কলকাতা, ২৭ মে- ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে যতটা না আলোচনা হচ্ছে তার চেয়ে দেশজুড়ে অনেক বেশি শোরগোল পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূলের খারাপ ফল করা নিয়ে। কারণ গত লোকসভার ভোটের তুলনায় এবার মমতার আসন ৩৪ থেকে কমে ২২ হয়েছে। অপরদিকে, মোদির বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন। ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে যতটা না আলোচনা হচ্ছে তার চেয়ে দেশজুড়ে অনেক বেশি শোরগোল পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূলের খারাপ ফল করা নিয়ে। কারণ গত লোকসভার ভোটের তুলনায় এবার মমতার আসন ৩৪ থেকে কমে ২২ হয়েছে। অপরদিকে, মোদির বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন। মমতার টার্গেট ছিল পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে ৪২টিই। তিনি নিজেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ৩৮-৩৯টি সংসদীয় আসন জিততে পারবেন। কিন্তু রাজ্যের উত্তরাংশ, পাহাড়, ডুয়ার্স ও জঙ্গলমহল ছাড়াও রাঙ্গামাটির একটা বড় অংশে তৃণমূল সাফ হয়ে গেছে। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত বামপন্থীদের ভোটের সিংহভাগ বিজেপিতে চলে যাওয়া এবং মমতার বিরুদ্ধে সব বিরোধী ভোট একত্র হওয়াতেই এমন ফল হয়েছে। এক ধাক্কায় দুটি থেকে ১৮টি আসন পাওয়া বিজেপি অবশ্য তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলছে- ২০১৯ সালে হাফ, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে সাফ করে দেয়া হবে। ক্ষমতায় আসবে বিজেপি, মোদির সৈনিক মুখ্যমন্ত্রী হবেন। দলের খারাপ ফল নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাফাই দিতে গিয়ে মমতা বলেছেন, বামপন্থীরা নিজেদের নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। বিজেপি প্রচারে নেমে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। পুরোপুরি হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের ভোট ভাগাভাগি করে দিয়ে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে ১৮টি আসন পেয়েছে। এটা সাময়িক, আমরা ঘুরে দাঁড়াবই। তবে একথা ঠিক, যেখানে মুসলিম ভোটাররা আছেন সেখানেই মমতার দল ভালো ফল করেছে। বিজেপিকে রুখতে মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মোট ভোটের প্রায় ২৭ শতাংশ মুসলিম। দলের এমন খারাপ ফলের কারণগুলো জানার পাশাপাশি বিজেপির জেতা আসনে মানুষ কেন ভোট দেয়নি তা জানতে একটি রিসার্চ টিম তৈরি করেছেন মমতা। এ টিম পরাজিত প্রার্থীদের পাশাপাশি জয় ছিনিয়ে আনা সেখানকার বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও সাফল্যের কারণ জানতে গোপনে কথা বলবে। টিমের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মমতা ব্যবস্থা নেবেন। শনিবার রাতের দলীয় বৈঠকে মমতা নিজে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে সংগঠনের কাজে আরও বেশি সময় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলের কেউই রাজি হননি। মমতার দায়িত্ব দেয়া পোস্টমর্টেম টিমের ২৪ ঘণ্টার প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট রোববার সন্ধ্যায় হাতে এসেছে। তাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হাতে তৃণমূলের এমন শোচনীয় ফলের কারণ হিসেবে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে। কারণগুলোর মধ্যে স্বয়ং মমতার একাধিক জনসভায় অশোভনীয় মন্তব্য থেকে শুরু করে নেত্রীর ভাইপো সংসদ সদস্য অভিষেক ব্যানার্জির বাহিনীর দাপট, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতিও অন্যতম। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গে এমন সাফল্য বা উল্টোদিক থেকে মমতার দলের এমন শোচনীয় ফলের অন্যতম ১০টি কারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হল- ১. মোদি-অমিত শাহরা এক বছর ধরে মমতাকে হিন্দুবিরোধী বলে প্রচার করেছে। বলেছে, মমতা বাংলায় পুজো বন্ধ করে দিচ্ছে, বিসর্জনের শোভাযাত্রা বন্ধ করে মহররমের মিছিল করতে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে তেমন জোরালো পাল্টা প্রচার করতে পারেনি তৃণমূল। ২. গত ২ বছর পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচনে বিরোধীদের বিভিন্ন জেলায় ভোটে দাঁড়াতে দেয়নি তৃণমূল। বিশেষ করে মমতার ভাইপো অভিষেক বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের মতো যেসব জেলায় দায়িত্বে ছিল। সেখানে ভোট দিতে না পারা তৃণমূলের লোকরাই এবার ক্ষোভে বিজেপিকে ঢেলে সমর্থন করেছে। একই প্রতিফলন ঘটেছে উত্তরবঙ্গের চা-বলয় এবং ডুয়ার্সে। ৩. পঞ্চায়েত ও পুরসভায় যারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তারা গত ২ বছরে সরকারি প্রকল্পের টাকায় ব্যাপক হারে কাটমানি খাচ্ছেন। এমনকি গরিব মানুষকে বাড়ি তৈরির জন্য মমতা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়ার যে নীতি করেছেন তাতেই চালাকি করে আগেই ২৫ হাজার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত-পুরপ্রতিনিধিরা। মানুষ এর ক্ষোভ ভোটে দিয়েছেন। ৪. পঞ্চায়েত ও পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের পাশাপাশি মমতার বিধায়কদের অনেকেই সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও প্রমোটারের সঙ্গে দেখা করলেও ভোটারদের সময় দেননি। রেশনে দুই টাকা কিলো চাল ও আটা দেয়ার কথা থাকলেও অর্ধেকের বেশি কালোবাজারে পাচার করে দিয়েছে। আবার যেখানে দিচ্ছে সেখানে দামি বিস্কুট, সাবান নিতে বাধ্য করছে। না নিলে আটা-চাল দিচ্ছে না তৃণমূল পঞ্চায়েত কর্তারা। ৫. গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিরোধী ভোটের মধ্যে বামপন্থী ও বিজেপি ভোট আলাদা হওয়ায় ৩৯.৪ শতাংশ ভোট পেয়েও মমতা পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৪ জন সংসদ সদস্য পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ভোট বেড়ে ৪৩ শতাংশ হলেও ২৭ শতাংশ বামপন্থীদের ভোটের ২১ শতাংশ বিজেপিতে চলে গেছেন। মমতাবিরেধী ভোট, হিন্দু ভোট এক হওয়ায় তৃণমূলের ফল এতটা খারাপ হয়েছে। ৬. পঞ্চায়েত ও পুরসভার হাঁসমুরগি থেকে শুরু করে নানা সামগ্রী এবং চাকরি বণ্টনের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান, পঞ্চায়েত প্রধানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের পরিবারের সংসদ সদস্যদেরই বিলি করেছেন। ৭. প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেতে গেলে কমপক্ষে ১০ লাখ রুপি ঘুষ দিতে হয়েছে। শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রেও চার-পাঁচ লাখ রুপি নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। ৮. কলেজে ছাত্র-ছাত্রীকে অনার্স নিয়ে ভর্তি করতে গেলে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ১০ থেকে ৫০ হাজার নগদ রুপি পর্যন্ত চাঁদা নিচ্ছে। এমনকি কট্টর তৃণমূলের কর্মীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে মমতার ছাত্রফ্রন্ট। ৯. কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা এখও ৪৫ শতাংশ বাকি। বেতন কমিশন গঠন হলেও এখনও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেননি মমতা। ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা তাই মমতাকে শিক্ষা নিতে গেরুয়া শিবিরে ঢেলে ভোট দিলেন। ১০. মমতার ভাইপো সংসদ সদস্য অভিষেক নিজেকে যুবরাজ, নেত্রীর উত্তরসূরি হিসেবে হাজির করেছেন। পুরনো, পোড়খাওয়া অভিজ্ঞ দলীয় নেতাদের সরিয়ে দিয়ে নিজের পেটোয়া যুবনেতাদের বসিয়েছেন। এরা ভোট সামলাতে পারেনি। পুলিশ দিয়ে পুরনো নেতাদের টাইট করেছেন অভিষেক। আর/০৮:১৪/২২ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HHIKwN
May 27, 2019 at 04:44AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন