ডাবলিন, ১৮ মে- এর আগে মোট ছয়বার বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিটিতেই হেরেছে টাইগাররা। টেস্ট পরিবারের সদস্য হওয়ার পর গত ১৯ বছরে সেই অধরা সাফল্যটা কোনোভাবেই ধরা দিচ্ছিল না। অবশেষে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে সেই অধরা শিরোপাটায় প্রথমবারের মত হাঁত ছোঁয়ানোর সুযোগ পেলো টাইগাররা। এটি ছিল বাংলাদেশের সপ্তম ফাইনাল। এর আগে ছয়টি টুর্নামেন্ট বা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠলেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি একটি ফাইনালও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হারতে হয়েছে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে। শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালে: স্বাগতিকদের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ এই ত্রিদেশীয় সিরিজে আতিথেয়তা করেছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে। সেবারই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ৬ রানে লঙ্কানদের ৫ উইকেটের পতন ঘটিয়ে প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত করার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ম্যাচের শেষদিকে রুবেল হোসেনের বোলিংয়ে মুত্তিয়া মুরালিধরনের তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে জিতিয়ে দেয় মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন টাইগারদের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ফাইনাল-দুঃস্বপ্নের সেই শুরু। এশিয়া কাপ, ২০১২: এশিয়া কাপের সেই আসরে বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিকের ভূমিকায়। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় ফাইনালে। পাকিস্তানের ২৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল। তবে শেষ পর্যন্ত ২ রানের পরাজয় বরণ করে নিতে হয়। খুব কাছে গিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ হারানোর বেদনায় সেদিন অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন ক্রিকেটাররা, যা এখনো দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক ঘটনা। এশিয়া কাপ, ২০১৬: সেবারও এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল নিশ্চিত করে ফাইনাল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই ফাইনালে অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি। ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে ঘরের মাঠে হজম করতে হয় ৮ উইকেটের পরাজয়। ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১৮ : এ যেন ২০১২ ত্রিদেশীয় সিরিজের পুনরাবৃত্তি। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে শ্রীলঙ্কাকে একটি ম্যাচে হারিয়ে, লঙ্কানরা আবার একটি ম্যাচে হেরে বসে জিম্বাবুয়ের কাছে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২২১ রানে আটকে প্রথম ফাইনাল জয়ের মোক্ষম সুযোগও এসেছিল সামনে। কিন্তু ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গিয়ে আরও একবার ব্যর্থতার ঢেউয়ে পর্যবসিত হয় টাইগাররা। নিদাহাস ট্রফি, ২০১৮: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় টুর্নামেন্ট বা ত্রিদেশীয় সিরিজ এটি। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে দুইবার হারিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে ফাইনাল। দুটি ম্যাচই উত্তাপ ছড়িয়েছিল মাঠ থেকে শুরু করে গ্যালারি কিংবা অনলাইন জগৎ পর্যন্ত। ফাইনালে বাংলাদেশের সামনে ছিল ভারত, যে দলে ছিলেন না বিরাট কোহল ও মহেন্দ্র সিং ধোনির মত সিনিয়র খেলোয়াড়রা। রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই ফাইনালে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৬৭ রান তাড়া করতে নামে। সৌম্য সরকারের করা শেষ ওভারে প্রায় জিতেই গিয়েছিল টাইগাররা। তবে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে কাঙ্ক্ষিত ৫ রানের দেখা পেয়ে যান দীনেশ কার্তিক। ফলে বাংলাদেশ হারে ৪ উইকেটের ব্যবধানে।] এশিয়া কাপ, ২০১৮: একই বছর আরেক ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে আবারো ভারতকেই পায় বাংলাদেশ। মাত্র ২২২ রানের পূঁজি নিয়েও ওয়ানডে ফরম্যাটের ফাইনালে ভারতকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা ইনিংসের শেষ বলে ভারত তুলে নেয় ৩ উইকেটের জয়। অবশেষে ডাবলিনে মাশরাফি বাহিনী নিজেদের ফাইনালের ফাঁড়া কাটাতে পারলেন। সৌম্য-মোসাদ্দেক ঝড়ে সপ্তম ফাইনাল সত্যিকার অর্থেই লাকি সেভেন হয়ে উঠলো! দ্বি-পাক্ষিক অনেক সিরিজ জিতলেও এই প্রথম কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ। ডাবলিনের মালাহাইডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে গৌরবের শিখরে আরোহন করলো মাশরাফি অ্যান্ড কোং। এই জয়ের অন্যতম রূপকার টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার ও লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আজ ডাকওয়ার্থ আর লুইস তৈরি করেছে এক গাণিতিক হিসাব-নিকাশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ করলো ২৪ ওভরে ১৫২ রান। জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে ২১০ রান। ক্রিকেটের অদ্ভূত বৃষ্টি আইন। তবে ২৪ ওভারে ২১০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে সৌম্য সরকারের ঝড়, এরপর শেষ দিকে এসে ঝড় তুলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সৌম্যের ৪১ বলে ৬৬ ও মোসাদ্দেকের ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের দাপুটে ইনিংসে ৫ উইকেটে উইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ০/২৮, সাইফ ০/২৯, মুস্তাফিজ ০/৫০, মোসাদ্দেক ০/৯, মিরাজ ১/২২, সাব্বির ০/১২)। বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ২৪ ওভারে ২১০) ২২.৫ ওভারে ২১৩/৫ (তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬, সাব্বির ০, মুশফিক ৩৬, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২*; নার্স ০/৩৫, হোল্ডার ০/৩১, রোচ ০/৫৭, গ্যাব্রিয়েল ২/৩০, রিফার ২/২৩, অ্যালেন ১/৩৭)। ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। প্রথম বহুজাতিক সিরিজ জয় ছাড়াও এ ফাইনালে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড গড়লো টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ ওভারে ২১০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে ১০.৩ ওভারে সিঙ্গেল নেয়ার মধ্য দিয়ে দলীয় শত রান পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটা বাংলাদেশ দলের দ্রুততম শতরান করার রেকর্ড। দেশের ইতিহাসের প্রথম শিরোপা জয়ের ম্যাচে মাত্র ২৪ বলে ৫২ রানের টর্ণেডো ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা জিতেছেন ২৩ বছর বয়সী তরুণ মোসাদ্দেক। শুরুতে খানিক জড়তায় আটকে যাওয়া মোসাদ্দেক নিজের প্রথম ৯ বলে করেছিলেন মাত্র ৭ রান। সেখান থেকে পরের ১১ বলে করেন আরও ৪৩ রান। তিনি গড়েছেন একদিনের ক্রিকেটে দেশের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। এমএ/ ০৪:২২/ ১৮ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Q9ie1I
May 18, 2019 at 12:34AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন