আধুনিক বাংলাগানের বরেণ্য শিল্পী সুবীর নন্দীর মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী বাবার স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, বাবা জীবনের শেষ দিনগুলোতে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন। লড়াই করা শিখিয়েছেন। তিনি বলেন, শেষ ২৪টা দিন বাবা জীবনের জন্য মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে সেটা খুব কাছ থেকে দেখলাম। তার এই লড়াই যেন তিনি আমার জন্য শিক্ষা হিসেবে রেখে গেলেন। এখন মনে হয় আমি বাবাকে ছাড়াই একা চলতে পারবো। সব করতে পারবো। বুধবার (৮ মে) সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীর মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ফাল্গুনী নন্দী। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, আমাদের কেউ আর রইলো না। বিশেষ করে আমাকে সারাক্ষণ আগলে রাখতেন বাবা। কলিজার চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। আমার একটু কষ্ট হলে পাগল হয়ে যেতেন। আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। কিন্তু আমি যখন চাকরি করতে চাইলাম দিলেন না। বললেন আমার নাকি কষ্ট হবে। এই যে এখন আমাকে রেখে চলে গেলেন আমার এত খেয়াল কে করবে। ফাল্গুনী তার বাবার দেশপ্রেমের কথা তুলে ধরে বলেন, বাবা এই দেশের প্রেমে অন্ধ ছিলেন। তিনি গর্ববোধ করতেন বাংলাদেশি হিসেবে। একবার তার খুব অসুখ। আমেরিকায় উন্নত চিকিৎসার সব বন্দোবস্ত হলো। তিনি গেলেন। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই হাঁপিয়ে গেলেন। আমেরিকা ছেড়ে চলে এলেন। আমার কানে এখনো বাজছে তিনি বলেছিলেন- সালাম আমেরিকা। আমি নিজের দেশে ফিরে গেলাম। সেখানে চিকিৎসা নেব। মরলে নিজের মায়ের কোলেই মরবো। তাকে বোঝানো যায়নি। দেশের প্রতি ভালোবাসার তার জেদ আমৃত্যু ছিল। আমি বলতাম দেশ নিয়ে এত আবেগ কেন তোমার। তিনি বলতেন, এই দেশের মানুষ ভালোবাসতে জানে, সম্মান করতে জানে। তিনি বলতেন কথায় কথায়, দেখিস এই দেশ ও দেশের মানুষ তোর বাবাকে সম্মান করবে। এখানে গুণের কদর আছে। ফাল্গুনী বলেন, আজ বাবার মৃত্যুর পর রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মানুষের যে ভালোবাসা আমি দেখছি তাতে বারবার ভাবছি বাবার কথাই তো সত্যি হলো। আজীবন মন থেকে ভালোবাসলে সেটা ফেরত পাওয়া যায়। বাবা পাচ্ছেন। এই দেশ ও দেশের মানুষ তার অুসস্থ হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হৃদয় উজার করে ভালোবাসা দিচ্ছেন। বাবা সেই ভালোবাসায় শান্তিতে ঘুমান। মঙ্গলবার (৭ মে) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুবীর নন্দী। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম সুবীর নন্দীর গান ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে। এমএ/ ০৩:৪৪/ ০৮ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2YfgLtr
May 08, 2019 at 09:55PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top