লন্ডন, ১৭ জুন- বাংলাদেশের জন্য কালকের (আজ) ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় একটি পয়েন্ট হাতছাড়া হয়ে গেছে। শ্রীলংকার বিপক্ষে আমাদের সমূহ সম্ভাবনা ছিল। যে কটা ম্যাচ টার্গেটে ছিল শ্রীলংকার এদের একটি। বাংলাদেশ চার ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্টও তিন। বাংলাদেশ এই ম্যাচ জিততে পারলে পাঁচ পয়েন্ট হবে। তখন নতুন করে একটা সম্ভাবনা দেখা দেবে। কোনো সন্দেহ নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজি ভালো দল। খুবই ভালো অলরাউন্ডার আছে তাদের। ভালো স্লগ ব্যাটসম্যান আছে, যারা পাওয়ার প্লেতে বড় শট খেলতে পারে। আবার বেশ কিছু দুর্বলতাও আছে। ৫০ ওভার খেলার মতো ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে নেই। কোনো একটা দিনে হয়তো চারজন ব্যাটসম্যান ৫০ ওভার খেলে ফেলবে; কিন্তু নিয়মিত নয়। কারণ তাদের দলে টি২০ ফরম্যাটের খেলোয়াড়ই বেশি। স্টেডি খেলোয়াড় খুব কম, যারা কি-না টপঅর্ডারে নেমে ২০-২৫ ওভার খেলে দেবে। এভিন লুইস, ক্রিস গেইল কত দিন আগে ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলেছে আমার জানা নেই। তার মানে, শুরুতে উইকেট ফেলে দিতে পারলে চাপ তৈরি করা সম্ভব হবে। শিমরন হেটমেয়ার, শাই হোপ মিডলঅর্ডারে অ্যাঙ্কর রোল প্লে করতে পারে। এই দুজনকে তাড়াতাড়ি আউট করতে পারলে চাপে ফেলা যাবে। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান পুরান পজেটিভ খেলে; কিন্তু তাড়াহুড়ো করে। সেক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ ওভারের মধ্যে চারটি উইকেট ফেলতে পারলে ব্যাটিং লাইনআপে বিশাল ফাঁকা হয়ে যাবে। তখন নামবে জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেলরা। তারা কিন্তু ১০ ওভারের খেলোয়াড়। শটস খেলবে, ক্লিক করলে রান পাবে, না লাগলে আউট হবে। ৩০ ওভার পর্যন্ত টিকে থাকতে তারা নিজেদের তৈরিও করেনি। ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডে এমনকি বাংলাদেশ দলেও দেখবেন ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানটা খুব ভালো। কারণ ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানকে টেল এন্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে ইনিংস লম্বা করতে হয়। এই জায়গাগুলোতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দুর্বলতা আছে। খেলোয়াড়রা মাঠে পরিককল্পনামতো খেলতে পারলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিনশর কম রানে বেঁধে ফেলা সম্ভব হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আমরা আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছি। সেখানে দেখেছি ওদের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য নেই। এক বাঁহাতি স্পিনার অ্যাশলে নার্স, বাকিরা সাধারণ পেস বোলার। এদিক থেকে আমাদের স্পিনাররা যথেষ্ট ভালো। তারা যদি ভালো বল করে, আশা করি ম্যাচ জেতা সম্ভব হবে। প্রতিটি দলেই দুটি করে ভালো ফাস্ট বোলার আছে- পাকিস্তানের আমির, ওয়াহাব; ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার; ইংল্যান্ডের মার্ক উড, জোফরা আর্চার, লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট; নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি; অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, কেন রিচার্ডসন- তারা সবাই কিন্তু গতি বোলার। এই জায়গায় আমাদের দলে একটু ঘাটতি রয়েছে। পেস বোলার আছে, কিন্তু ১৪০ বা এর চেয়ে বেশি গতির বোলার নেই। যেহেতু গতি নেই সেক্ষেত্রে লাইন-লেন্থের ওপর বোলিং করে সফল হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। গ্লেন ম্যাকগ্রা, কপিল দেব কিন্তু লাইন-লেন্থের ওপর বল করে সফল হয়েছেন। পৃথিবীর সব জায়গায় ভালো বল করতেন উনারা। কারণ হলো, নিখুঁত বোলিং করতে পারতেন তারা। মাশরাফিও কিন্তু নিখুঁত বোলিং দিয়েই এতদূর এসেছে। আমাদের বোলাররা যদি লাইন-লেন্থ ধরে ভালো বল করতে পারে; সেটাই হবে ট্রাম্প কার্ড। জোড়াজুড়ি করতে গেলেই বরং ভুল হবে। সুন্দর লাইন-লেন্থে বল করলে উইকেট কম পেলেও রান চেক দেওয়া যায়। ভালো বল হলে ব্যাটসম্যানরা চাইলেই খেলতে পারে না। তখন মারতে গিয়ে আউট হবে। হ্যাঁ, আমাদের দলের ব্যাটিংয়ে কিছু ঘাটতি রয়েছে। প্রতিপক্ষ দেখে খেলতে পারলে ওই জায়গাতেও সফল হওয়ার সুযোগ থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৩৩০ রান করে জিতেছি। ওটাই ওয়ানডেতে আমাদের সর্বোচ্চ স্কোর। পরের দুটো ম্যাচ নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে হেরেছি। দুটো দলই কিন্তু এই টুর্নামেন্টের বড় দল। তাদের বিপক্ষে আমরা কিছু ভুল করেছি, যে কারণে রানটা বড় হয়নি। এর পরও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনেক ইতিবাচক আছে- সাকিব সেঞ্চুরি করেছে। সাকিব যদি ১২১ করতে পারে মুশফিক, তামিম, সৌম্য কেন পারবে না। সামর্থ্য আছে কিন্তু ক্লিক করছে না। নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ড ভালো বোলিং এবং ভালো ফিল্ডিং করে চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছে, সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানরাও ভুল করে উইকেট দিয়ে এসেছে। কালকের (আজ) দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটা জিততে হলে সমন্বিত পারফরম্যান্স করতে হবে। যদিও কন্ডিশন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ওগুলো কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী পরিকল্পনা করলে ভালো করবে বাংলাদেশ। বাইরে থেকে যতই পরিকল্পনা করেন, হোম ওয়ার্ক করেন, তাতে কোনো লাভ হবে না। মাঠে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে সব কিছু করতে হবে। চাপের কিছু হয়নি। বরং পাওয়ার অনেক কিছু আছে। চাপ নিলে ভালো খেলতে পারবে না। আমি বলব, শান্ত থেকে ক্রিকেটটা উপভোগ করতে। একটা দল জিতবে, একটা দল হারবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যত ঠাণ্ডা থেকে, চাপমুক্ত থেকে খেলতে পারবে, পারফরম্যান্স ততই ভালো হবে। ম্যানেজমেন্টের কাজ হলো খেলোয়াড়দের চাপমুক্ত রাখা। খালেদ মাসুদ পাইলট। সূত্র:সমকাল এনইউ / ১৭ জুন



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/31CarPu
June 17, 2019 at 05:57AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top