বয়স বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে জঙ্গলের জন্য প্রেমটাও। ইদানীং সেই টানের এতটাই বাড়বাড়ন্ত যে মাঝেমধ্যে মনে হয়, সিনেমা টিনেমা সব ছেড়েছুড়ে স্রেফ ধুতি আর ফতুয়া চাপিয়ে জঙ্গলে চলে যাই। কোনো দায়দায়িত্বের বালাই টালাই নেই, স্রেফ প্রকৃতির বুকে আদি অকৃত্রিমতার সান্নিধ্য উপভোগ। তবে যাব বললেই কি আর যাওয়া য়ায়! পিছুটান না থাক, ভালো কিছু দেখে যাওয়ার আশটুকু তো থেকেই য়ায়। এই যেমন, আরও একটা লোকসভা ভোট। বয়সটা তো আমার আর কম হল না। এই সুবাদে বেশ কতগুলো ভোটও তো দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও কি আমাদের সমস্ত সমস্যা মিটেছে? সবাই খুব ভালো না থাকুক, আমরা কি দেশের সবার জন্য অন্তত পরিস্রুত পানীয় জল, খাবার, স্বাস্থ্য, আর সুষ্ঠু নিকাশির বন্দোবস্তটুকু করতে পেরেছি? মনে তো হয় না। হলে আমাদের দেশের মানুষগুলি এতটা অসুখী হত না। সারা দুনিয়ায় কোন দেশ কতটা সুখী তা নিয়ে একটা সমীক্ষা চালানো হয়। হালেই তো এই সমীক্ষার এ বছরের রিপোর্ট বেরিয়েছে। ফিনল্যান্ড সবার আগে। আর আমরা? গত পাঁচ বছর ধরে সমানেই পিছিয়ে চলেছি। ২০১৫ সালে আমরা ১১৭তম স্থানে ছিলাম। এবছর আমরা ১৪০তম স্থানে। তার মানে আমাদের দেশে দুঃখের বোঝাটা বাড়ছেই। তবে এটাই তো স্বাভাবিক। যে দেশের ব্যবস্থা সমানে গরিবদের আরও গরিব আর বড়োলোকদের আরও বড়োলোক করে চলে সেখানে এ আর আশ্চর্য কী! এবছরও ভোট দেব। আর স্বপ্ন দেখব ওয়ার্ল্ডস হ্যাপিয়েস্ট কান্ট্রিস তালিকাটার শীর্ষে থাকা ফিনল্যান্ডকে হারিয়ে আমরাই সেখানে ঝলমল করছি। চাই, এজন্য নতুন সরকার যাবতীয় ভমিকাই নেবে।
আমাদের দুনিয়াটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। আমাদের দুনিয়া মানে বিনোদনের জগত্টা। একটা সেন্সর বোর্ড আছে বটে। দেশের আর দশের জন্য কী খারাপ তা খতিয়ে দেখে ওরা অবশ্য সেইমতো ব্যবস্থা নেয়। এটুকু দরকার। আবার এটাও ঠিক, হালে যে বাংলা সিনেমাটার রিলিজ আটকানো নিয়ে এত হইচই হল তার কোনো মানেই ছিল না। খামোকা এই হুলুস্থুল বাধিয়ে লোকের মনে সিনেমাটা নিয়ে একরাশ কৌতূহল তৈরি করে দেওয়া হল। তাই আমার মনে হয়, সেন্সর বোর্ডে দক্ষদেরই বসানো হোক। তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে আমি একটিও প্রশ্ন তুলতে চাই না। কিন্তু চাই, তাঁরা যেন স্রেফ সরকারের হাতের পুতুল হয়ে কাজ না করেন। এই যে এবারের ভোটের কথাই ধরুন। ভোটের আগে আগে দুটো সিনেমা রিলিজ করে দেওয়া হল। দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার আর পিএম নরেন্দ্র মোদি। দুই সিনেমার বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর সবই ভালো আর কংগ্রেসের ক্ষেত্রে সবই খারাপ। রাজনীতির দুনিয়ায় এমনটা আবার হয় নাকি! এজন্যই একটা স্মার্ট সেন্সর বোর্ড চাই।
ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মের আজকাল রমরমা। পাল্লা দিয়ে হিংসা, অশ্লীলতারও। চাই নতুন সরকার এই ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মের উপরও সেন্সরশিপ চালু করুক। এই ডিজিট্যাল দুনিয়ায় লাগামছাড়া হিংসা আর যৌনতার বাড়াবাড়িতে কত বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। সিলভেস্টার স্ট্যালোনের র্যাম্বোর কথা মনে আছে? স্ট্যালোনকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, র্যাম্বো সিরিজের সিনেমাগুলোয় অ্যাত্ত হিংসা দেখিয়ে আপনি সবার কাছে একটা ভুল বার্তা দিচ্ছেন না? উত্তরে স্ট্যালোন কী বলেছিলেন জানেন? টিভিতে টম অ্যান্ড জেরিতে য়ে হিংস্রতা দেখানো হয় সেটা কি কম? তাই আমাদের সবার স্বার্থেই স্মার্টফোনে ধরা দেওয়া ডিজিট্যাল দুনিয়াটার উপরও সেন্সরশিপ প্রয়োজন।
The post ডিজিট্যাল দুনিয়ার জন্য সেন্সর বোর্ড চাইঃ সব্যসাচী চক্রবর্তী appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2VIu2Ka
April 13, 2019 at 01:37PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন