জীবন প্রায়ই তিক্ততা নিয়ে হাজির হয়। নানামাত্রিক দুশ্চিন্তা আর হতাশা এসে ভর করে মনের উপর। বিতৃষ্ণা চলে আসে বেঁচে থাকায়। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সুন্দর এই বেঁচে থাকাকে উপভোগ করতে নিজের মানসিক শক্তিটাকে শান দিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু অনেকেই পারেন না। হেরে যান। বেছে নেন জীবন নাশের পথ। নিজেই হয়ে উঠেন নিজের হত্যাকারী। সমাজে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে আত্মহত্যার ঘটনা। নানা বয়স ও পেশার মানুষ নানা রকম অভিমান বুকে নিয়ে মৃত্যুর পথে হাঁটছেন। শোবিজের রুপালি রঙিন জগতেও অনেক তারকা রয়েছেন যারা সেই পথ বেছে নিয়েছেন। যদিও তাদের অনেকের মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে, নানা রকম গল্প প্রচলিত রয়েছে তবু তারা আত্মহত্যা করেছেন বলেই ধরে নেয়া হয়। সেই তালিকাটা একবার দেখে নেয়া যাক। জেনে নেয়া যাক কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন যারা- ডলি আনোয়ার তার মতো উচ্চশিক্ষি, উচ্চবংশীয় একজন মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এটা মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। তিনি বুদ্ধিজীবী, শিক্ষানুরাগী ও সাহিত্যিক ড. নীলিমা ইব্রাহিমের মেয়ে। তার পিতা ছিলেন চিকিৎসক। আন্তর্জাতিক চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনকে বিয়ে করার পর থেকে তিনি ডলি আনোয়ার নামে পরিচিতি পান। দেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সূর্য দীঘল বাড়ি-তে জয়গুন চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন। এছাড়া তাকে দেখা গেছে বেশ কিছু রুচিশীল সমৃদ্ধ গল্প ও চরিত্রপ্রধান ছবিতে। ১৯৯১ সালের ৩ জুলাই হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে ডলি আনোয়ার আর নেই। বলা হলো তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কারণ হিসেবে উঠে এলো স্বামীর পরকীয়া। প্রায়ই এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো, বিরোধ হতো। হাঁপিয়ে উঠেছিলেন ডলি। মা নীলিমা ইব্রাহিমের কাছে গিয়েছিলেন সেখানে থাকবেন বলে। মা তাকে আশ্রয় দেননি। একজন উদারপন্থি শিক্ষাবিদ হয়েও মুসলিম রক্ষনশীলতা ও সামাজিক মান মর্যাদার দম্ভের কাছে হেরে তিনি মেয়েকে আর দশটা বাঙালি মেয়ের মতোই স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে চলতে বললেন। সেই চেষ্টা করে ব্যার্থ হলেন ডলি। এরইমধ্যে একাধিক নারীতে আসক্ত স্বামী চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন ডলিকে তালাক দিয়ে বসলেন। সেই তালাকের আঘাত সইতে পারলেন না। বেছে নিলেন আত্মহননের পথ। তবে তার মৃত্যুকে অনেকেই নিরব খুন বলেও অভিহিত করেন। প্রয়াত নাট্যকার ও শিক্ষাবিদ বেগম মমতাজ হোসেন দৈনিক জনকণ্ঠের একটি লেখায় ডলি আনোয়ারের মৃত্যুর জন্য সরাসরি চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনকেই দায়ী করেছেন। তবে ডলির আত্মহত্যাটি ছিলো যথেষ্ট শৈল্পিক ও সিনেমাটিক। তার মৃত্যুর পর তিনি কেন আত্মহত্যা করেছিলেন সেই তথ্যের চেয়ে কীভাবে সাজগোজ করে আত্মহত্যা করেছিলেন সেটাই বেশি তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, সেদিন সন্ধ্যা বেলায় দুই বান্ধবী তার কাছে আসে এবং একটি খাম হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। তারপর ডলি সুন্দর করে সাজগোজ করে লম্বা পাড়ের শাড়ি পরে কপালে লাল টিপ দিয়ে ঘরে রাখা ইঁদুর মারা ওষুধ র্যাটম পান করে বিছানায় শুয়ে থাকেন এবং মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। সালমান শাহ ঢাকাই সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। তার মৃত্যু এই ইন্ডাস্ট্রির কাছে দারুণ এক শোকের, আক্ষেপের এবং যাতনার। ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে যখন নক্ষত্র হয়ে জেগেছিলেন বাংলা সিনেমার আকাশে ঠিক তখনই নিভে গেলেন সালমান। