লন্ডন, ২৫ জুন- আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব প্রথমে কথা বললেন। ইংরেজি আর পশতু ভাষায় চললো মিনিট ১০-১২র প্রেস কনফারেন্স। প্রায় সব প্রশ্নের জবাবেই তার ঘুরে ফিরে দুই থেকে তিনটি সংলাপ, উইকেট স্লো, তবে এই পিচে ২৬২ রান চেজ করার মত। আমরা পারিনি। সাকিব দারুণ বল করেছে। আমরা ৩০ রান বেশি দিয়েছি দূর্বল ফিল্ডিং আর ক্যাচ মিসের কারণে। ঠিক তার কথা শেষেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন সাকিব আল হাসান। চোখ-মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না কিছুক্ষণ আগে তার প্রায় একার অলরাউন্ডিং পারফরমেন্সে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছে। তিনি একদম নির্বিকার, যেন কিছুই হয়নি। শরীরী অভিব্যক্তি আর কথাবার্তা স্পষ্ট বলে দিল, আমরা জানতাম জিতবো, জিতেছি। সেটা কেন? তার ব্যাখ্যা মিললো কথায়। প্রথমেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিলেন, বিশ্বকাপের অন্য ভেন্যুর মত এটা ৩০০-৩৫০ রানের উইকেট না। পিচ অত ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি না। তাই তো প্রথম কথাতেই পরিষ্কার করে দিলেন, প্রথম ইনিংস শেষেই তারা জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ছিলেন। সাকিব বলেন, জানতাম স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রান হয়েছে। উইকেটটা এমন ছিল যে এখানে কোন দলের পক্ষেই ