আমি ছোটবেলায় মুম্বইতে মানুষ হয়েছি। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখেছি। বাবার দৌলতে সিনেমার শুটিং কাছ থেকে দেখেছি, আর মনে মনে একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি যে, আমিও একদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াব। রাজনীতি আমাকে কোনোদিনই আকর্ষণ করেনি। এত দল, এত নেতা, এত প্রতিশ্রুতি, এত ভাষণ, কিছুই বুঝতাম বলে মনে হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযকে কাছ থেকে দেখেছি। ওঁর মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা, কিছু করে দেখানোর চেষ্টা, সরল জীবনযাপন আমাকে আকর্ষণ করত। এই মাত্র, তার থেকে বেশি কিছু নয়। হঠাত্ করেই ওঁর নির্দেশে রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। পাঁচটা বছর সাংসদ থাকার পর এখনও বোঝার চেষ্টা করছি, ঠিক কীভাবে রাজনীতি করা উচিত, কীভাবে মানুষের সঙ্গে থাকা উচিত, কীভাবে দৈনন্দিন জীবনের সুযোগসুবিধা তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওযা উচিত।
প্রত্যেকটা দল তাদের ম্যানিফেস্টোতে মানুষের কথা বলে, অথচ একে অন্যের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে তা আমার রুচিবিরুদ্ধ। যেভাবে কথা বলে তাও আমার ঠিক বলে মনে হয় না। তবুও রাজনীতিতে অন্য রকমের একটা ধারা নিয়ে আসার চেষ্টা আমার প্রথম দিন থেকেই আছে। এবারের নির্বাচনে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক আমাকে ভাবাচ্ছে। ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৯-এ এসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে শিক্ষাতে। স্বাস্থ্য-বাসস্থান-রোজগার ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকটা কাজ হয়েছে, আবার অনেকটা হয়নি। তার জন্য প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল লড়াই করুক, তাদের কর্মসূচি মানুষকে জানাক। অর্থাৎ নির্বাচনি ইশ্যু হোক শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-রোজগার-উন্নয়ন। কিন্তু হঠাত্ করে দেখছি ইশ্যু হযে দাঁড়াচ্ছে রামমন্দির, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মহাকাশে অস্ত্র পরীক্ষা, কে কী খাচ্ছে এসব। আমার মতে এগুলোর কোনোটাই নির্বাচনি ইশ্যু হতে পারে না এবং এখানেই সবচেয়ে বড়ো বিপদ। মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকা, ভালোভাবে বেঁচে থাকার বিষয় থেকে বেরিযে নির্বাচন ক্রমশ ধর্ম, জাত এবং এক ধরনের মেকি জাতীযতাবাদের খপ্পরে গিয়ে পড়ছে।
আমি এর বিরোধী। নির্বাচনে দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন, গরিব মানুষদের রোটি-কাপড়া-মকান এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা-বাসস্থান, এসব নিয়ে ডিবেট করতে রাজি আছি। একদল একভাবে চাইছে, অন্য দল অন্যভাবে চাইছে -এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু ইশ্যুটাকে ঘুরিয়ে এমন একটা অস্তিত্বহীন ইশ্যুর মধ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেটা বিপজ্জনক। গোটা ভারতে ঠিক এই কাজটাই চলছে, যেটা মানুষকে বোঝাতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সব থেকে গরিব মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের কর্মসূচি আশা করেছিলাম। সারাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন বলে আশা করেছিলাম। তা না করে তিনি যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, মহাকাশে অস্ত্র পরীক্ষা বা রামমন্দিরের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন তখন বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, উনি আসলে ইশ্যুগুলো থেকে আমাদের সরিযে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি আশা করব, ভারতের ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এটা বুঝবেন এবং সাম্প্রদায়িক ও মেকি জাতীযতাবাদের ঝড় তোলা একটা দলকে প্রত্যাখ্যান করবেন। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক। মানুষ যাকে বেছে নেবেন, যে দলকে বেছে নেবেন তারা আগামী পাঁচ বছর ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নের দিকে নজর দেবে এই আশা রাখি।
The post আড়াল করা হচ্ছে গরিবের ইশ্যু, বলছেন দেব appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2uObbSl
April 05, 2019 at 01:26PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন