কলকাতা, ২৫ এপ্রিল-ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূল আর বিজেপির সরাসরি লড়াইয়ের চিত্র। এ লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্ত জনগণই যে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার বিষয়, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্ত মানুষ মমতার পাশে আছেন, নাকি তাদের একটি বড় অংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। পশ্চিমবঙ্গে কে, কার থেকে এগিয়ে, সেই দাবিতে একে অপরকে কুস্তির প্যাঁচে ফেলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না কোনো পক্ষই। রাজ্যে এখন পর্যন্ত যতগুলো আসনে ভোট হয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতৃত্ব উভয়ই বলছেন তারাই এগিয়ে রয়েছেন। রাজ্যের ৪২টি আসনের লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবে, তা জানা যাবে আগামী ২৩ মে। কিন্তু এর আগেই জোরালোভাবে উঠে আসছে কয়েকটি প্রশ্ন। ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা (মুখ্যমন্ত্রী আসনের ভোট) নির্বাচন থেকে শুরু করে পরপর যে কয়টি নির্বাচনই এ রাজ্যে হয়েছে, তার হিসাব করলে দেখা যাবে সব কটিতেই রাজ্যের মধ্যবিত্ত জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশে যখন বিজেপির হাওয়া, সেই সময়েও তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের রথ পশ্চিমবঙ্গে বাধাহীনভাবে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এই কথা মানতেই হবে যে, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল উত্থানের পরেও তৃণমূল কংগ্রেস এত বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়নি। ২০১৯ সালে এসে এই চ্যালেঞ্জের প্রধান কারণ রাজ্যে বিজেপি বেশ কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তবে এই কথাও মানতে হবে, এই রাজ্যে গেরুয়া বাহিনী আগের তুলনায় তাদের জমি শক্ত করলেও, এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কুর্সিচ্যুত করার মতো জায়গায় পৌঁছায়নি তারা। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের দুর্বল দিকগুলোই বিজেপির মূল শক্তি। আর এখানেই চলে আসে রাজ্যের মধ্যবিত্ত বাঙালির পছন্দ অপছন্দের হিসাব। এই পছন্দ-অপছন্দ হিসেব করতে গেলে রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে নিরপেক্ষভাবে নজর দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে সেখানে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। দীর্ঘ সাড়ে ৩৪ বছরের শাসনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরিবর্তনের। ক্ষমতার হাত বদল হলেও রাজ্যের রাজনীতির সংস্কৃতি তেমন একটা পাল্টায়নি। বামফ্রন্ট তথা তাদের প্রধান শরিক সিপিআই(এম) যে দলতন্ত্র কায়েম করেছিল, সেটা চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির। সেটাই ছিল ক্ষমতা পরিবর্তনের অনুঘটক। ক্ষমতা বদলালেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাবে, সেটা ধরে নেওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। একটি জাতির রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয় বহু বছর ধরে। সেটা খুব দ্রুত বদলায় না। এই ধারাবাহিকতা থেকেই পশ্চিমবঙ্গে পালা বদলের পরেও সিপিআই(এম)-এর দলতন্ত্রের মতোই কিন্তু কিছুটা আলগা দলতন্ত্রের সংস্করণ প্রতিষ্ঠা পায় মমতার দিনগুলোতে। সিপিআই(এম) যে সাড়ে ৩৪ বছরে সুদৃঢ় দলতন্ত্র কায়েম করেছিল, তৃণমূল কংগ্রেস সেদিকে যায়নি। কিন্তু সচেতন বা অসচেতনভাবে দলতন্ত্রের প্রবণতা বজায় আছে তৃণমূলের ভেতরে। অস্বীকার করার উপায় নেই, যেহেতু তৃণমূলের দলের রাশ বামেদের থেকে আলগা, তাই তাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে ক্ষমতা বিকাশের চেষ্টা শুরু থেকেই দলীয় অন্তর্কলহের সমস্যা সামনে চলে আসে। এতে সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের পুরনো দলতন্ত্রের সমস্যা আবারও কিছুটা কমজোরিভাবে হলেও ফিরে আসে। এই বিষয়টিকেই ভালোভাবে নেয়নি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্তরা। দেশ, কাল আর সমাজ নির্বিশেষে মধ্যবিত্ত মানুষ নির্ঝঞ্ঝাটে বেঁচে থাকার সাধারণ অধিকারটুকু আশা করে। সেই ক্ষেত্রে সমস্যা হলেই জমা হতে থাকে ক্ষোভ। তবে আজকের তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে সেই ক্ষোভ চূড়ান্ত না হলেও কিছুটা পুঞ্জিভূত হয়েছে সে কথা অনুভব করা যায়। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চ্যালেঞ্জ। যদি সামাজিক দিক থেকে বিচার করা যায়, তবে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্তের চাহিদা একদিকে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন, আর অন্যদিকে একটি নিশ্চিন্ত চাকরি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দিকে চাকরির চাহিদা মেটাতে না পারাই আরেকটি বড় অভিযোগ। কিছু চাকরি তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দলের ছেলেমেয়েদের বাড়তি সুযোগ দেওয়ার অভিযোগও তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে আছে। ফলে মধ্যবিত্ত সত্ত্বার অহমিকা আঘাত পেয়েছে। এটা তৃণমূলের ক্ষেত্রে নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে, এই সুযোগগুলোই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। অন্তত প্রচারের ক্ষেত্রে তারা এ বিষয়ে সফল। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে চাকরি ও ব্যবসায়িক দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিছুটা পিছিয়ে। বিগত কয়েক দশক ধরেই মধ্যবিত্ত বাঙালি এ নিয়ে কিছুটা লজ্জিত ও কুণ্ঠিত। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেরই আশা ছিল এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে। কিন্তু হয়নি। ফলে তৃণমূল সম্পর্কে একটা হতাশার জন্ম নিয়েছে মধ্যবিত্ত রাজ্যবাসীর মনে। এই হতাশাকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তারা বাঙালিকে জুড়তে চাইছে ভারতের বৃহত্তর সম্ভাবনার সঙ্গে। বিজেপি বারবার বলছে, মমতার আট বছরের রাজত্ব বামেদের সাড়ে ৩৪ বছরের রাজত্বেরই একটি প্রসারিত রূপ ছাড়া আর কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গের চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্র ও গৃহবধূদের মধ্যে কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে রাজ্যের এই মধ্যবিত্তরাই সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর ফের একবার মনেপ্রাণে একজন বাঙালিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেখতে চায়। সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কেউ নয়। সেখানে কাজ করছে একটা বাঙালি জাতীয়তাবোধ। তবে এখন দেখার যে বিজেপি মধ্যবিত্তদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ এবং এই সামাজিক অবস্থার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারে কিনা। যদি পারে তবে বুঝতে হবে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্ত বাঙালির তৃণমূল প্রীতি কমেছে। আর যদি বিজেপি ব্যার্থ হয়, তবে মানতেই হবে সব কিছুর উপরে রয়েছে মমতা বন্দোপাধায়ের ক্যারিশমা। যা বিগত বছরগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবিত্তের সম্বল হিসেবে কাজ করে আসছে। এইচ/২১:৫২/২৫ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2GGyyUy
April 26, 2019 at 03:54AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
মাওবাদী হানায় মৃত তথা নিখোঁজ ৪ জনের পরিবারকে নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
07 Oct 20200টিকলকাতা, ৭ অক্টোবর- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারের ঘোষণা মতোই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে মাও...আরও পড়ুন »
ডেমোক্রেসির বদলে বাংলায় মমতাক্রেসি চলছে
06 Oct 20200টিকলকাতা, ৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মণীশ খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
06 Oct 20200টিকলকাতা, ০৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ব...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বারাকপুর
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে খুনের ঘটনায় সোমবার সকাল থেক...আরও পড়ুন »
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লা নামে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.