কলকাতা, ১৬ মে- শেষ দফার ভোটের আগে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে জোর টানাপোড়েন শুরু হল বঙ্গ রাজনীতিতে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি কে ভাঙল? এই লাখ টাকার প্রশ্নেই তোলপাড় রাজনীতির ময়দান। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সোচ্চার হচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি। ইতিমধ্যেই দুই দলের তরফেই প্রমাণ স্বরূপ মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনার ভিডিও সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনটা সত্যি? ইতিমধ্যেই এ ঘটনার তদন্ত নেমে মূলত ২টি ভিডিওকে পাখির চোখ করেছে কলকাতা পুলিশ। কী রয়েছে ওই দুই ভিডিওতে? একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, গেরুয়া পোশাক পরা একদল যুবক বিদ্যাসাগর কলেজ হস্টেলের বাইরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করছে। অন্য ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা একদল যুবক দেওয়াল লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে, যেখানে কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে, যাদের হাতে বিজেপির পতাকা, পরনে গেরুয়া পোশাক। এই দুটি ভিডিও ক্লিপই খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশ। বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডবের ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ৫৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই বিজেপি সমর্থক। সেদিনের হামলার জন্য বিজেপি বাইরের রাজ্য থেকে লোক এনেছিল, এ অভিযোগ করেছে তৃণমূল। তবে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ধৃতরা সকলেই হুগলি, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, টিটাগড়ের বাসিন্দা। ধৃত ৫৮ জনের মধ্যে ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার অমিত শাহর রোড শো ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট চত্বর। কিন্তু কে প্রথম হামলা চালাল? এই প্রশ্নও তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন মহলে। পুলিশ আধিকারিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও দুদলের কর্মীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। জানা যাচ্ছে, রোড শো শুরুর আগেই দুপক্ষের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। অন্যদিকে, টিএমসিপির বিক্ষোভকে প্রতিহত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন বিজেপি কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি। তাছাড়া সোশাল মিডিয়াতেও ভিডিও দেখেছি। বহিরাগতরা হস্টেল চত্বরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। বিদ্যাসাগর কলেজ হস্টেলের কেয়ারটেকার এস আর মোহান্তি বলেন, প্রায় ৫০-৬০ জন কলেজের গেটে ধাক্কা দিচ্ছিল। ওরা মিছিলে অংশ নিয়েছিল। জোর করে গেট ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। ওরা ক্যাম্পাসের মধ্যে জলের বোতল ছুড়ছিল। আমি দৌড়ে উপরে গিয়েছিলাম। সেসময় কয়েকজন ছাত্র পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। যেই না পুলিশ এল, ওরা আসবাবপত্র, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া বললেন, যখন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছিল, তখন জয় শ্রী রাম স্লোগান শুনেছিলাম। দুজন বন্ধুর সঙ্গে দৌড়ে আমি উপরে উঠে গিয়েছিলাম। পরে সহপাঠীরা আমাদের উদ্ধার করে। টিএমসিপি-র সদস্য তথা কলেজে ছাত্র সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভম মণ্ডল বলেন, গোটা কলেজে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। উপরের তলায় গিয়ে কম্পিউটার ভেঙেছে, উইন্ডো গ্লাস ভেঙেছে। অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর কলেজে তাণ্ডবের ঘটনায় তৃণমূলই জড়িত বলে বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও বলেন, এ ঘটনার পিছনে কাদের হাত রয়েছে, তার প্রমাণ স্বরূপ ছবি তাঁদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, অমিত শাহর কর্মসূচি আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। অনুমতিও ছিল প্রশাসনের। তা সত্ত্বেও কীভাবে টিএমসিপি বিক্ষোভ দেখাতে পারল? মুকুল এও বললেন, আমরা সকলেই বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা করি। এ ঘটনা প্রসঙ্গে এবিভিপির সপ্তর্ষি সরকার বলেন, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর যে করেছে, তাকে শাস্তি দিতে হবে। পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না, এর দায় নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। নির্দোষদের গ্রেফতার করে হেনস্থা করা ঠিক নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি কর্মী বলেন, হস্টেলের ছাদ থেকে পাথর ছোড়া হচ্ছিল। আমাদের কয়েকজন জখম হয়েছে। কেন আমরা হস্টেলের মধ্যে ঢুকতে যাব? এই এলাকারই একটি সোনার দোকানের মালিক অরবিন্দ সিং বলেন, ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে পাথর ছোড়া হচ্ছিল। বিজেপি কর্মীরা জোর করে ক্যাম্পাসে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এদিকে, বিজেপি নেতা রাকেশ সিংয়ের একটি ভিডিও ক্লিপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও তিনি বলেছেন, ওই ভিডিওটি বিকৃত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাকেশ বলেন, টিএমসিপি রোড শোতে গোলমাল পাকাতে পারে, এ খবর আমি পেয়েছিলাম। এমন খবরও পেয়েছিলাম যে, ওরা আমাদের প্ররোচিত করতে পারে। সেজন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কেউ যদি আমায় আঘাত করতে আসে, তাহলে কি আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকব? প্রত্যেকের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আর/০৮:১৪/১৬ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Q5jCm1
May 16, 2019 at 10:47AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top