পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি, ১৩ এপ্রিলঃ প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও জলপাইগুড়ির শহরকে কেন্দ্র করে প্রস্তাবিত হেরিটেজ মানচিত্র তৈরি হল না। জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন পুরোনো স্থাপত্য ও সরকারি, বেসরকারি সম্পত্তিকে তালিকাভুক্ত করে হেরিটেজ স্বীকৃতির প্রক্রিয়া আজও উদ্যোগস্তরেই রয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন জলপাইগুড়ি পুরসভাকে হেরিটেজ মানচিত্র তৈরির জন্য নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ। আর এই মানচিত্র তৈরি না হওয়াকেই এবার লোকসভা ভোটের ইশ্যু করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, মানচিত্র তৈরির প্রক্রিয়া সঠিকভাবেই এগোচ্ছে।
জলপাইগুড়ি শহরে বেশকিছু প্রাচীন নির্মাণ রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি বেসরকারি মালিকানাধীন। কয়েকটি ভবন আবার সরকারি-বেসরকারি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলিকেই হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে। এরপরেই রাজ্য হেরিটেজ কমিশন বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করে। ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে হেরিটেজ কমিশনের প্রতিনিধিরা জেলা এবং পুর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই পুর কর্তৃপক্ষকে শহরের কী কী হেরিটেজ তকমা পেতে পারে, তার মানচিত্র তৈরির কথা বলা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই খবর দিয়েছিলেন কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস। বৈঠকের আগে কমিশনের দুই প্রতিনিধি জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, হেরিটেজ স্বীকৃতি পেতে হলে সেই সম্পত্তির বযস কম করে ৭৫ বছর হতে হবে। পাশাপাশি সেই সম্পত্তির সংস্কার বা মূল কাঠামোর পরিবর্তন করা যাবে না। এই নিয়ম অনুযায়ী, জলপাইগুড়ি শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত করলা নদীও হেরিটেজ আখ্যা পেতে পারে। এছাড়া শহরে থাকা জেলাশাসক, বনাধিকারিক, পুলিশ সুপার, স্পেশাল আইজি, বিভাগীয় কমিশনার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো, ফ্যাক্টরি ইনস্পেকটরের অফিস, ইউরোপিয়ান ক্লাব, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস অর্থাৎ কোচবিহার মহারাজার নাচঘর বা আয়রন হাউজের মতো প্রাচীন ভবন, পুরসভার জলপ্রকল্পের মতো অনেক কিছুই হেরিটেজ তকমা পেতে পারে।
হেরিটেজ শহর ঘোষণার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য পুর প্রশাসনের নেতৃত্বে স্থানীয় স্তরে হিস্টোরিকাল এবং হেরিটেজ সোসাইটি গঠন করতে হবে। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ জলপাইগুড়িতে এমন কমিটি গড়েছিল কিনা, তা জানা নেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন প্রধান তথা কমিশন নিযুক্ত উত্তরবঙ্গের হেরিটেজ কমিটির প্রাক্তন কোঅর্ডিনেটর ডঃ আনন্দগোপাল ঘোষ। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই কমিটি ২০১৩ সালে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির কোন জায়গা, সম্পত্তি হেরিটেজের তকমা পেতে পারে, এমন ৪০০টির মতো নামের তালিকা কমিশনে জমা করেছিল। তারপরে কেউ উদ্যোগী হয়েছিল কিনা বলতে পারব না। আর জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ কমিশনের নির্দেশ মেনে কোনো কমিটি গড়েছে কিনা জানা নেই।
ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। জলপাইগুড়ি লোকসভার বিজেপি প্রার্থী ডাঃ জযন্ত রায় বলেন, রাজ্য হেরিটেজের স্বীকৃতির জন্য লিখিত প্রস্তাব দিলে তবেই কেন্দ্র উদ্যোগী হবে। রাজ্য এমন কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি। আমরা ভালো ফলাফল করলে এই দাবিপূরণে সচেষ্ট হব। একই সুরে সিপিএম প্রার্থী ভগীরথ রায় এবং কংগ্রেস প্রার্থী মণিকুমার দার্নাল জানিয়েছেন, তৃণমূল কেবলমাত্র মুখেই উন্নয়নের কথা বলছে। এইভাবে কত গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফাইল যে চাপা পড়ে আছে কে জানে। প্রচারে হেরিটেজ তকমা নিয়ে রাজ্যের ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থী বিজয়চন্দ্র বর্মন বলেন, কোচবিহার শহরকে হেরিটেজ শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেভাবেই জলপাইগুড়ির দাবি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। নির্বাচন শেষ হলেই এই বিষয়ে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। এদিকে, জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল সন্দীপ মাহাতো জানান, এই বিষয়ে যা বলার পুরপ্রধান বলবেন। অন্যদিকে, বিরোধীদের প্রচার প্রসঙ্গে পুরপ্রধান মোহন বসু বলেন, বামেরা নিজেদের ৩৪ বছরে জেলার হেরিটেজ রক্ষা নিয়ে কিছুই করেনি। আমরা বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির গেট ছাড়াও কিছু সম্পত্তি হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ পেয়েছি। ম্যাপ তৈরি না হওয়া নিয়ে তাঁর সাফাই, আমাকে চেয়ারম্যান করেই হেরিটেজ সম্পত্তির তালিকা ও ম্যাপ তৈরির জন্য হেরিটেজ কমিশন কমিটি গঠন করেছে। তবে মাঝে পঞ্চায়েত নির্বাচন, বর্ষা, পুজো ছিল। এবার লোকসভা নির্বাচন শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠকে বসব।
The post দেড় বছরেও তৈরি হয়নি হেরিটেজ ম্যাপ appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2Zidk6S
April 13, 2019 at 02:18PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন