হাতির হানা থেকে মুক্তি চায় গিরামণি সংসদ 

মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি, ১৫ এপ্রিলঃ পাহাড়গুমিয়া চা বাগানের গিরামণি সংসদ। এলাকাটি নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। আদিবাসী অধ্যুষিত এই চা বাগান এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থাই নেই। গ্রামে নেই পথবাতিও। তার উপর রয়েছে হাতির আক্রমণের মতো সমস্যা। পাশের জঙ্গল থেকে মাঝে মাঝেই হাতি এসে গ্রামবাসীদের ঘরবাড়ি ভাঙে। কিন্তু তা নিয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যাথা নেই বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। শুধু তা-ই নয়, গোটা গ্রামে কেউ ডিজিট্যাল র‌্যাশনকার্ড পাননি। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ১০০ দিনের কাজের টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে এখানে। পানীয় জলের জন্য নিজেদের তৈরি কুয়োর উপরেই নির্ভর করতে হয় গোটা গ্রামকে। এবারের নির্বাচনে এগুলোকেই প্রধান ইশ্যু করেছেন এখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবারই তাঁরা ভোট দেন, কিন্তু তাঁদের এই সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রশাসনের কোনো স্তর থেকেই কিছু করা হয় না।    

বাস লাইন, বুধু লাইন, ম্যানগারা, গিরামণি- এই চারটি এলাকা নিয়ে পাহাড়গুমিয়া চা বাগানের এই ছোটো গ্রামটি গঠিত। বুধু লাইন ও গিরামণি লাইনের বাসিন্দা সুপ্রীতি টোপ্পো বলেন, এই এলাকার প্রধান সমস্যা পানীয় জলের অভাব আর হাতির আক্রমণ। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই সমস্যায় ভুগছি। আরেক বাসিন্দা রাশিদ আনসারি বলেন, পাশেই দলকা জঙ্গল। সেখান থেকে মাঝেমধ্যেই হাতি এসে এলাকায় ঢুকে পড়ে। আগে প্রশাসনের তরফে গ্রামে হাতি তাড়ানোর জন্য লাইট দেওয়া হত। এখন তা-ও আর দেওয়া হয় না।

প্রেমা কুজুরের কথায়, মাঝে মাঝেই হাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও গ্রাম পঞ্চায়েত রাস্তায় আলোর কোনো ব্যবস্থাই করেনি। হাতি এসে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে চলে যায়। আমরা কিছুই করতে পারি না। বাস লাইনের বাসিন্দা সুমিত্রা এক্কা বলেন, গ্রামের রাস্তাগুলি আমরা আমাদের জন্ম থেকে আজ অবধি পাকা দেখিনি। বর্ষাকালে গোটা রাস্তা কাদায় ভরে যায়। যাতায়াতে বহু সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীতা বেগ, বিজয়কুমার খালকোদের মুখেও একই কথা। আরেক বাসিন্দা মহেশ শবর বলেন, প্রতিবারই আমরা ভোট দিই। কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান কেউ করছে না।

মুকুল টোপ্পোদের মতো বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গোটা গ্রামে ডিজিটাল র‌্যাশনকার্ড নেই। নিরমন মিনজ বলেন, আমাদের কারোর জমির পাট্টা নেই। এজন্য আমরা সরকারি ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায় না ১০০ দিনের কাজের টাকা। স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা পিংকি শবর বলেন, পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের মানুষকে বাধ্য হয়ে কুয়োর জল খেতে হয়। এর ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে জলবাহিত বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটছে।

যদিও এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নমিতা টোপ্পো বলেন, গ্রামের সমস্যাগুলি আমরা জানি। এর মধ্যে যেগুলি আমাদের পক্ষে করা সম্ভব সেগুলি করা হচ্ছে। হাতিঘিসা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জ্যৈষ্ঠমোহন রায় বলেন, গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা করার বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর নির্ভর করে। তবে চা বাগানের বেশিরভাগ মানুষেরই ডিজিট্যাল র‌্যাশনকার্ড নেই। এছাড়া পানীয় জলের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, শীঘ্রই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের তরফে ওখানে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে।

The post হাতির হানা থেকে মুক্তি চায় গিরামণি সংসদ  appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2GhMDX2

April 15, 2019 at 03:01PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top