আদিবাসীদের ২০০ একর জমি দখল করে চা বাগান

জ্যোতি সরকার, জলপাইগুড়িঃ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ওকরাবাড়ি, চিলডাঙ্গা, সাকাতি এবং ঝাপড়তলা এলাকার  শতাধিক আদিবাসী পরিবারের অবস্থা এখন নিজভূমে পরবাসীর মতোই। আদিবাসীদের প্রায় ২০০ একর জমি দখল করে বেআইনিভাবে ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে তোলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আদিবাসীরা জমির মালিক থেকে বাগান শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। আদিবাসী গ্রামগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল ও শৌচাগার কিছুই জোটে না। সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের সুফল থেকেও বঞ্চিত আদিবাসীরা। যোগাযোগ ব্যবস্থাও তথৈবচ। সুই নদীর ওপর সেতু না হওয়ায় চিলডাঙ্গা এলাকার আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা বর্ষার মরশুমে অধিকাংশ সময়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকেন। তাই লোকসভা নির্বাচনে সদর ব্লকের আদিবাসী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের কাছে অস্তিত্ব রক্ষার ইশ্যুই প্রাধান্য পাচ্ছে।

সাকাতি সংলগ্ন চিলডাঙ্গা গ্রামে ৩০টি আদিবাসী পরিবারের বাস। ঝুপড়ি ঘরে বর্ষায় ফুটো চাল দিয়ে জল পড়ে। শীতের মরশুমে ঘরে হুহু করে ঠান্ডা হাওয়া ঢোকে। সুই নদীর ধারেই চিলডাঙ্গা আদিবাসী গ্রাম। নিমাই মালপাহাড়ি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমাদের তিন একর জমি ছিল। এখন ঝুপড়ি ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। দাদা এবং দিদি কেউই আমাদের খোঁজ রাখেন না। জমি দখল হয়ে বেআইনিভাবে একরের পর একর চা বাগান হয়েছে। আমাদের বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের ঠকিয়ে জলের দরে জমি কিনে নেওয়া হয়েছে। সেই জমিতে চা বাগান লাভ করছে। আমাদের জমিতেই আমরা এখন দিনমজুরি করছি। এটাই ভাগ্যের পরিহাস। প্রতিদিন দিনমজুরি করে ১০০ টাকা রোজগার হয়। নিমাইয়ে বোন রেণুকার উত্তরপ্রদেশে বিয়ে হয়েছিল। তিন সন্তানের মা রেণুকা এখন ভাইয়ে কাছে চলে এসেছেন। অতি কষ্টে তাঁদের দিন যাচ্ছে। একই অবস্থায় পড়েছেন বিনোদ মালপাহাড়ি, রতন মালপাহাড়ি, অঞ্জন মালপাহাড়িরা।

বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা সংলগ্ন জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ওকরাবাড়ি আদিবাসী গ্রাম। এই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রমেশরাম ভগত বলেন, ভোটের আগে আমাদের গ্রামে নেতারা আসেন। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়। আমরা শুনি জলপাইগুড়ি জেলাজুড়ে শৌচাগার নির্মাণ করার কর্মসূচির কথা। আদিবাসী হয়ে আমাদের গ্রামে শৌচাগার নির্মাণ হয়নি। জমি হাতছাড়া হওয়াতে মহা বিপাকে পড়েছি আমরা। দিনমজুরির খোঁজে শহরে য়েতে হয়। পাতকুযোর জল পান করছেন এলাকার আদিবাসী পরিবারের সদস্যরা। তাঁর স্ত্রী সোনম ভগত বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঁচ কিলোমিটার দূরে যেতে হয় পড়াশোনার জন্য। আদিবাসীদের পড়াশোনার বিষয়ে অনেক কর্মসূচির কথা বলা হয়। আমরা কি সেই কর্মসূচির সুফল পেতে পারি না?

বেআইনি চা বাগান প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, আদিবাসীদের জমিতে চা বাগান করলে চা বাগানের ব্যবহৃত জমির সমপরিমাণ জমি ওই আদিবাসী ব্যক্তিকে কিনে দিতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম ভেঙে যাঁরা চা বাগান করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুয়াযী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসম্পাদক প্রকাশ রায় বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের কার্যনির্বাহী সভাপতি স্বপন সরকার বলেন, আদিবাসীদের জমি কখনও হস্তান্তর করা উচিত নয়। জমি দখল করে চা বাগান করার য়ে অভিযোগ উঠেছে, তা গুরুতর। আদিবাসী গ্রামগুলিতে সমীক্ষা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা দরকার।

The post আদিবাসীদের ২০০ একর জমি দখল করে চা বাগান appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2WJqDem

April 04, 2019 at 01:15PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top