তাঁর দাপটে এক সময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। মাওবাদী উপদ্রুত ঝাড়গ্রামে তিনিই ছিলেন জঙ্গলমহলের মায়ের প্রেরিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান। তিনি পুলিশের উর্দি পরে তৃণমূলের হয়ে কাজ করেন, সে সময় এমনটাই ছিল বিরোধীদের মূল অভিযোগ। সেই তিনিই কিছুকাল আগে উর্দি ছেড়ে বিজেপির জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন এবং ভোটের ময়দানে প্রার্থী হয়ে মায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। এবার ভোট মিটতেই ফের তাঁর ডাক পড়েছে ভবানী ভবনে। অভিযোগ, তিনি বারবার হেনস্থার শিকার হচ্ছেন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। আর এসবের পিছনেই নাকি রয়েছে মা-এর চক্রান্ত। যাঁকে একদা মা সম্বোধন করেছিলেন, তিনিই ভোট লুঠ করিয়েছেন। আর তাই ভোটের দিন কেঁদেছেন ভাল মেয়ে, পায়ে চোটও পেয়েছেন বলে দাবি, দফায় দফায় বাধা-বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে। বাংলায় ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচনে খবরের সব লাইমলাইট কেড়ে রাতারাতি বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা ভারতী ঘোষ এবার তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা এবং চক্রান্ত নিয়ে সরব হলেন। জঙ্গলমহলের মা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেমন কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন, তেমনই প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেবকে তীব্র ভাষায় কটাক্ষ করলেন। ভোট মেটার পরই সিআইডি-র জিজ্ঞাসাবাদ? চক্রান্ত করা হচ্ছে। একজন পুলিশ সুপার গোটা বিশ্বে কাজ করেছেন (প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ রাষ্ট্রসংঘে কাজ করেছেন), আর এখন তাঁকে ঘিরেই এই নোংরামি! সারা বিশ্ব খুঁজে পেল না, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুঁজে পেলেন (কণ্ঠে ক্ষোভ)। যাঁর নিজের ভাইপোর স্ত্রী বিমানবন্দরে ধরা পড়েন, তিনি একটা পুলিশ সুপারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। পুলিশ সুপার কী নিয়ে ধরা পড়েছেন? প্রমাণ কোথায়? লোককে ডেকে এনে যে মিথ্যা মামলা করেছে, সেই প্রমাণ আমি সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছি। কী নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল সিআইডি? ২০১৬ সালে ইউনুস আলি মণ্ডলের মামলায় ডেকে পাঠিয়েছিল। একজন আন্তর্জাতিক গরু পাচারকারী। আমি ১০ বছর পুলিশ সুপার থাকাকালীন চার্জশিটে তার নাম উঠেছিল। সেই দুষ্কৃতীদের ডেকে এনে মিথ্যা মামলা করিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। গোটাটাই চক্রান্ত। তবে আমি বরাবরই তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করি, কালও করেছি। ইউনুস আলির গাড়িতে ৪৫ লক্ষ টাকা ছিল। গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। পুলিশ টাকা নিয়ে নেয়। আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, আমি ওর কথা শুনি নি। এটাই অভিযোগ। আমার কথা হচ্ছে, তোমার যদি ৪৫ লক্ষ টাকা থাকে গাড়িতে, তুমি তো অন্ধ-কালা নও, ২০১৬-র ঘটনা ২০১৮-তে বলছ কেন? থানায় অভিযোগ জানিয়েছ? পুলিশ সুপারকে অভিযোগ জানিয়েছ? সাতবার আদালতে গিয়েছিলে গাড়ি নিতে, আদালতকে জানিয়েছিলে? টাকার উৎস কী? নির্বাচনী সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনার পাঠানো মেসেজ সামনে আনতে পারতেন। কিন্তু সৌজন্য মেনে তা আনেন নি। কী বলবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চমকানি, ধমকানিতে ভারতী ঘোষ ভয় পায় না। যদি ভয় পেতাম, ওঁর অধীনে চাকরি করতাম। ভয় পাই না বলেই মাথা উঁচু করে চাকরি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। ওরকম একটা অশিক্ষিত মানুষকে ভয় পাই না। উনি কাকে চমকাচ্ছেন? আমার শিক্ষা, সংস্কৃতি রয়েছে। উনি আমার শিক্ষা, পারদর্শীতা, সংস্কৃতির ধারে কাছেও আসেন না। যা আছে উনি বের করুন, আমারও যা আছে বের করব। আপনি তো মমতার ভাল মেয়ে ছিলেন (প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই) আমায় উনি বরাবরই ভাল বলেছেন। কোনও দিন খারাপ বলেননি। যতদিন ওঁর কাছে কাজ করেছিলাম, ভালই বলেছেন, সার্টিফিকেটও দিয়েছেন। একটা দিনও দেখাতে পারবেন না, যে উনি খারাপ বলেছেন। যেদিন আমি চাকরি ছাড়লাম, বললাম তোমার অধীনে চাকরি করব না, ব্যস, তারপর থেকেই খারাপ হয়ে গেলাম। মমতার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আর নেই, কোনও অনুতাপ রয়েছে? না, না, কোনও অনুতাপ নেই। আমার বরং মনে হয়, ওঁর সঙ্গে কাজ না করলেই ভাল হত। জানেন তো, তিন রকমের লোক হয়। একটা, ভগবানের লোক, তাঁদের কাছে আমরা আশীর্বাদ পাই। আরেকটা হল মানুষের মতো লোক, যে ভগবানের মতো না হলেও মোটামুটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। আরেক রকমের লোক হল রাক্ষস, যে একজনের থেকে কাজও নেবে, আবার তাকেই খেয়েও ফেলবে। ভোটের দিন খবরের শিরোনামে শুধুই ভারতী ঘোষ! কী বলবেন? আমি একজন প্রার্থী, অথচ আমার জন্য সব জায়গায় পাথর রাখা ছিল। হাজার খানেক পাথর রাখা ছিল। আগে থেকে পাথর জোগাড় করেছিল আমাকে মারবে বলে। যেখানে লোকে পাথর নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে পুলিশ কেন আমাকে গাড়ি থেকে নামাল? ভোটের দিন একজন প্রার্থীকে বুথের ভিতরে ঢুকতে দেবেন না! এজেন্টকে ঢুকতে দেবেন না! পাথর মারবেন! আমায় যে পাথর মেরেছে, এটা তো ভোট লুঠ। ভোট লুঠ করে জেতা যাবে? দেব বলেছেন, আপনি খুব ভাল অভিনেত্রী। গোটাটাই অভিনয়। ও একটা অশিক্ষিত, অমানুষ। অশিক্ষত বলেই সংসদে গিয়ে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কিছু বলতে পারেনি। ওই দলটার সঙ্গে থেকেই অমানুষ হয়েছে। যারা বোমা মারে, পাথর ছোড়ে, মানুষ মারে, তারা অমানুষই। তারা কী বলল না বলল, কিছু যায় আসে না। আমার একটা গাড়ি ছিল, বাকি দশটা গাড়ি সংবাদমাধ্যমের ছিল। নির্বাচন কমিশনের কী ভূমিকা ছিল? চোখ-কান বন্ধ করে ভোট করাতে এসেছে (গলায় তীব্র ক্ষোভ স্পষ্ট)। ঘাটালে জিতছে কে? আমিই জিতব। ওকে (দেবকে) কে ভোট দেবে? ও কি কোনওদিন ঘাটালে গিয়েছে? ঘাটালের মানুষের মুখ দেখেছে? ঘাটালের বন্যার সময় গেছে? কোনও উন্নয়ন করেছে? ভোটভিক্ষা করতে যায় লজ্জা করে না! সুত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এন এ/ ১৭ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2LMXaiZ
May 16, 2019 at 08:58PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
মাওবাদী হানায় মৃত তথা নিখোঁজ ৪ জনের পরিবারকে নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
07 Oct 20200টিকলকাতা, ৭ অক্টোবর- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারের ঘোষণা মতোই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে মাও...আরও পড়ুন »
ডেমোক্রেসির বদলে বাংলায় মমতাক্রেসি চলছে
06 Oct 20200টিকলকাতা, ৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মণীশ খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
06 Oct 20200টিকলকাতা, ০৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ব...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বারাকপুর
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে খুনের ঘটনায় সোমবার সকাল থেক...আরও পড়ুন »
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লা নামে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.