লন্ডন, ৩০ জুন- বিশ্বকাপ যত পরিণতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে তিনটি প্রশ্ন তত প্রবল হচ্ছে। ১. টিম বাংলাদেশ কি সেমিফাইনাল খেলতে পারবে? দুই প্রবল প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তানকে হারিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয়া কি আদৌ সম্ভব হবে? ওই দুই ম্যাচ জিতলেও কি সেমিতে খেলা নিশ্চিত হবে? ২. আচ্ছা! অধিনায়ক মাশরাফি কি বিশ্বকাপেই অবসরের ঘোষণা দেবেন? আগামী ৫ জুলাই লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই ক্রিকেটকে গুডবাই জানাবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? না কি দেশে ফিরে শেরেবাংলায় হাজারো ভক্ত-সমর্থকের সামনেই দেবেন বিদায়ের ঘোষণা? ৩. কোচ স্টিভ রোডসের ভাগ্যে কি ঘটবে? যুক্তরাজ্যে বিশ্বকাপ শেষে এ ইংলিশ কোচেরও ইতি ঘটবে? প্রথম প্রশ্নর উত্তর পেতে অপেক্ষায় থাকতে হবে অন্তত ২ জুলাই ভারতের সাথে ম্যাচ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। পুরোপুরি না হলেও সেদিনই হয়তো ধারণা মিলবে। বোঝা যাবে টাইগাররা আদৌ সেমিতে খেলতে পারবে কি না? মোটকথা, মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিকদের শেষ চারে জায়গা পাওয়া কিছু যদি কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে। এ কারণে তার উত্তর পেতে সময়ের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সময়ই বলে দেবে আসলে কি হবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন মানে, মাশরাফির অবসরের ঘোষণা সম্ভবত এখন আসছে না। বোর্ড বিষয়টা পুরোপুুরি মাশরাফির ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত মাশরাফির। তিনি যখন ইচ্ছা তখন অবসর নেবেন। তবে বিশ্বকাপই হয়তো তার ক্যারিয়ারের শেষ আসর বা ম্যাচ নয়। মাশরাফির কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি আরও কিছুদিন খেলতে চান। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। তবে অবসরের ঘোষণাটি সম্ভবত দেশের মাটিতে গ্যালারি ভরা ভক্ত-সুহৃদ, শুভানুধ্যায়ীর সামনেই দিতে চান নড়াইল এক্সপ্রেস। বাকি থাকলো কোচ স্টিভ রোডস প্রসঙ্গ। গুঞ্জন শুরু হয়েছে, বিশ্বকাপের পর তাকেও আর দেখা যাবে না হয়তো টাইগারদের ডাগআউটে। এ ইংলিশেরও এটাই নাকি শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। মানে ৫ জুলাই লর্ডসে পাকিস্তানের সাথে ম্যাচ হতে পারে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে স্টিভ রোডসের শেষ ম্যাচ! কেউ কেউ হয়তো হিসাব মিলিয়ে ফেলেছেন। ভাবছেন স্টিভ রোডস উপাখ্যান তাহলে শেষের পথে! হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর প্রথমে খালেদ মাহমুদ সুজন, পরে রিচার্ড হ্যালসল আর কোর্টনি ওয়ালশকে ভারপ্রাপ্ত কোচ বা টেকনিক্যাল উপদেষ্টা করে দল চালানোর চেষ্টা হয়েছে। সে অর্থে সাফল্যের দেখে মেলেনি তখন। তাই একজন ভালো মানের বিদেশি কোচের প্রয়োজন ছিল। তার ওপর ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। বিসিবিও একজন ইংলিশকেই জাতীয় দল পরিচালনা-পরিচর্যা আর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিতে ছিল আগ্রহী। সে হিসাব কষেই আসলে ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডসকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া। তিনি কতটা যোগ্য, দক্ষ? তার ক্যারিশমা কেমন? কি পারেন, কি জানেন-বোঝেন? ক্রিকেটারদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কতটা? প্রতিপক্ষ, পরিবেশ-প্রেক্ষাপট আর কন্ডিশন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা নিয়ে গেমপ্ল্যান আঁটার কাজটি কত ভালো পারেন?- সেসব বিষয়ই ছিল দেখার। একদম ভেতরের খবর, এর কোনোটাতেই তিনি খুব ভালো নম্বর পাচ্ছেন না। ক্রিকেটার, কোচ, ক্রিকেট অপারেশন্স এবং বোর্ড পরিচালকদের মূল অংশ এক কথায় স্টিভ রোডসের ওপর সন্তুষ্ট নন। কোচ হিসেবে তার কাছে যা প্রত্যাশা ছিল, তিনি তা মেটাতে পারেননি। একজন ইংলিশ হয়েও ইংলিশ আবহাওয়া ও উইকেট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই কোচের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে উইকেটের চরিত্র-গতি প্রকৃতি না বুঝে ব্যাটসম্যানদের ভুল বার্তা দিয়ে দলের বিপদ ডেকে এনেছেন। ওভালের ওই ম্যাচের উইকেট ছিল ২৭০-২৮০ রানের। যেহেতু ওই মাঠে আগের ম্যাচে বাংলাদেশ ৩৩০ রান করেছিল, তাই স্টিভ রোডস ভেবেছিলেন পরের ম্যাচেও পিচও বুঝি তেমন! তাই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধরে না খেলে চালিয়ে খেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা বুমেরাংই হয়েছিল। হাত খুলে মারতে গিয়ে ওয়েল সেট রিয়াদ আর মিঠুন চলে আসার পর বাংলাদেশ ইনিংস আটকে যায় ২৪৪ রানে। খেলা শেষে বোঝা গেছে, ওই চালিয়ে খেলাই ছিল বড় ভুল। একটু দেখে ও ধরে খেললে নির্ঘাত আরও ২৫-৩০ রান করা যেত। খেলা শেষে অধিনায়ক মাশরাফিও ৩০ রানের আক্ষেপই করেছিলেন। বলেছিলেন এটা ২৭০ রানের পিচ। ওই রান করতে পারলে হয়তো আমরাই জিততাম। এখনো ওই হারটা পোড়ায় পুরো দল ও দেশকে। বাংলাদেশ যদি সেমিফাইনালে পৌঁছে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। যদি শেষ চারে জায়গা না হয়, তাহলে নিউজিল্যান্ডের সাথে হারটি অনেক বড় হয়ে দেখা দেবে। ইতোমধ্যে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের সাথে জিততে পারলে বাংলাদেশের পয়েন্ট থাকতো ৯। তখন ভারত-পাকিস্তান দুই দলের সাথে জয় এত অত্যাবশ্যক হতো না। একটি জিতলেও হয়তো সেমিতে খেলার ভালো সম্ভাবনা থাকতো। শুধু ওই ম্যাচে ভুল বার্তা দিয়ে দলের সম্ভাবনা নষ্ট করার জন্যই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্টিভ রোডসের ওপর সে অর্থে কেউই সন্তুষ্ট নন। বিভিন্ন পরিচালক ও দলের সাথে সম্পৃক্তদের কথা বলে আর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোচ স্টিভ রোডসের পারফরম্যান্সে সে অর্থে কেউই সন্তুষ্ট নন। এক কথায় তিনি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তাই বলে তিনি যে আর বাংলাদেশের কোচ থাকছেনই না বা থাকবেন না- এমন নিশ্চয়তাও কিন্তু নেই। শেষ খবর, আসলে পেন্ডুলামের মতো দুলছে কোচ স্টিভ রোডসের ভাগ্য। সেটা নির্ভর করছে বাংলাদেশ শেষ দুই ম্যাচে কি করে তার ওপর? কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বরাবর কার্যকর ও বড়সড় ভূমিকা রাখা বিসিবির প্রভাবশালী পরিচালক জালাল ইউনুস, জাতীয় দল পরিচালনা, পরিচর্যা আর তত্ত্বাবধানের সমুদয় দায়-দায়িত্ব যে স্ট্যান্ডিং কমিটির ওপর, সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান এবং আরেক ডাকসাইটে পরিচালক ও বিশ্বকাপ টিমের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোচের বিষয়ে এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মানে রোডস বিশ্বকাপের পরপরই বাংলাদেশের কোচ থাকবেন না কিংবা তাকে আর রাখা হবে না- এমন কোনো সিদ্ধান্ত পাকা হয়নি। আরও একটি বিশেষ কারণে বোর্ড বিশ্বকাপ চলাকালীন কোচ ইস্যুতে কোনোরকম বক্তব্য দিতে নারাজ। কারণ, এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই ২০ বছর আগে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা বাংলাদেশের কোচের পদ থেকে শেষ ম্যাচের আগে অপসারিত হয়েছিলেন তখনকার কোচ গর্ডন গ্রিনিজ। ওই ক্যারিবীয় গ্রেটকে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের রাতে অব্যাহতি পত্র দেয়া হয়েছিল। চোখের পানিতে বিদায় নিয়েছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ। এবার বোর্ড সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। জালাল ইউনুস, আকরাম খান আর খালেদ মাহমুদ সুজনের সোজাসাপটা কথা, বিশ্বকাপ চলাকালীন কোনো সিদ্ধান্তই নেয়া হবে না। হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাতে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। হয়তো পড়বেও। আমরা কোচ ইস্যু নিয়ে এখন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া তো বহু দূরে, তা নিয়ে সেভাবে আলাপ আলোচনাও করছি না। করতে চাইও না। দেশে ফিরে অবস্থা বুঝে সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভেতরের খবর, আসলে বোর্ড অপেক্ষায় টাইগাররা কোথায় গিয়ে থামে, সেটা দেখার? তাদের শেষটা কেমন হয়? সেমিফাইনালে উঠতে পারলে স্টিভ রোডসকে অব্যাহতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এই ইংলিশ কোচ টিকে যাবেন। হয়তো আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কোচের দায়িত্বে থাকবেন। তখন তার সাথে করা ২০২০ সালের চুক্তিই বহাল থাকবে। সেমিফাইনালে নাও উঠতে পারলেও যদি ভারত-পাকিস্তানের কোন এক দলকে হারাতে পারে, তাহলেও হয়তো এ যাত্রা বেঁচে যেতে পারেন রোডস। তখন সবাই বলবে, সেমিফাইনাল খেলতে না পারলে কি হবে- তিনটি বড় শক্তিকে তো হারিয়েছে বায়লাদেশ, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। এমন ভালো ফলাফলের পর কোচকে সরিয়ে দেয়া কেন? এমন একটা রব উঠবে চারদিকে। বোর্ডের নীতিনির্ধারকরা সেই সময় ও প্রেক্ষাপট দেখে- এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে স্টিভ রোডসের থাকা না থাকা আসলে নির্ভর করছে মাশরাফি বাহিনীর শেষ দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স ও ফলের ওপর। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/৩০ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2KMVk0k
June 30, 2019 at 05:00AM
30 Jun 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top