কলকাতা, ২৬ মে- ভারতের আসামের এক চা বাগানে ২শ বছরের ইতিহাসে প্রথম একজন নারীকে বাগানের ম্যানেজারের পদে নিয়োগ দিয়েছে কলকাতার এপিজে সুরেন্দ্র গ্রুপ। চা বাগানে পাতা সংগ্রহের মতো কঠিন পরিশ্রমসহ বেশীরভাগ কাজ নারী শ্রমিকরা করলেও উচ্চপদে এতদিন কাজ করেছেন শুধু পুরুষরাই। এতদিনের এই ব্যবস্থা বদলে দিয়ে এবার বাগান ম্যানেজারের দায়িত্ব নিলেন ৪৩ বছরের মঞ্জু বড়ুয়া। সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে তার জীবন সংগ্রামের গল্প, সেই গল্পটাই সবার জন্য তুলে ধরা হল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৩৩ হেক্টরেরও বেশি জায়গা জুড়ে থাকা বাগানটির আনাচে কানাচে মোটরবাইক বা সাইকেল অথবা জিপে চেপে ঘুরে বেড়িয়ে কাজ করে চলেছেন তিনি। ম্যানেজারের পদে আসীন হওয়ার পরে মঞ্জু বড়ুয়া বলেছেন, চা বাগানের দায় দায়িত্ব সামলানো একজন নারীর জন্য কঠিন হলেও অসম্ভব কোন কাজ নয়। তিনি বলেন: এটা ঠিক যে এতদিন চা বাগানে পুরুষরাই ম্যানেজার হয়ে এসেছেন। পুরুষ হলে হয়ত কিছুটা সুবিধা থাকে। কাজটা কঠিন। তবে নারীরা পারবেন না মোটেই এমন নয়। কিন্তু শারীরিক আর মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে। আর চা বাগানের কাজের প্রতি থাকতে হবে ভালবাসাও। এগুলো থাকলে নারীদের কাছেও অসম্ভব নয় চা বাগানের ম্যানেজারের কাজ করা। আমার বাগানের এলাকা ৬৩৩ হেক্টর। গোটা বাগানের আনাচে কানাচে ঘুরতে হয়- কখনও সাইকেলে, কখনও জিপে, কখনও মোটরসাইকেলে। আমি সবগুলোই চালাতে পারি। একাই যাই বাগানের নানা দিকে। এত পরিশ্রম করতে হয় সারাদিন যে আলাদা ভাবে ফিট থাকার জন্য ব্যায়াম করতে হয় না। তবে মানসিকভাবে ফিট থাকতে ধ্যান করি নিয়মিত, বলেন মঞ্জু বড়ুয়া। শ্রমিক কর্মচারীরা এত বছর ধরে বাগানের প্রধান হিসাবে একজন পুরুষকেই দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রমিকের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আগে থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তাই নারী হিসাবে বড় কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে এখনও পড়তে হয়নি। মঞ্জু বড়ুয়া জানান: তিনি কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করেছিলেন শ্রমিক কল্যাণ অফিসার হওয়ার জন্য। কাজে যোগ দেওয়ার পরে এই বাগানেই গত ১৮ বছর ধরে কাজ করছেন। একেবারে তৃণমূল স্তরে শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে মিশেছেন। তিনি বলেন: দীর্ঘদিন ধরে বাগানে কাজ করছি একেবারে নিচু স্তর থেকে। তাই বাগানের নারী ও পুরুষ সব শ্রমিক কর্মচারীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল। এতদিন ধরে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চেষ্টা করেছি সব শ্রমিক কর্মচারীর প্রয়োজন মেটাতে। তাই যখন গোটা বাগান সামলানোর দায়িত্ব পেলাম, আমার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেনি কেউ। নিজেদের কাছের লোক বলেই মেনে নিয়েছে সবাই। আসামের শিবসাগর জেলার একটি ছোট এলাকা নাজিরার মেয়ে মঞ্জু হতে চেয়েছিলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের কর্মকর্তা। চা বাগানে কাজ করবেন, এরকম স্বপ্ন কম বয়সে দেখেননি। কিন্তু বাবার অবসরের পরে প্রয়োজন ছিল চাকরির। তখনই কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে চা বাগানের শ্রমিক কল্যাণ অফিসারের কাজে যোগ দেন। স্বামী আর ১১ বছরের কন্যাকে নিয়ে বাগানের বাংলোতেই থাকেন বড়ুয়া। ভোর থেকে বাগানের কাজ শুরু হয়ে যায়, একই সঙ্গে তার ছুটোছুটিও। তিনি বলেন: আগে থেকে প্ল্যান না করে রাখলে খুব অসুবিধা হয় দুটো দিক সামলাতে। বাগানের নিয়ম অনুযায়ী খুব ভোরে- ৬টা, সাড়ে ৬টার মধ্যে কাজ শুরু হয়। আমিও তখনই বেরিয়ে যাই। তবে সাড়ে সাতটায় ব্রেকফাস্টের একটা ছুটি হয়। সেই সময়ে বাংলোয় ফিরে এসে মেয়েকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দিয়ে আবার কাজে ফিরি। আবার দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে আসি মেয়েকে দেখাশোনা করতে। এভাবেই দুটো সামলাচ্ছি। সংস্থার চেয়ারম্যান করণ পল বলেছেন: মঞ্জু বড়ুয়া যোগ্যতা দেখিয়েই এই পদে উঠে এসেছেন। সবটা তারই কৃতিত্ব। কিন্তু চা বাগানের মতো একটা শিল্প, যেখানে পুরুষরাই মূলত মাথায় বসে এসেছেন এতকাল, সেখানে যদি মঞ্জু বড়ুয়ার সাফল্য দেখে, অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য নারীরাও এগিয়ে আসেন চা বাগানের গুরুদায়িত্ব সামলানোর মতো কাজে, সেটাই হবে আসল সাফল্য। এমএ/ ১০:২২/ ২৬ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2YMpvrj
May 26, 2019 at 06:14PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন