দিনাজপুর, ২৭ মে- সারাদেশে এখন বিশ্বকাপ উন্মাদনা। আর কয়েকদিন পরেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মহারণ শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ডে। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ মঞ্চ মাতাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দিনাজপুরের সন্তান লিটন কুমার দাসের এই প্রথম টাইগারদের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া দিনাজপুরবাসীর জন্য এক দারুণ আনন্দ সংবাদ। দিনাজপুর ক্রিকেট ইতিহাসে লিটন দাস এক অবিস্মরণীয় নাম। উত্তরাঞ্চলের এই জেলার বসবাসকারীদের আশা, লিটন দাস মাঠে সুযোগ পেলে আস্থাশীল ব্যাটিং উপহার দিলে অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এই আসরে ভালো কিছু নিয়েই দেশে ফিরবে। লিটনের ক্রিকেট জীবন শুরু হয় জন্মশহর দিনাজপুরে। ১৯৯৪ সালে জন্ম নেয়া এই ব্যাটসম্যান বিকেএসপির ছাত্র ছিলেন। ভাই বাপ্পি দাস প্রথম বিভাগের ক্রিকেটার। হয়তো ক্রিকেট অনুপ্রেরণা খুঁজে নিয়েছিলেন বড় ভাইয়ের কাছ থেকেই। কিন্তু পরিবার কিংবা বিকেএসপির ছায়া ছাড়িয়ে লিটনের ক্রিকেটার হওয়ার পেছনের কারিগর আবু সামাদ মিঠু। দিনাজপুর জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ আবু সামাদ মিঠু। সবার চোখে একজন সাধারণ কোচ হলেও লিটন দাসের কাছে এই নামের মাহাত্ম্য একটু বেশিই। কারণ লিটনের ক্রিকেটের হাতেখড়ি যে এই মানুষটির হাত ধরেই। দিনাজপুর অঞ্চলে খেলেছেন প্রচেষ্টা ক্রিকেট ক্লাব এর হয়ে। সেখান থেকেই যাত্রা বিকেএসপিতে। পরবর্তীতে তিনি বয়সভিত্তিক প্রায় সব দলে খেলেছেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব- ২১ এর হয়ে দুর্দান্ত সব ইনিংসের পাশাপাশি উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। যিনি এখন ফুল তিনি যে কুঁড়ি থাকার সময় ঝলক দেখান নি; তা কিন্তু নয়। ২০১০ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ইয়ং টাইগার্স জাতীয় স্কুল ক্রিকেটে ৮ ম্যাচে ৪১৪ রান আর ১৫ ডিসমিসাল করে ৫৩৯ স্কুলের মধ্যে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন বিকেএসপির এই তরুণ। পরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জাত প্রমাণ করেন দিনাজপুরের এই ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার কঠিন কন্ডিশনে ৬ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৬২ রান করেন লিটন। এনামুল হক বিজয়ের ঠিক পরেই ছিলেন বাংলাদেশিদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায়। সেখানেই থেমে থাকেননি ডান হাতি এই ব্যাটসম্যান। ২০১৪ তে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্লেট ফাইনালে ৭৫ বলে ৮০ রানসহ ৬ ম্যাচে ৫০ গড়ে তিনি করেন ২০০ রান। এখানেও ছিলেন দ্বিতীয় অবস্থানেই। ঠিক সাদমান ইসলাম অনিকের নিচে। তারপর থেকে বয়স ভিত্তিক দল বাদেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তার জয়রথ চলছেই। ডিপিএলের ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ১ শতক আর ৫টি অর্ধশতকে ৪৩ গড় আর ৯১ স্ট্রাইকরেটে তোলেন ৬৮৬ রান যা ওই টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল। উইকেটের পেছনেও যে তিনি কম যান না এর প্রমাণ সেই বয়সভিত্তিক টিম থেকেই দিয়ে আসছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা উইকেটরক্ষক। ঢাকা আবাহনীর হয়ে ১৬ ম্যাচে ২২ কাচ আর ৭ স্ট্যাম্পিং করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। লিটনের প্রথম ক্রিকেট গুরু আবু সামাদ মিঠু এ প্রতিবেদককে জানান, লিটন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ায় তিনি গর্বিত। পাশাপাশি তিনি বলেন, লিটন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলে বিশ্বকাপ মাঠে তার স্টাইলিস্ট ব্যাটিং নৈপুণ্য দিয়ে বিশ্বকে মাতাতে পারবেন। তার ভালো ইনিংস দলকে শক্তিশালী ভীত গড়ে দিতে সহযোগিতা করবে। ছেলেকে নিয়ে বাবা বাচ্চু দাস ও মা অনিতা দাস ব্যাপক আশাবাদী। বাবা বলেন, ছোট থেকে সে ব্যাট হাতে ঘরে-বাইরে অনুশীলন করত। যার প্রতিদান আজ সে পেয়েছে। আমি আশা করবো সে বিশ্বকাপে ভালো খেলে দেশকে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করবে। এ প্রতিবেদককে লিটনের মা বলেন, প্রতিটি খেলায় সে কখন ব্যাট করতে নামবে সেটার জন্য অপেক্ষা করি। যেদিন সে বড় স্কোর করে তখন আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। সেসময় তার ব্যাটিং আর আমি দেখতে পারি না। চোখ বন্ধ করে থাকি। আমি মনে প্রাণে প্রার্থনা করি তার জন্য ও দলের জন্য। আশাকরি সে ভালো কিছু নিয়েই দেশে ফিরবে। ছোট থেকেই বাপ্পি ও লিটন এক সঙ্গে ক্রিকেট খেলত। দুজনের ঘনিষ্ঠতাও অনেক। লিটনকে নিয়ে বড় ভাই বাপ্পী বলেন, সে যখন ছোট তখন তাকে নিয়ে আমি মাঠে যেতাম এবং ওর ব্যাটিং অনুশীলনের টুকিটাকি টিপস দিতাম। আজ লিটন একজন পরিপক্ব খেলোয়াড়। আমার ভাই যখন বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পায় তখন আমি আনন্দে আপ্লুত হয়ে পরি। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সে যখন ব্যাট করতে নামে তখন থেকেই আমি নিজেকে অস্থির মনে করি। সে কেমন খেলবে এই কথা ভেবেই খুব অস্থির মনে হয়। ছোট ভাই বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ায় দিনাজপুরবাসীও আমার মতো নিজেকে গর্বিত মনে করে। দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মজুমদার ডলার জানান, লিটন তো আমাদের একদিকে যেমন রত্ন অন্যদিকে জেলার গর্ব। সে দেশের হয়ে এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ মাতাবে। তার মারমুখী ব্যাটিং এবং দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করবে এটাই আমার কামনা। লিটনের ভালো স্কোর হলেই আমি আর ঠিক থাকতে পারি না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরি। লিটন যেমন জেলাকে দেশের বুকে ক্রিয়াঙ্গনে মাইল ফলক রচনা করেছে। তেমনি সে দেশের হয়ে বিশ্ব ক্রিকেট দরবারে মাইফলক হয়ে থাকবে। নিজেকে বড় মানের ক্রিকেটার হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বিশ্বকাপই তার জন্য সেরা সুযোগ। সূত্র: আরটিভি আর/০৮:১৪/২৭ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2WpKO4E
May 27, 2019 at 06:09AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন