কর্মসংস্থানই মূল সমস্যা আলিপুরদুয়ারে

মোস্তাক মোরশেদ হোসেন,বীরপাড়াঃ তৃণমূলের জমানায় আলিপুরদুয়ারবাসীর অন্যতম প্রধান প্রাপ্তি পৃথক জেলা। জেলা ঘোষণার পর জেলা সদর আলিপুরদুয়ারের বুকে ডুযার্সকন্যা নামের প্রশাসনিক ভবন জেলাবাসীর আর একটি প্রাপ্তি। তবে, পৃথক জেলা মিললেও জঙ্গলে ঘেরা আলিপুরদুয়ার জেলার এখনও অন্যতম প্রধান সমস্যা কর্মসংস্থান। জেলার প্রচুর মানুষ পেটের দায়ে পাড়ি দিয়েছেন দিল্লি থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারতের নানা রাজ্যে। শয়েশয়ে মানুষ দিন মজুরি করছেন প্রতিবেশী দেশ ভুটানে।

আলিপুরদুয়ার জেলায় চা বাগানের সমস্যা দীর্ঘদিনের। মাঝে মাঝেই ঝাঁপ বন্ধ হয় বাগানের, আবার খোলে। ফের বন্ধ হয়।  ২০০২ সাল থেকে  বীরপাড়ার ঢেকলাপাড়া, ২০১৩ সাল থেকে বান্দাপানি, ২০১৫ সাল থেকে ডানকানসের লঙ্কাপাড়া চা বাগান বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে মাদারিহাটের মুজনাই বাগান। বন্ধ কালচিনির মধু চা বাগানও। বন্ধ, অচল চা বাগানগুলিতে রাজ্য সরকারের তরফে র‌্যাশন, ফাওলাই সহ নানা প্রকল্প চালু করা হলেও কাজের খোঁজে বাগান ছেড়েছেন অনেকেই। কেউ নদী থেকে বালি-বজরি তোলার কাজ করেন। মেয়েরা পরিচারিকার কাজ করতে পাড়ি দিয়েছেন দেশের নানা শহরে। পুলিশের তদন্তেই উঠে এসেছে,  চা বলয়ে আর্থিক অনটনের সুযোগে গড়ে উঠেছে নারী পাচারচক্র।

নেই নেই করেও আলিপুরদুয়ারবাসীর প্রাপ্তির ঝুলি অবশ্য একেবারেই  শূন্য নয়। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের অনেকগুলিতেই পিচ, কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। গ্রামগঞ্জের পাশাপাশি চা বাগানগুলিতে পানীয় জলের প্রকল্প,  ফালাকাটায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, দমকলকেন্দ্র সহ জেলায় কয়েকটি সবজি মান্ডিও হয়েছে। বীরপাড়া-লঙ্কাপাড়া রোড পুনর্নির্মাণ, কলেজ, ব্লাড ব্যাংক হয়েছে। কালচিনির মালঙ্গী চা বাগান, বীরপাড়ার রামঝোরা চা বাগানে হাসপাতাল হচ্ছে, জয়গাঁওয়ে দমকলকেন্দ্র, শিল্পতালুক, ফালাকাটার যোগীঝোরা শিল্পতালুক তৈরির কাজ চলছে। কুমারগ্রাম ব্লকে ডাম্পিং গ্রাউন্ড হলেও এখনও তা আলিপুরদুয়ার জেলা সদর, বীরপাড়ার অন্যতম প্রধান সমস্যা। ভাঙন রোধে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু নদীবাঁধ তৈরি হয়েছে জেলায়।