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। অভিযোগ উঠে যে, তাকে হত্যা করা হয়; কিন্তু তার সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে হত্যাকাণ্ডের কোনো আইনি সুরাহা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা কেনে হুট করে আত্মহত্যা করে বসলেন সে প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। তার মা ও ভক্তরা সালমানকে খুন করা হয়েছে দাবি করে নানা রকম কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তার খুনের দায় নিয়ে সাবেক স্ত্রী সামিরা লড়ে যাচ্ছেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য। তিনি এরমধ্যে গণমাধ্যমে মুখও খুলেছেন দীর্ঘ ২১ বছর পর। গত ২০১৭ সালে জাগো নিউজকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে তিনি সালমানের মৃত্যু নিয়ে খোলামেলা অনেক কথা বলেন। মিতা নূর নব্বই দশকে টিভির মিষ্টিমুখ মিতা নূর। বিজ্ঞাপন বা নাটক; সবখানেই নিয়মিতই দেখা মিলতো লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর। মিতার সহকর্মীরা বলেন, সবসময় হাসি মুখে থাকতেন তিনি। নিজে হাসতেন এবং অন্যদেরও হাসাতেন। এমন একজন নারীর জীবনে কী এমন ঘটলো যে হুট করে তিনি আত্মহত্যা করে বসলেন! সেই রহস্য আর জানা যায়নি। ২০১৩ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসার ড্রয়িংরুম থেকে অভিনেত্রী মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মিতার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আত্মহত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়। মিতা নূরের পিতা এর সমর্থন করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্বামীর সঙ্গে অনেকদিন ধরেই বনিবনা হচ্ছিলো না মিতার। সেই অভিমান থেকেই নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এর আগেও মিতা দুদুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও তথ্য দেন তার বাবা। তবে মিতা নূরের আত্মহত্যার খবরটি মেনে নিতে পারেননি শোবিজের প্রায় কেউই। অনেকে সরাসরি মুখ না খোললেও এই মৃত্যুকে রহস্যজনক বলেই মনে করেন। কেউ কেউ মিতা নূরকে স্বামীর পরকীয়ার বলি বলে উল্লেখ করে থাকেন। মঈনুল হক অলি এ দেশের শোবিজে আরেকটি করুণ ঘটনার জন্ম দিয়েছেন প্রয়াত মডেল ও অভিনেতা মঈনুল হক অলি। তিনি অবশ্য সবার কাছে অভিনেতা অলি হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী, থিয়েটার-কর্মী, মডেল ও অভিনেতা ছিলেন তিনি। ২০১২ সালের ২৭ মার্চ খবর আত্মহত্যা করেন এই অভিনেতা। এখানেও দাম্পত্য কলহ ও বনিবনার অভাবকেই দায়ী করা হয় আত্মহত্যার জন্য। জানা যায়, ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে অলি বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তার দাম্পত্য জীবন ভালো যাচ্ছিলো না। এজন্যই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ার নিয়েও হতাশায় ভুগছিলেন অলি। এটাকেও অলির আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখে থাকেন অনেকে। লাক্স তারকা রাহা ২০০৭ সালের লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশের তারকা ছিলেন সুমাইয়া আসগর রাহা। লাক্স তারকা হিসেবে শোবিজে পথ চলা শুরু করলেও ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া অনন্ত জলিলের খোঁজ দ্য সার্চ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাহা। কিন্তু এখনো এই আত্মহত্যার কেনো কারণ পাওয়া যায়নি। তবে তার মৃত্যুর সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে চলচ্চিত্র নায়ক অনন্ত জলিলের সঙ্গে সম্পর্কের কথা। সেসব খবরে বলা হয়েছে, অনন্তর সঙ্গে তার প্রেম ছিলো। পরে অনন্ত বিয়ে করেন বর্ষাকে। সেটা মেনে নিতে পারেননি রাহা। সেই হতাশা থেকে তিনি শোবিজে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। আর তাতে হতাশা আরও বাড়তে থাকে। যার ফলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তবে রাহার পরিবার তার মৃত্যু নিয়ে বেশ রহস্য তৈরি