লন্ডন, ০৩ জুন- দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২ জুন) রাতে এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি এ অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা এবং জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য টাইগারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২১ রানে হারিয়েই শুভসূচনা করেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের করা ৩৩০ রানের জবাবে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৯ রানে থেমে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস। ৩৩১ রানের বিশাল লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন কুইন্টন ডি কক আর এইডেন মার্করাম। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে প্রায় জীবন পেয়ে গিয়েছিলেন ডি কক। উইকেটের পেছনে চোখের পলকে ক্যাচটা ধরতে পারেননি মুশফিক। তবে ওই বলেই কাজের কাজটা করেছেন টাইগার উইকেটরক্ষক। প্রান্ত বদল করতে গিয়েছিলেন প্রোটিয়া দুই ওপেনার। ক্যাচ মিস হয়ে পেছনে চলে যাওয়া বলটি দৌড়ে গিয়ে কুড়িয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন মুশফিক। তাতেই থামে ৩২ বলে ডি ককের ২৩ রানের ইনিংসটি। এরপর ৫৩ রানের আরেকটি জুটি মার্করাম আর অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের। ২০তম ওভারে এসে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মার্করামকে বোল্ড করেন সাকিব। প্রোটিয়া ওপেনার তখন ৫৬ বলে ৪৫ রানে। ১০২ রানে ২ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ৫২ বলেই করে ফেলেছিলেন ৬২ রান। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তাকে বোকা বানান মেহেদী হাসান মিরাজ। ডাউন দ্য উইকেটে তাকে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ডু প্লেসিস। অধিনায়ককে ফেরালেও চতুর্থ উইকেটে থিতু হয়ে বসেছিলেন ফন ডার ডুসেন এবং ডেভিড মিলার। দুজন মিলে গড়ে ফেলেন ৫৫ রানের জুটি। ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে ভয়ঙ্কর ডেভিড মিলারকে মেহেদী মিরাজের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন মোস্তাফিজ। আউট হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৩৮ রান করেন মিলার। তার বিদায়ে দায়িত্ব বর্তায় ডুসেনের কাঁধে। তবে সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৮ বলে ৪১ রানের বেশি করতে পারেননি ডুসেন। দুই সেট ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। তবু তখনো বাকি ছিলো অনেকটা কাজ। কারণ পরীক্ষিত অলরাউন্ডার জেপি ডুমিনির সঙ্গে উইকেটে ছিলেন কার্যকরী ব্যাটিং করতে পারা আন্দিল ফেহলুখায়ো। তবে দুজন মিলে ভয়ের কারণ হয়ে ওঠার আগেই ৪৩তম ওভারে ফেহলুখায়োর উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। একা বনে যান ক্রিস মরিস, তাকে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন আরেক পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস মরিস। দুজন মিলে খেলেন ৩ ওভার, তবে ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি। ৪৬তম ওভারে নিজের শেষ স্পেলে বোলিং করতে এসে মরিসের উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজ। তখনো অন্য প্রান্তে অপরাজিত জেপি ডুমিনি। শেষের ৪ ওভারে তাদের জয়ের জন্য বাকি ছিলো ৫৫ রান, হাতে ছিল ৩টি উইকেট। বাংলাদেশের দুই ডেথ স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং মোস্তাফিজের জন্য ২৪ বলে ৫৫ আটকানো ছিলো বেশ সহজ কাজ। যা তারা করে দারুণভাবেই। তবে ছেড়ে কথা বলেননি ডুমিনিও। দলের একমাত্র আশার প্রতীক হয়ে তিনি লড়াই করেন একাই। বিশেষ করে সাইফের করা ৪৭তম ওভারে জোড়া বাউন্ডারিতে ১১ রান নিয়ে টাইগার সমর্থকদের মনে ভয়ই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন এ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। কিন্তু ৪৮তম ওভারের প্রথম বলেই তাকে সরাসরি বোল্ড করে পথের শেষ কাঁটাটাও তুলে নেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। আউট হওয়ার আগে ৩৭ বলে ৪৫ রান করেন ডুমিনি। ২৮৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় প্রোটিয়াদের। শেষের আনুষ্ঠানিকতা সারতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি সাইফ-মোস্তাফিজদের। প্রোটিয়াদের অলআউট করতে না পারলেও ৩০৯ রানে আটকে রেখে ২১ রানের দারুণ জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এর আগে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমের জোড়া হাফসেঞ্চুরি আর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটে ৩৩০ রানের হিমালয়সম সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে টাইগাররা। শুরুটা করে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকার। প্রোটিয়া বোলিং লাইনআপকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন তারা। সাতের ওপর রান তুলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন এই যুগল। শেষ পর্যন্ত নবম ওভারে বোলিং পরিবর্তন করেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস, বল তুলে দেন আন্দেলু ফেহলুখায়োর হাতে। ফেহলুখায়ো অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন প্রথম ওভারেই। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তামিমকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান এই পেসার। ২৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৪ রান করে আউট হন তামিম। তামিম-সৌম্যর উদ্বোধনী জুটিটি ছিল ৬০ রানের। এ নিয়ে টানা পঞ্চম ম্যাচে ওপেনিংয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি গড়ে বাংলাদেশ। আজকের (রোববার) ঝড়ো ওপেনিং জুটিতে সৌম্যর অবদানই বেশি। ৬০ রানের মধ্যে ৪৬ রানই এসেছে তার ব্যাট থেকে। শেষ পর্যন্ত বিধ্বংসী সৌম্যকেও বাউন্সারে পরাস্ত করে প্রোটিয়ারা। ক্রিস মরিসের বলটি গ্লাভসের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে। ৩০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৪২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন সৌম্য। ৭৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪১ বলে তারা গড়েন ১৪২ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যেটি বাংলাদেশের সেরা জুটির রেকর্ড। দলীয় ২১৭ রানের মাথায় সাকিবকে বোল্ড করেন ইমরান তাহির। ৮৪ বলে ৮ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৭৫ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বড় এই জুটি ভাঙার পর ২১ বলে ২১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলে তাহিরেরই বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ মিঠুন। এরপর কাটায় কাটায় দলের ২৫০ রান হওয়ার পর মুশফিকও আউট হন। ৮০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে টাইগার উইকেটরক্ষক করেন ৭৮ রান। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেক হোসেনের ৪১ বলে ৬৬ রানের ঝড়ো জুটি। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে ২০ বলে ২৬ রান করে আউট হন মোসাদ্দেক। তবে পরের সময়টায় ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৩ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৪৬ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন আন্দেলো ফেহলুখায়ো, ইমরান তাহির আর ক্রিস মরিস। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/০৩ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2wIk0OF
June 03, 2019 at 05:01AM
03 Jun 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top