কলকাতা, ১২ মে- রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিপিআইএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিজেপি বিরোধী এবং স্বয়ং বুদ্ধদেবই একথা জানিয়েছেন মমতাকে। রবিবার বারুইপুরের সভায় এমন চাঞ্চল্যকর দাবিই করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এ মুহূর্তে বিজেপি নিয়ে জ্যোতি বসুর অবস্থান কী হতে পারত সে সম্ভাবনার কথাও এদিন শোনা গেল মমতার গলায়। তৃণমূলনেত্রী বলেন, জ্যোতি বসুও হয়তো বিজেপির বিরুদ্ধে, জানি না, বেঁচে থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করে দেখতাম। সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যে বিজেপি বিরোধী অবস্থানে থাকবেন তা প্রত্যাশিত হলেও, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে তাঁদের বিজেপি বিরোধিতার কথা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ঠিক কী বলেছেন মমতা? বারুইপুরের সভায় সিপিএমের অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে মমতা বলেন, সিপিএম অনেক অত্যাচার করেছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-নেতাই তো অনেক পরে। ওটা তো ২০০৬ সাল থেকে। তার আগে বহু ঘটনা ঘটেছে। হাজরটা ঘটনার সাক্ষী। আমার আন্দোলন লগ্নে জন্ম, আন্দোলন লগ্নেই মৃত্যু হবে। লড়াই যারা করে, তাদের সারাজীবন ধরে লড়াই থাকে। আমি অনেক মার খেয়েছি, অনেক অসম্মানজনক কথা বলা হয়েছে আমাকে। তাও বলছি, সিপিএমের সব লোক খারাপ, এটা আমি মনে করি না। এরপরই মমতা বলেন, আপনারা যদি জিজ্ঞাসা করেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কি বিজেপি সমর্থক? আমি বলব, না। মিথ্যা কথা বলে লাভ নেই। উনি যে আমার বন্ধু তা তো নন। ওঁর আমলেই তো সবথেকে বেশি মার খেয়েছি। আমি ওঁর বাড়িতে দেখা করতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, উনি আমায় বলেছিলেন। বিজেপি নিয়ে বুদ্ধদেবের অবস্থান জানানোর পর মমতা বলেন, জ্যোতি বসুও হয়তো বিজেপির বিরুদ্ধে থাকতেন। বেঁচে থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করতাম। এরপর মমতা সিপিএমের বর্তমান নেতৃত্বকে তুলোধনা করে বলেন, এই যে সিপিএমের নেতাদের দেখছেন, সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে। বিজেপির পকেটের ছেলেমেয়ে। এই কয়েকটাকে মিউজিয়ামে বাঁধিয়ে রাখার মতো। বিজেপির হেরিটেজ, ৩৪ বছর ধরে সিপিএম করে হেরিটেজ হতে পারেনি। প্রসঙ্গত, এক দশক আগে মমতা বনাম বুদ্ধদেবের লড়াইয়ে তেতে থাকত বঙ্গ রাজনীতি। যদিও বঙ্গে পরিবর্তন আসার পর এবং শারীরিক কারণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নিজেকে দৈনন্দিন রাজনীতি থেকে বেশ খানিকটা সরিয়ে নেওয়ার পর সে পরিস্থিতি বদলেছে। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে গিয়ে সৌজন্যের নজিরও গড়েছেন মমতা। এদিকে, কিছুদিন আগে সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদীকে ধান্দাবাজদের চৌকিদার বলে উল্লেখ করেন বুদ্ধদেব। মোদীকে বিঁধতে গিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও পুঁজিপতিদের মডেল বলেও আখ্যা দিয়েছেন বুদ্ধদেব। ফলে এদিন বিজেপি নিয়ে বুদ্ধদেবের অবস্থানের সঙ্গে তাঁর নিজের অবস্থানের মিল যেভাবে তুলে ধরলেন মমতা, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে, জ্যোতি বসুর সঙ্গেও শেষদিকে মমতার ভাল সম্পর্ক নিয়ে জোর চর্চা চলেছে রাজনৈতিক মহলে। সল্টলেকে জ্যোতি বসুর বাড়িতে গিয়ে মমতার হঠাৎ সাক্ষাৎ ও প্রণাম চোখ কপালে তুলেছিল রাজনীতিকদের। সম্প্রতি, রাজ্য রাজনীতির আনাচে কানাচে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বামের ভোট রামের ঘরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রচলিত ব্যাখ্যাটি হল, তৃণমূল বিরোধী অবস্থান এবং বামেদের প্রকৃত বিরোধী হয়ে উঠতে না পারার বাস্তবতা থেকে, নিচু তলার লাল পতাকাধারীরা তলে তলে গেরুয়া শিবিরকে সমর্থন জোগাতে পারেন। এমনিতে গত বেশ কয়েকটা নির্বাচনী প্রচারে মমতা বাংলায় কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ তুললেও বিজেপি বিরোধী ভোটকে এককাট্টা করতে বাংলার খাঁটি সিপিএম সমর্থকদের উদ্দেশে বুদ্ধদেব-জ্যোতিবাবুর অবস্থান স্মরণ করালেন কৌশলী মমতা। আর এস/ ১২ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2E3THGK
May 13, 2019 at 03:54AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top