকেন তিনিও। আগে কাঙ্ক্ষিত তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন নিকোলসই। অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি। ১২৯ বলে ৯ চারে ১০৭ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে তাইজুল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। পরক্ষণেই ক্যারিয়ারে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন টেইলর। এরপর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি তিনিও। কাঁটায় ২০০ রান করে মোস্তাফিজুর রহমানের বলির পাঁঠা হয়ে ফেরেন এ ব্যাটিং স্তম্ভ। ২১২ বলে ১৯ চার ও ৪ ছক্কায় এ অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস সাজান টেইলর। তার বিদায়ের পর ঝড় তোলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও বিজে ওয়াটলিং। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আবু জায়েদের তৃতীয় শিকার হয়ে ওয়াটলিং ফিরলে ইনিংস ঘোষণা করে নিউজিল্যান্ড। গ্র্যান্ডহোম ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে আবু জায়েদ নেন ২ উইকেট। এন এ/ ১১ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2NZmvE4
March 11, 2019 at 05:47PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন