কলকাতা, ২৪ মে- ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসানসোল লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন। কিন্তু সেখানে বিজেপির প্রাথী সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন সুমিত্রা সেনের কন্যা। বৃহস্পতিবার যখন খবর আসছিল তিনি বাবুলের চেয়ে পিছিয়ে, তখন রাজনীতির ছাড়ার ইঙ্গিত দেন মুনমুন। আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, জয় দেখতে বুধবার দুপুরেই কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিলেন মুনমুন। সঙ্গে ছিল পছন্দের বেশ কয়েকটি শাড়ি। উঠেছিলেন এক মাস চার দিনের প্রচারের আস্তানা হাইওয়ে লাগোয়া ওই হোটেলে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা। আসানসোলের ভোট গণনা কেন্দ্রে সপ্তম রাউন্ডের গণনা চলছে। হাইওয়ে লাগোয়া চার তারকা হোটেলে হঠাৎ তৎপরতা। জানা গেল, তিনি হোটেল ছাড়ছেন। টি-শার্ট, ট্রাউজ়ার্স পরে ছুটতে থাকা তাঁর নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ম্যাডামজির মন খুব খারাপ। এখনই কলকাতায় ফিরবেন। কয়েক মিনিটেই বিধ্বস্ত চেহারায় সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন মুনমুন সেন। নীলপেড়ে আকাশি শাড়িটার আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে বললেন, আই অ্যাম জাস্ট ফিনিশড। আর রাজনীতি করব না। মেয়েরা ফোন করে বলল, ওখানে বসে কী করছ? এখনই কলকাতায় ফিরে এসো। বৃহস্পতিবার সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বেলা যত গড়িয়েছে, ততই দেশ জুড়ে বিজেপি-বিরোধী শক্তির ভরাডুবির ছবি স্পষ্ট হয়েছে। রাজ্যেও তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে নরেন্দ্র মোদির দল। বিজেপির চেয়ে বেশি আসন পেলেও আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে পারেনি তৃণমূল। ২০১৪ সালে বাবুল সুপ্রিয় এই কেন্দ্র থেকে জেতার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যার উপরে আস্থা রেখেছিলেন, সেই মুনমুন অবশ্য এদিন বেলা ১২টাতেও বলেছিলেন, এখনও বলছি, আমিই জিতব। ততক্ষণে অবশ্য প্রতি রাউন্ড ভোট গণনার পরে মুনমুনের থেকে জয়ের ব্যবধান বেড়েই চলেছে বাবুলের। আমিই জিতবর পাশাপাশি মুনমুনকে স্বগতোক্তি করতেও শোনা যায়, তৃণমূলের লোকেরা যে আমায় বলেছিল আমিই জিতব! তবু বাবুল কেন এত ভোট পাচ্ছে? প্রথম দুরাউন্ডেই প্রধান প্রতিপক্ষ বাবুল বেশ খানিকটা লিড নিয়েছেন দেখে দ্রুত গণনা কেন্দ্র ছাড়েন সুচিত্রা-কন্যা। আসানসোলের এক দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে দেন তিনি। তবে মিনিট তিরিশের মধ্যেই এক দলীয় নেতার কাছে আসা গুরুত্বপূর্ণ ফোনে ফের গণনা কেন্দ্রের দিকে রওনা দেন মুনমুন। সেখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে বেরিয়ে আসার সময় দৃশ্যতই বিব্রত ও বিধ্বস্ত দেখায় তাকে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাউকে কাউকে তিনি বলতে থাকেন, দেখব, তুমি এখানে কী করে থাক! একটা কাজও ঠিক করোনি তোমরা। আর দলীয় এক নেতার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলেন, এক মাস চার দিন ধরে এত খাটলাম, মানুষ বুঝল না! বেলা ৩টায় হার প্রায় নিশ্চিত বুঝে আসানসোল ছাড়ার মুখে মুনমুন বলেন, মমতা ব্যানার্জিকে ঢেলে সব সাজাতে হবে। উনি একা লড়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার নীচের লোকগুলো কেউ ভাল নয়। ওরাই আমায় হারিয়ে দিয়েছে। তিনি জানান, তার মতো অভিনেত্রীকে সকলেই দলে চেয়েছিল। তবে তিনি যাননি। বললেন, প্রণব মুখার্জিও আমাকে ডেকেছিলেন। আমি রাজনীতির লোক নই। তবে রাজনীতিতে এসেছিলাম মমতা ব্যানার্জির জন্য। এর পরে আমায় ডাকলে আর পাবে না। সকালের লাল টিপ তখন কপালে নেই। কয়েক বিন্দু চোখের জলে চোখের গাঢ় কাজলও হাল্কা। হোটেলের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, দিদি, হার-জিত তো আছেই। গাড়িতে ওঠার মুখে গেটে দাঁড়ানো হোটেলকর্মীদের ভিড়ের দিকে হাত নেড়ে সেই দিদি বললেন, তোমরা সবাই ভাল থেকো। খুব মিস করব। সূত্র: বিডি প্রতিদিন এনইউ / ২৪ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2EupS2a
May 24, 2019 at 01:23PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top