তবে কর্মসংস্থানের অভাবে বিপথে যাচ্ছে জেলার উঠতি প্রজন্মের একাংশ। বেকারদের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। আলিপুরদুয়ারেও সরকারি চাকরির সুযোগ বাড়েনি। হতাশা বাড়ছে শিক্ষিত প্রজন্মের মধ্যে। বীরপাড়া ও কালচিনি ব্লকের ভুটান সীমান্ত বরাবর গড়ে উঠেছে মদ, গন্ডারের খড়্গ, তক্ষক, নিষিদ্ধ ওষুধ পাচারের চক্র। প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি ও লিংকম্যানদের একাংশ সরকারের বদান্যতায় পুনর্বাসন পেলেও একটি অংশের মনে বঞ্চনার ক্ষোভ রয়েছে। জিএসটি চালুর পর বারবিশায় কমার্শিয়াল সেলস ট্যাক্স চেকপোস্ট তুলে দেওয়ায় রোজগারহীন হয়ে পড়েছে হাজার তিনেক পরিবার।

আলিপুরদুয়ার জেলা ঘিরে পর্যটন বিকাশের প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যায় নেতা-মন্ত্রীদের মুখে। তবে, কিছু ব্লু হোম স্টে তৈরি ছাড়া আলিপুরদুয়ারে পর্যটনের আদৌ বিকাশ হয়নি বলে অভিযোগ জেলার অনেকেরই। ফালাকাটা ব্লকের কুঞ্জনগর পর‌্যটন কেন্দ্র, দক্ষিণ খয়েবাড়ির প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০১৫ সালে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশের জেরে অনেক রিসর্ট বন্ধ হয়ে যাওযায় উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন সান্তালাবাড়ি, পাপ্পু বস্তি, বক্সা, জয়ন্তী, রাজভাতখাওয়ার বাসিন্দাদের অনেকেই। অভিযোগ, পর্যটনের বিকাশ হয়নি কুমারগ্রামেও। এমনকি, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করার জন্য গেট তৈরির পরও আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের শালকুমারহাটে পর্যটনের আশানুরূপ বিকাশ হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

আলিপুরদুয়ারের তৃণমূলের প্রার্থী দশরথ তিরকি বলেন, আলিপুরদুয়ারজুড়ে উন্নয়ন চলছে। চা বাগানগুলি খুলছে। প্রচুর জলের প্রকল্প, সেতু, রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে।  বিজেপির রাজ্য সম্পাদক মনোজ টিগ্গা বলেন,  ভোটের আগে যাকে তাকে ধরে এনে বাগান খোলাচ্ছে রাজ্য সরকার। চা বাগানের শ্রমিকরা সমস্যায় জর্জরিত। পর্যটনের বিকাশ হয়নি। সীমান্ত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। জেলাবাসী পেটের দায়ে বছরের পর বছর ভিনরাজ্যে কিংবা অন্য দেশে পড়ে রয়েছেন। জয়েন্ট ফোরামের নেতা তথা আরএসপি-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গোপাল প্রধান বলেন, পৃথক জেলা হলেও উন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে সবই বাম জমানায়। পর্যটনের বিকাশ হয়নি। কাজের সুযোগ কমছে।

বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হলেও ভুটান সীমান্তঘেঁষা লঙ্কাপাড়া, বান্দাপানির মতো চা বাগানগুলির বাসিন্দারা আজও পানীয় জলের জন্য ভরসা করেন ভুটানের ওপর। বান্দাপানির বাসিন্দাদের চার-পাঁচ কিমি পথ পেরিয়ে ভুটানের ধুমচিঝোরায় যেতে হয় স্নান করতে, কাপড় কাচতে। আলিপুরদুয়ার জেলা সদর থেকে কোচবিহার, জোড়াই কিংবা ফালাকাটা যাওযার বেশ কয়েকটি সরকারি  বাস মিললেও মাদারিহাট, বীরপাড়া রুটে মেলে গোটা দুয়ে সরকারি বাস। টোটোপাড়া, খগেনহাট সহ বিভিন্ন রুটে বহু বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি বাস পরিসেবা। টোটোপাড়ার মতো দুর্গম জায়গা সহ চা বাগানে পরিবহণ বলতে আজও ভরসা ছোটো গাড়ি।

The post কর্মসংস্থানই মূল সমস্যা আলিপুরদুয়ারে appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2uTMAvr

April 08, 2019 at 01:04PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top