করেছিলো। তার বাবা শেখ মো. আলী আসগর মৃত্যুর দিন সাংবাদিকদের বলেন, তার মেয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে রাহার বাবা চিকিৎসক কিংবা কোনো হাসপাতালের দেওয়া রাহার মৃত্যু সংক্রান্ত সনদ দেখাতে পারেননি। পাশাপাশি দাফন করার আগে আজিমপুর কবরস্থানের অফিসে রাহার পরিবার মৃত্যুর কারণ হিসেবে জানিয়েছিলো, রাহা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় রাহার মৃত্যুর একেক রকম তথ্য অনেক রহস্যের জন্ম দিয়েছে। নায়লা লোকনাট্য দল বনানীর একজন সদস্য ছিলেন তিনি। মঞ্চে কাজ করে নিজের অভিনয়ের দক্ষতাও বাড়াতে থাকেন। ললিতা, পা রেখেছি যৌবনে, অ-এর গল্প ও মুম্বাসাসহ বেশ কিছু টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই হতাশায় পেয়ে বসে তাকে। সম্প্রতি তার মা মারা যাবার পর তিনি আরো বেশি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এবং তিনি তার ফেসবুকে হতাশামূলক স্ট্যাটাস দিতেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। কি কারণে তার এই হতাশা, সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ২০১৫ সালের ২০ মার্চ তিনি আত্মহত্যা করেন। শ্যামলীর বাসা থেকে নায়লার সিলিং ফেনে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। পিয়াস রেজা পিয়াস রেজা পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রাজধানীর ভাষানটেকে। ২০১৪ সালের রোজা ঈদের দিন ছিলো। সেদিনই ফ্যানের সঙ্গে প্রেমিকার ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন এই গায়ক। তার পুরো নাম নাঈম ইবনে রেজা ওরফে পিয়াস। বয়স ছিলো মাত্র ২১। একমুঠো সুখ অবশেষে সাদাকালো মন- এর মতো বেশকিছু জনপ্রিয় গান রয়েছে তরুণ এই কণ্ঠশিল্পীর। জানা গেছে, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় সহপাঠীর সঙ্গে পিয়াসের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। সেটা মেনে নিতে পারেননি পিয়াস। আর নিজের আবেগের কাছে হেরে গিয়ে ওই প্রেমিকার একটি ওড়না দিয়েই আত্মহত্যা করে বসেন তিনি। লোপা নায়ার একই বছরে আত্মহত্যা করেন হুমায়ূন আহমেদের এইসব দিন রাত্রি ধারাবাহিক নাটকের টুনি চরিত্র রূপদানকারী অভিনেত্রী লোপা নায়ার। পারিবারিক অশান্তির কারণেই নাকি এই অপমৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। জ্যাকুলিন মিথিলা প্রথমে গুজব মনে হলেও পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে মডেল জ্যাকুলিন মিথিলা আত্মহত্যা করেছেন। মূল ধারার মিডিয়ায় তিনি খুব বেশি আলোচিত না হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে ছিলেন। সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ভুল পথ। যার শেষ পরিণতি হলো জীবননাশে। ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন মিথিলা। এ ঘটনায় তার বাবা স্বপন শীল থানায় মামলা করেন। মিথিলার বাবা জানান, স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া, শ্বশুরবাড়ির মানুষদের খারাপ ব্যবহারের কারণে তার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তমা খান শোবিজে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ আর হলো কই। গেল ৯ মে রাজধানীর মিরপুরে চিত্রপরিচালক শামীম আহমেদ রনির সাবেক স্ত্রী ও অভিনেত্রী তমা খান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় দুই বোন ফ্যানের সঙ্গে তমা খানকে ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু তমার মৃত্যুর কারণ কী সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। তার পরিবারও মুখ খুলছে না। তবে মৃত্যুর আগে আগে তমার ফেসবুকে সর্বশেষ কিছু ছবি দেয়া আছে তার স্বামী শামিম আহমেদ রনির সঙ্গে। সেগুলো দেখে অনেকেই ফেসবুক লিখেছেন রনির কাছে প্রতারিত হয়েই নিজের জীবন শেষ করে দিলেন তমা। আর এস/ ১১ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2YoV4qT
May 11, 2019 at 09:08PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন