টরন্টো, ২৩ এপ্রিল- বাঙালিকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি রেখে অন্য কোনো গান কি আর বেছে নেয়া যায়? বরাবরের মতো এ গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়েই টরেন্টোতে বসবাসরত ছায়ানটের প্রাক্তন সদস্যরা সমাপ্তি ঘোষণা করলেন বর্ষবরণ ১৪২৬ উদযাপনের। বাংলাদেশী অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ-ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ইটোবিকোর মাইকেল পাওয়ার সেইন্ট জোসেফ হাই স্কুলের মিলনায়তনভর্তি প্রবাসীরাও দাঁড়িয়ে গলা মিলিয়েছেন একসাথে। হাজার হাজার মাইল দূরে, প্রবাসে থেকেও দেশপ্রেমের প্রতীকী প্রকাশ ঘটে থাকে হয়তো এভাবেই! সাধারণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করতে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন অব্যাহত রাখতে একদল সমাজ সচেতন অগ্রণী মানুষের উদ্যোগে ১৯৬১ সালে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ছায়ানট, সময়ের সাথে সাথে সংগঠনের প্রাক্তন সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লেও সে ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হতে দেননি। সে ধারাবহিকতার অংশ হিসেবে তাঁদের উত্তরসূরিদের অনেকেই বিভিন্ন দেশে সে চেতনার মশাল বহন করে চলেছেন। আর এরকম কিছু মানুষেরই সমাবেশ ঘটেছে ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এলামনাই এসোসিয়েশন, টরেন্টো-তে। সংগঠনের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল আনাম টরেন্টোতে এ উদযাপন সম্পর্কে বর্ষবরণ ১৪২৬ : চলো দুর্গমদূর পথযাত্রী প্রবন্ধে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন,বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ যেমন বাঙালির চিরকালীন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে, তেমনি বিদ্যায়তন-প্রাক্তনীদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটিও টরেন্টো প্রবাসী বাঙালিদের কাছে অনুরূপ স্বীকৃতি আদায় করেছে। তিনি বলেন, উদ্দীপনার গান বরাবরই ছায়ানট বর্ষবরণে মুখরিত হয়ে থাকে। বাঙলা সংস্কৃতি বিশেষ করে রবীন্দ্র সংগীত চর্চার বিরুদ্ধে যে অশুভ শক্তির কালো ছায়া নেমে এসেছিলো সেদিন, তারই বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সংগ্রামের অচলায়তন প্রতীক হয়ে আত্মপ্রকাশ হয়েছিলো বাঙ্গালী জাতির এই কিংবদন্তিসম প্রতিষ্ঠানটির। বর্ষবরণ ১৪২৬ উদযাপন অনুষ্ঠান দুই পর্বে বিভক্ত ছিল। শনিবার (এপ্রিল ২০) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়া প্রথম পর্বে ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, শ্যামা সংগীত ও রজনীকান্ত সেনের গানের একক ও সমবেত পরিবেশনা। তবে দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুল গীতির সাথে লালনগীতি ও অতুল প্রসাদের গানও শ্রোতারা উপভোগ করেছেন। রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে সারা বিল্লাহর লালনগীতি সহজ মানুষ শেষ হবার সাথে সাথে করতালির মাধ্যমে শ্রোতাদের অভিনন্দনে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে। পরে নজরুলের দুর্গম গিরি কান্তার মরু ছাড়াও জাগরণের গান নোঙর তোলো তোলোর সমবেত পরিবেশনা ভালো লেগেছে। এরপর তবলার সাথে রাশেদা মুনীরের আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসের একক পরিবেশনাও তাঁরা উপভোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনায় ছিলেন উম্মে নওরোজ ইত্তেলা এবং সাইয়েদ মাহবুব রেজা মিথুন। তবলায় রনি পালমার ছাড়াও শব্দ নিয়ন্ত্রণে কুশল খান্না এবং কী বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেছেন মামুন কায়সার। ছায়ানটের নামের সাথে মানানসই মঞ্চসজ্জার কাজটি করেছেন মুনিক আনাম। বর্ষবরণ ১৪২৬ উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ছায়ানটের বর্ষবরণ উদযাপন সম্পর্কে বলতে গিয়ে আয়োজকদের অন্যতম এম এ বারী মঞ্জু বলেন,অনেকেই এ দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। এখানেই আমাদের এ আয়োজনের সার্থকতা। টরেন্টোতে সংগঠনের প্রাক্তন সদস্যদের আয়োজনে বাংলা সংস্কৃতির সার্বজনীন এ উৎসবের এটা ছিল ১৯ তম পরিবেশনা। ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন এলামনাই এসোসিয়েশন, টরেন্টো আগামী বছরের ১৭ এপ্রিল শনিবার বর্ষবরণ ১৪২৬ পালন করবে বলে জানানো হয় আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2XKGeuT
April 24, 2019 at 12:43PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন