তমালিকা দে, শিলিগুড়িঃ ভোটের মরশুমে হঠাৎ কোডিং নিয়ে আলোচনা শুরু করলে লোকে পাগল বলে মনে করতে পারে। প্রথম কথা, কোডিং এখনও আমাদের সমাজে প্রচলিত শব্দ নয়। দ্বিতীয় কথা, ভোটের বাজারে যেসব নেতা হুড়োহুড়ি করছেন, তাঁরা জানেন না, মানবকল্যাণে কোডিং-এর ভবিষ্যৎ কী! ১৭ বছরের মৈত্রেয়ী কিন্তু জানে। কোডিং-ই এখন তার ধ্যানজ্ঞান। এই বয়সেই সে বুঝে গিয়েছে, ক্যানসার শনাক্ত করাই হোক অথবা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে ধারণা, সব কিছুতেই কোডিং-এর ভূমিকা। স্কুলে পড়তে পড়তেই সে এমন একটি যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছে, যা যানবাহনের ভিড়ে চলাচলের ক্ষেত্রে শ্রবণ-অক্ষমদের সাহায্য করতে পারে। যেমন, শ্রবণ-অক্ষমদের পিছনে গাড়ি থাকলে ওই যন্ত্র সতর্ক করে দিতে পারে।
কলকাতার মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিলিগুড়ির সাগ্নিক সাহার অনেক বিষযে মিল রয়েছে। মৈত্রেয়ী কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর এমন বিষয় নিযে গবেষণা করতে চায় যা মানবকল্যাণে কাজে লাগে। সাগ্নিকও গবেষণা করতে চায়। তবে তার পছন্দের বিষয় অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। মহাকাশের রহস্য তাকে আকর্ষণ করে। মৈত্রেয়ী অবসর সময়ে পিয়ানো বাজাতে পছন্দ করে, সাগ্নিকেরও শখ কিবোর্ড বাজানো। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মিল হল, দুজনেই আর কয়েক মাস পরে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবে। এবং তাদের এই উচ্চশিক্ষার পিছনে টাটা গোষ্ঠীর ভূমিকা রয়েছে।
এই কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রতন টাটার নামও জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৫৯ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আর্কিটেকচারে স্নাতক হন। তারপর ২০০৮ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৫ মিলিয়ন ডলার দেন। ওই অর্থ দিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি তহবিল তৈরি করে এবং সেই তহবিল থেকে ভারতীয় পড়ুযাদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর মেধার ভিত্তিতে ৫ জন ভারতীয় পড়ুয়াকে টাটা স্কলারশিপের জন্য বেছে নেয় এবং চার বছরের জন্য এই স্কলারশিপের পরিমাণ ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে পড়ুয়া বাছাইয়ের ক্ষেত্রে টাটাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকে না।
এবার বুঝুন, এত বড়ো একটা দেশ থেকে মাত্র পাঁচজন পড়ুযা নির্বাচিত এবং তার মধ্যে রয়েছে কলকাতার দিল্লি পাবলিক স্কুল (রুবি পার্ক)-এর মৈত্রেয়ী এবং শিলিগুড়ির জিডি গোয়েঙ্কা স্কুলের সাগ্নিক। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় সাগ্নিকের একবার মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় শিক্ষামূলক ভ্রমণে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে যাওযার পরই তার বিদেশে গবেষণা করার আগ্রহ বাড়ে। অতঃপর দেশে ফিরে ইনটারনেটে খোঁজখবর শুরু। সেখান থেকেই সে টাটা স্কলারশিপের খোঁজ পায়।
সন্তানের সাফল্যে সাগ্নিকের বাবা-মার স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। তার মা রুমা সাহা যেমন বললেন, ছোটোবেলা থেকেই সাগ্নিক পড়াশোনায় মনোযোগী। বিদেশে পড়াশোনা করার ইচ্ছে বরাবর এবং সেই সুযোগ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে গিয়েছে। আমি সবসময় ওর পাশে থেকেছি। সাগ্নিকের বাবা প্রসেনজিৎ সাহা মেখলিগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। আপাতত সাগ্নিকের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবার অপেক্ষা ছেলের ক্লাস টুয়েলভের রেজাল্টের জন্য। সাগ্নিকের স্কুলের অধ্যক্ষা সোনিকা শর্মাও একইরকম খুশি। তাঁদের স্কুলের ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে। তেমন মুহূর্তে সাগ্নিকের এই সাফল্যের খবর শুনে সোনিকা শর্মা বলেছেন, স্কুলের দশম বর্ষে এই সাফল্য উপহার দিল সাগ্নিক। তার এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।
মৈত্রেয়ী এবং সাগ্নিকের মধ্যে আরও একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। মৈত্রেয়ী যেমন মনে করে, সব সাফল্য এবং আইডিয়ার পিছনে তার মা’ই অনুপ্রেরণা। সাগ্নিকও তার জীবনে মার ভূমিকার কথা বলছে। তার কথা, বাবা-মা এবং স্কুলের সাহায্য ছাড়া আমার স্বপ্ন অধরা থেকে যেত।
The post উচ্চশিক্ষায় স্বপ্নের উড়ান মৈত্রেয়ী ও সাগ্নিকের appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2Gm5CRP
April 12, 2019 at 01:10PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন