ডাবলিন, ১৪ মে- ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উন্নিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, আমরা আজ দারুণ বোলিং করেছি। সৌভাগ্যক্রমে ব্রেক থ্রু পেয়ে যাই। ইনিংসে মোস্তাফিজ খুব ভালো বোলিং করেছে। সাকিব-মিরাজরাও খারাপ করেনি। মাশরাফি আরও বলেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলতে এই ম্যাচটিতে জয় পাওয়া আমাদের খুবই গরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা কঠোর পরিশ্রম করার ফল পেয়েছি। আশা করি শিরোপা জিততে পারব। সোমবার প্রথমে ব্যাট করে মোস্তাফিজ-মাশরাফির গতির মুখে পড়ে ২৪৭ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ। সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিমের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। ২৪৮ রান করলেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত হবে বাংলাদেশ দলের। এমন সমীকরণের ম্যাচে উদ্বোধনীতে সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। ইনিংসের নবম ওভারে অ্যাসলে নার্সের প্রথম দুই বলে ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি হাঁকান তামিম ইকবাল। এই অফ স্পিনারের চতুর্থ বলে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে ২৩ বলে ২১ রান করেন তামিম। তামিম ইকবালের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ফের ৫২ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। এরপর মাত্র এক রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে চিন্তার ভাজ পড়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। এক উইকেটে ১০৬ রান করা বাংলাদেশ, অ্যাসলে নার্সের অফ স্পিন বিভ্রান্ত হয়। এই ক্যারিবীয় স্পিনার বাংলাদেশ দলের টপঅর্ডার তিন ব্যাটসম্যানকে (তামিম-সাকিব-সৌম্য) সাজঘরে ফেরান। ৩৫ বলে ২৯ রান করে ফেরেন সাকিব। অ্যাসলে নার্সের তৃতীয় শিকারে পরিনত হওয়ার আগে ৬৭ বলে ৪টি চার ও দুই ছক্কায় ৫৪ রান করেন সৌম্য। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। জয়ের জন্য শেষ দিকে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৮৭ বলে ৫৮ রান। এমন অবস্থায় উইকেট হারান মিঠুন। জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৫৩ বলে ৪৩ রান করে ফেরেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। মিঠুনের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে বাকি কাজ ভালো ভাবেই সামাল দেন মুশফিকুর রহিম। জয়ের জন্য শেষ দিকে ২৩ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান। খেলার এমন অবস্থায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া মুশফিক ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তার আগে ৭৩ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কায় ৬৩ রান করেন জাতীয়ে দলের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। মুশফিক আউট হলেও জয়ের জন্য সমস্যায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩৪ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। এর আগে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সামনে ২৪৭ রানেই গুটিয়ে গেল উইন্ডিজ। সোমবার আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের দ্যা ভিলেজ স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ক্যারিবীয় দলের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় উইন্ডিজ। দলীয় ৩৭ রানে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিস। মাশরাফির শিকারে পরিনত হওয়ার আগে মাত্র ২৩ রান করার সুযেগা পান তিনি। এর আগের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৮ রান করেন ক্যারিবীয় ওপেনার অ্যামব্রিস। ক্যারিবীয় শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ অফ স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ড্যারেন ব্রাভো। মিরাজের কল্যানে মাশরাফির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে লাইফ পেয়েও নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি ব্রাভো। ফেরেন মাত্র ৬ রানে। এরপর উইন্ডিজ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। বোলিংয়ে এসেই দ্বিতীয় ওভারে রোস্টন চেজকে সাজঘরে ফেরান মোস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিনত হয়ে সাজঘরে ফেরেন ২৯ বলে ১৯ রান করা রোস্টন চেজ। নিজের চতুর্থ ওভারে নতুন ব্যাটসম্যান জনাথন কার্টারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন দ্য ফিজ খ্যাত মোস্তাফিজ। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে মাত্র ৪ রান করার সুযোগ পান জনাথন। ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলকে খেলায় ফেরান ওপেনার শাই হোপ ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। পঞ্চম উইকেটে তাড়া ১০০ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতেই জোড়া ফিফটি তুলে নেন তারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শাই হোপ এদিনও সেই পথেই ছিলেন। সময়ের ব্যবধানে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা শাই হোপকে সাজঘরে ফিরিয়ে জুটির বিচ্ছেদ ঘটান মাশরাফি। বাংলাদেশ দলের এই অধিনায়কের বলে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরার আগে ১০৮ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৮৭ রান করেন শাই হোপ। এরপর দ্রুত জেসন হোল্ডারকে সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। শাই হোপের মতো হোল্ডারও মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন। তার আগে ৭৬ বলে তিনটি চার ও এক ছক্কায় ৬২ রান করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। শাই হোপ এবং হোল্ডার আউট হওয়ার পর শেষ দিকে আর কোনো ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কারণে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ। বাংলাদেশ দলের হয়ে মোস্তাফিজ নেন ৪ উইকেট। ৩ উইকেট শিকার করেন মাশরাফি। একটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। তবে অভিষেক ম্যাচে কোনো সাফল্য পাননি আবু জায়েদ রাহী। ৯ ওভারে ৫৬ রান খরচ করেন এই পেসার। সংক্ষিপ্ত স্কোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৪৭/৯ (শাই হোপ ৮৭, জেসন হোল্ডার ৬২, অ্যামব্রিস ২৩; মোস্তাফিজ ৪/৪৩, মাশরাফি ৩/৬০)। বাংলাদেশ: ৪৭.২ ওভারে ২৪৮/৫ (মুশফিক ৬৩, সৌম্য ৫৪, মিঠুন ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ৩০*, সাকিব ২৯, তামিম ২১, সাব্বির ০*)। ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী। সূত্র: যুগান্তর আর/০৮:১৪/১৪ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HhWVbp
May 14, 2019 at 04:42AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন