আলিপুরদুয়ার, ১৩ এপ্রিলঃ গত পঞ্চায়েত ভোট এমন হয়নি। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের অধীন কমবেশি ২৫০ বড়ো চা বাগানে ভোটের ছবিটা এবার পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। নাগরাকাটা, মেটেলি থেকে কুমারগ্রাম সহ বিস্তীর্ণ ডুয়ার্সে এবার স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। আর সেটাই চিন্তার কারণ হযে দাঁড়িয়েছে সব দলের ভোট ম্যানেজারদের। ভোটের পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও অঙ্ক কষে কেউ নিশ্চিত বলতে পারছেন না, ফল কী হবে। সবচেয়ে বড়ো কথা, কেউ কারও বিরুদ্ধে একতরফা রিগিংয়ের অভিযোগ তোলেনি। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলিও কার্যত মেনে নিচ্ছে, ভোট হয়েছে শান্তিতেই।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বান্দাপানি, ঢেকলাপাড়া, মুজনাইয়ের মত বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা যেমন ভোট দিতে এসেছেন, তেমনই চালু বাগানের শ্রমিকরাও ভোট দিয়েছেন। বীরপাড়া, গ্যারগান্ডা, গোপালপুর, জয়বীরপাড়া, ধুমচিপাড়ার মতো সব বাগানের বুথে পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে যে ভোট পড়ার হার যথেষ্ট ভালো। কালচিনির ২৪টি চা বাগানের মধ্যে বন্ধ একমাত্র মধু চা বাগান। সেখানে সকালের দিকে ভিড় না থাকলেও বেলা বাড়তেই ভোটারদের লাইন পড়ে। ভার্নাবাড়ি, মালঙ্গি, সাতালি সব বাগানেই শ্রমিকরা ভোট দিতে যান দলে দলে। এসব দেখে চা বলয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের দুই নেতা একসুরে বলেছেন, ভোট করাতে হয়নি এবার। কিন্তু ফল কী হবে, তা জানি না।
তবে ফালাকাটার ভোট নিয়ে অঙ্কটা একটু অন্যরকম। গত লোকসভা ভোটে ফালাকাটা আর তুফানগঞ্জ থেকেই লিড পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের দশরথ তিরকি। এবার কোনো গোলমাল না হলেও বিজেপি-তৃণমূল এখানে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ায় এখান থেকে কে লিড পাবেন, তা বোঝা বেশ শক্ত। বিজেপির এক পোলিং এজেন্ট চন্দন দাস বলেন, কিছু জায়গায় অসুস্থ ও অক্ষম ভোটার দেখিয়ে ভোট করিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। তবুও ভোট বাড়বে বিজেপির। তৃণমূলের এক পোলিং এজেন্ট পরেশ বর্মন বলেন, বিরোধী এজেন্টরা বুথে আমাদের পাশেই ছিলেন। কোনো অশান্তি হয়নি। তাঁর দাবি, ভোট বেশি পাবে তৃণমূলই।
কুমারগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটের মতো হাল এবার হবে না, এমনই মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। ভোটের পর দুশিবিরেই নেতা-কর্মীরা রাত পর্যন্ত অঙ্ক কষেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে দুপক্ষের নেতারাই মুখে জেতার কথা বললেও কোথাও কারও মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল না। বরং সকলেই কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন। এলাকার ভোটারদের একাংশ বলছে, গত পঞ্চায়েত ভোটে ভোট দিতে পারেননি এখানকার চা বাগান বা গ্রামের বাসিন্দারা। তার প্রভাব এবারের ভোটে পড়বেই। ভোটারদের একাংশের এমন মনোভাবের পাশাপাশি তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের গা-ছাড়া মনোভাবও দলকে চিন্তায় রাখছে। তবে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুজুর বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন ও ঘরে ঘরে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়াকে মানুষ ভালোভাবে নিয়েছে। তাই দশরথ তিরকি ২০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকবেন এখান থেকে। বিজেপির জেলা সম্পাদক বিনোদ মিনজের পালটা দাবি, এখান থেকে ২৫ হাজার ভোটের লিড আসবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার ক্ষোভ এবার বোঝা যাবে।
২০১১ সাল থেকেই বিধানসভা ভোটে নাগরাকাটা মার্জিনাল আসন বলে সব দলের চিন্তার কারণ। সেবার তৃণমূল-কংগ্রেসের জোটপ্রার্থী জোশেফ মুন্ডা জয়ী হয়েছিলেন মাত্র ৭৬৩ ভোটে। ২০১৬-এর বিধানসভায় একা লড়ে তৃণমূলের শুক্রা মুন্ডা জয়ী হন সিপিএম-কংগ্রেসের জোটপ্রার্থী জোশেফের থেকে ৩,২২৮ ভোট বেশি পেয়ে। বিজেপির এবারের লোকসভার প্রার্থী জন বারলা সেবার গেরুয়া শিবিরের টিকিটেই লড়েছিলেন এই বিধানসভা থেকে। তৃণমূল ও বিজেপি দুই শিবিরের নেতারাই পুরোনো পরিসংখ্যান মানতে নারাজ। ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা দলের অভ্যন্তরে ভোট ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত অমরনাথ ঝা বলেন, দলের বুথভিত্তিক রিপোর্ট বলছে, নাগরাকাটা বিধানসভা থেকে আমরা অন্তত ২০ হাজার ভোটের লিড পাব। নাগরাকাটা ও মেটেলি ব্লকের পুরোটাই ও বানারহাট থানার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে গঠিত এই বিধানসভা থেকে আমাদের প্রাপ্ত ভোট থাকবে এক লক্ষের কাছাকাছি। কোনো জনজাতির কথা আলাদা করে বলতে চাই না। প্রত্যেকেই আমাদের ভোট দিয়েছেন।
তবে বিজেপি প্রার্থী জন বারলার দাবি, নাগরাকাটা এবার আমাকে ৪০ হাজারের লিড দিচ্ছেই। আদিবাসী ভোটের ৯০ শতাংশ, গোর্খা ভোটের ৮০ শতাংশ ও অন্যদের ৬০ শতাংশ ভোট পদ্মফুলেই পড়েছে। বিজেপির নাগরাকাটা-১ মণ্ডল কমিটির সভাপতি সন্তোষ হাতি বলেন, প্রায় প্রতি বুথের ইভিএমের ব্যালট ইউনিটে আমাদের প্রতীকের বোতাম এতবার টেপা হয়েছে যে স্থানটি কালো হযে গিয়েছিল। অন্যদের ক্ষেত্রে রংয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই শুনেছি। এর থেকেই বিজেপির হাওয়া বুঝে নিন।
The post চা শ্রমিকরা ভোট দেওয়ায় চিন্তা সব দলের appeared first on Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal.
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal http://bit.ly/2GldQJP
April 13, 2019 at 02:51PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন