প্রায় পাঁচশ বছর আগে ক্রিকেট খেলাটির জন্ম হলেও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে খেলাটি জনপ্রিয়তা বিংশ শতাব্দির শেষ দিকে। ১৯৭০-৭১ সালে অ্যাশেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে এসে বদলে যায় ক্রিকেটের ভাগ্য। সিরিজের প্রথম দুটি টেস্ট হলেও বৃষ্টির কারণে শুরু হচ্ছিল না তৃতীয় টেস্ট। প্রথম দুটি টেস্ট ড্র হওয়ায় তৃতীয় টেস্টে কিছুটা উত্তেজনা আনতেই কিনা ৬০ ওভারের ক্রিকেট ম্যাচের চিন্তা করেন আয়োজকরা। একদিনের ক্রিকেট, নতুন আবিষ্কারের উন্মাদনায় ক্রিকেটাররাও দারুণ উৎসাহ নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। প্রথম টেস্টের মতো প্রথম ওয়ানডেটাও জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নের ৪৬ হাজার দর্শকের সামনে নতুন পথের খোঁজ পায় সাদা জামা ও লাল বলের ক্রিকেট। ক্রিকেটকে আরো জনপ্রিয় করতে ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করা হয়। এর পরেই স্পন্সর, কৃত্রিম আলো, রঙিন পোশাক আর কাড়ি কাড়ি পয়সার ঝনঝনানি। ১৯৭৫ -২০১৯। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বয়স এখন ৪৬! টি-টোয়েন্টি, টি-টেন ক্রিকেটের যুগে ওয়ানডে ক্রিকেটের নাকি মন্দাকাল চলছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, টেস্টের মতো ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও চলছে দর্শকখরা। তবে বিশ্বকাপ এর মতো আসর হলে আলোচনাটা একেবারেই বদলে যায়। ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত আসরে বুদ হয়ে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। চার-ছয় আর উইকেটের হিসেবে ব্যস্ত থাকেন তারা। বিরাট কোহলি-ডেভিড ওয়ার্নার, স্টার্ক-রাবাদাদের কারণে উৎসবে মেতে থাকে পুরো মাঠ। সংখ্যার হিসেবে এবার বসছে ক্রিকেটের ১২তম আসর। প্রথম আসরের মতো দ্বাদশ আসরটিও বসছে ক্রিকেটের চারণভূমি ইংল্যান্ডে। এবার নিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপের আয়োজন করছে ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দলটি। ইংল্যান্ডে ফিরলেই যেন ক্রিকেটের গায়ে গতরে বিদ্যুৎ খেলে যায়, নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন রূপে। ৩০ মে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে দেড় মাসব্যাপী ক্রিকেট যজ্ঞ। অংশগ্রহণকারী দশটি দল ইতিমধ্যে তাদের সেরা দল ঘোষণা করেছে। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মতো তূলনামূলক ছোট শক্তির দলগুলিও ইতিমধ্যে ইংলিশ কন্ডিশনে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ দল তো মাস মাসখানেক আগেই পৌঁছে গেছে ক্রিকেটের পিতৃভূমিতে। এবার নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজন করছে ইংল্যান্ড। দেশটিতে আগের চারটি আসরের মধ্যে দুবারই শিরোপা জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া জিতেছে বাকি দুবার। প্রথম আসরে অস্ট্রেলিয়া ও দ্বিতীয় আসরে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি জেতে ক্যারিবীয়রা। ১৯৮৩ সালে তৃতীয় আসরে অবশ্য উইন্ডিজদের আর হাসতে দেয়নি ভারত। চতুর্থ আসরে এসে প্রথমবারের মতো শিরোপার দেখা পায় অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ইংরল্যান্ডকে হারায় তারা। পঞ্চম আসরেও শিরোপা হাতঝাড়া হয় ইংলিশদের। ১৯৯২ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ধরাশায়ী হয় তারা। ১৯৯৬ সালে তৃতীয় এশীয় পরাশক্তি হিসেবে শিরোপা জেতে শ্রীলংকা। পরের তিনটি আসরে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকাকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ সালে, দশম আসরে ঘরের মাঠে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় ভারত। ফিরতি আসরে নিজেদের মাটিতে আবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এবারের আসরের গ্রুপপর্বটা হবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির। যেখানে পত্যেক দল লিগ পর্বে একে অপরের মুখোমুখি হবে। ১১টি ভেন্যুতে ফাইনাল, দুটি সেমিফাইনাল ও ৪৫টি গ্রুপপর্বের ম্যাচসহ মোট ৪৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আসরের ফাইনাল ম্যাচটি হবে ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে। বছর, মাস শেষে ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হতে এখন মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি পর্ব শেষ করে ফেলেছে দলগুলি। প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলি চমক দেখিয়েছে। স্বরুপে ফিরেছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ফেভারিট দলগুলো। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া শিরোপা ঘরে রেখে দিতে নিজেদের সর্বস্ব ঢেলে দেবে তা বলার প্রয়োজনই পড়ে না। অন্যদিকে বাকি দলগুলোও চাইবে হলুদ রাঙা ট্রফিটিকে নিজেদের করে নিতে। পছন্দের দলকে সমর্থন জোগাতে দিন-রাত জেগে খেলা দেখবেন ভক্তরা। টি-টোয়েন্টি আসার পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কমে গেছে, কথাটা মোটেও সত্য নয়। বিশেষ করে আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টের জন্য দর্শকরা অপেক্ষা করে থাকেন। দর্শক সংখ্যার হিসেবে গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রেকর্ড গড়েছিল। আশা করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে দর্শক সংখ্যা আরো বেশি হবে। ৪৬ বছর বয়সেও ওয়ানডে ক্রিকেটের জৌলুস যে এতোটুকুও কমেনি এবারের বিশ্বকাপকে ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা সেই কথাই প্রমাণ করে। আর এস/ ২৯ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HIS9Eg
May 29, 2019 at 06:10PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top