ঢাকা, ১৬ মে- আরেকবার জন্ম নেয়ার সুযোগ থাকলে আমি শুধু আপনার সন্তান হয়েই বাঁচবো আব্বা। কথা দিলাম আপনার ত্যাগ পরিশ্রম কষ্ট অপমান আর গঞ্জনার সঙ্গী হবো আমি, শুধু একটা সুযোগ আল্লাহ্র কাছে চাই। সাত সন্তানের চাহিদা মেটানো আর পারিপার্শ্বিক অসহায়ত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানো আপনাকে চিনতে পারিনি আব্বা। সময় চলে গেছে চিত্রনাট্যের চরিত্রগুলো বুঝতে বুঝতে, বলতে গেলে একটা জীবন চলে গেছে। বাবা না হলে হয়তো কোনদিনই আপনার দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া পরিস্থিতিটা আবেগের জায়গায় আসতো না। প্রিয় বাবাকে নিয়ে এই আবেগঘন কথাগুলো বলছিলেন বাংলা সঙ্গীতের যুবরাজ আসিফ আকবর। ২০০১ সালে প্রকাশিত হওয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় গানের মাধ্যমে বাংলা সঙ্গীতে এক অনন্য অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন এই যুবরাজ। ১৮ বছর ধরে এখনও রাজত্ব করে যাচ্ছেন বাংলা সঙ্গীতাঙ্গনে। সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে বাবাকে নিয়ে এমন আবেগ ঘন স্ট্যাটাস দেন আসিফ আকবর। একটা ছেলের মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে একজন বাবা। বাবাকে ছাড়া সন্তানের পথ চলাটা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। বাবার সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করে তিনি আরও লিখেন, বছরের ৩৬৫ দিন আর ছয়টা ঘন্টা আপনার ক্লান্তিহীন ছুটে চলার মাজেজা বুঝিনি আব্বা। দোকানের বাকী থেকে শুরু করে বাজারের হিসাব, সন্তান সন্ততি সহ নিজের ভাই বোন কে আপনি পৃথিবীতেই জান্নাত দিতে চেয়েছিলেন সৎ থেকে, পারেননি। আমাদের গরমে এসি আছে, আপনার গরমে ছিলো সবুজ প্রপেলারের ছোটো একটা ভাঙ্গা টেবিল ফ্যান। প্রতি বছর টাকা জমাতেন হজ্ব এ যাওয়ার জন্য, টানাপোড়েন আপনাকে সেই সক্ষমতা দেয়নি, আল্লাহ্র হুকুম এমনি ছিলো আব্বা। কত চাপ নিয়ে দিব্যি মর্নিং ওয়াক এ চলে যেতেন, রাতের পর রাত জেগে বোকার মত পরিবারের জন্য খেটে গেছেন, নথি লিখতে লিখতে ক্লান্তি এলেও খাবারটা আপনি ঠিকমতো খেতে পারেন নি। আপনার কাছে ভীড়তে পারতাম না, এতো বিচার আসতো, কুশল বিনিময় কখনো করা হয়নি। আপনার ক্লান্ত অশান্ত মন আমাকে মেরেই যেতো। আফসোস আব্বা ... এতো দুষ্টামি না করলে হয়তো আপনার কন্ঠটা এখনো কানে বাজতো। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে থিয়েটার কর্মী ছিলেন, এসব গল্প করা হয়নি আপনার সাথে। আপনি যখন শেভ করতে করতে গাইতেন- ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা- গানটি, তখন লুকিয়ে লুকিয়ে শুনতাম। আমি জানতাম আমাকে দেখলে আপনার মূড নষ্ট হয়ে যাবে, কারন আমি অনেক দুষ্ট ছিলাম আব্বা। তিনি আরও বলেন, আপনি আমাকে নিয়ে গেছেন নজরুল একাডেমীতে ওস্তাদ রুহুল্লাহ স্যার এর কাছে, নিজেই বাজাতেন সারেগামাপা... আমার ভাবনায় ছিল ক্রিকেট, তাই গান শেখা হয়নি আব্বা... অথচ দেখুন প্রকৃতি আমাকে এখানেই ঠেলে পাঠিয়েছে। আমি যখন গায়ক, তখন আপনি নির্বাক, এজন্যই সৌভাগ্য হয়েছে আপনার কিছুটা সঙ্গ পাওয়ার, কারন আপনার ক্ষমতা ছিলোনা আমাকে সবসময়ের মত তিরস্কার করার, অথচ ঐ সময়ে আমার শাসনে থাকার দরকার ছিল। আমিও আপনার ঔরসজাত সন্তান, আমার প্রতি আপনার আবেগ ঠিকই বুঝে নিয়েছি আব্বা। এমন একটা সন্ধিক্ষণে জীবন পৌঁছে গেছে, যেখান আর কোন প্রত্যাশা নাই আব্বা। আপনিই আমার হিরো, আপনিই আমার কাছে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট। আপনিই আমার জীবন চলার পথের মূল স্পিরিট, আমার পৃথিবীতে আপনিই সব আব্বা। চলে গেছেন আল্লাহর কাছে, তাই আবারো ব্যর্থ হলাম আপনার ছবি দিতে। আমিতো এখনো বেঁচে আছি, তাই আমার ছবি দিয়ে আবারো জানান দিলাম, আমিই সেই ক্লান্তিহীন বাবার উত্তরাধিকার... এজন্য ক্ষমা চাইনা কোথাও ...ভালবাসা অবিরাম ... প্রসঙ্গত, ক্যাসেট ফিতার যুগ থেকে অনলাইনের যুগে এসেও নিজের গানে রাজত্ব করছেন আসিফ আকবর। মাঝে অনেকদিন গান থেকে দূরে থাকলেও আবারও ফিরেছেন গানে। নিত্য নতুন গান নিয়ে হাজির হচ্ছেন শ্রোতাদর্শকদের সামনে। প্রতিনিয়তই নিজেকে এখন ব্যস্ত রেখেছেন গানের জগতে। আর/০৮:১৪/১৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HrmVA6
May 16, 2019 at 04:30AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন