উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে পরিসেবা শিকেয়, অসহায় রোগীরা

রণজিত্ ঘোষ, শিলিগুড়িঃ যত্রতত্র পড়ে রয়েছে করিডরের ভাঙা অংশ, রোগীদের স্ট্রেচার ঠেলার জন্য নেই স্বাস্থ্যকর্মী। এই অবস্থায় ভগ্নপ্রায় করিডর দিয়ে নিজেই এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে য়াচ্ছেন রোগী। এক হাতে স্যালাইন, অন্য হাতে নাক থেকে বেরিয়ে আসা নলের সঙ্গে ঝোলানো প্লাস্টিকের ব্যাগ। স্যালাইনের হাত নীচে করে রাখায় হাতে স্যালাইন যাওয়ার বদলে রক্ত বেরিয়ে আসছে। কোনো রোগীকে আবার বাড়ির লোকই হুইলচেয়ার ঠেলে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাচ্ছেন।

চিকিত্সক, চিকিত্সাকর্মীদের এতটাই অভাব হয়ে গিয়েছে য়ে, কার্যত অসহায় অবস্থায় রোগীরাই নিজের জীবন বাঁচাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা নয়। হাসপাতালে রোগী ভরতি হওয়ার পর থেকে তাঁর চিকিত্সার পুরো দায়িত্ব কর্তপক্ষের। যদিও মেডিকেলে সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করতে কাউকেই দেখা য়ায় না। মেডিকেল সুপার ডাঃ কৌশিক সমাজদার অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মেডিকেলের করিডর সহ বিভিন্ন ভবন দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পড়ে থাকার পরে কয়েক মাস আগে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। পুরো করিডরের ছাদ ভেঙে ফেলে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। অথচ ওই করিডর দিয়ে প্রতিদিন রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, চিকিত্সক, চিকিত্সাকর্মী মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন ওয়ার্ডে য়াতায়াত করছেন। করিডর ভাঙার পরে বড়ো বড়ো লোহা এবং সিমেন্ট-বালির চাঁই করিডরের সঙ্গেই ঝুলে রয়েছে। সেখান দিয়ে চলাচল করছেন মানুষজন। যে কোনো সময় সেগুলি ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই করিডর দিয়ে জরুরি বিভাগের দিক থেকে মেল মেডিকেল ওয়ার্ডে যাচ্ছিলেন বিহারের বাসিন্দা বিশু রাম। তাঁর হাতে স্যালাইন চলছে। নাকে একটি নল ঢোকানো। সেই নলের সঙ্গে লাগানো প্লাস্টিকের থলি তাঁর এক হাতে। অন্য হাতে স্যালাইনের বোতল। স্যালাইনের সিরিঞ্জ ফোটানো হাত নীচের দিকে রাখায় স্যালাইন শরীরে যাওয়ার বদলে শরীর থেকে রক্ত ঢুকছে স্যালাইনের পাইপে। কিন্তু এভাবে কেন একা একা ঘুরছেন- প্রশ্ন করতেই বিশু রাম বললেন, দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার পরে শনিবার রাতে মেডিকেলে ভরতি হয়েছিলাম। মেল ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে চিকিত্সার পরে এখন আমাকে মেল মেডিকেল বিভাগে রেফার করে দিল। কিন্তু আমাকে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। তাই একা একাই যাচ্ছি। কিন্তু এটা তো বিপজ্জনক। এভাবে একজন রোগীকে একা ছাড়া যায়? করিডর দিয়ে য়াওয়া একজন জুনিয়ার ডাক্তার বললেন, কিছু করার নেই। এখানে স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে। রোগীকে নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হয়।

এমনই অনেক রোগীকে এদিন হয় একা, নতুবা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সরকারি নিয়মে স্বাস্থ্যকর্মীদের এই কাজগুলি করার কথা। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, রোগীকে একা এভাবে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যেতে হচ্ছে, এমন ঘটনা দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো ব্যবস্থা নেব।

The post উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে পরিসেবা শিকেয়, অসহায় রোগীরা appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2GzuSUy

April 22, 2019 at 01:01PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top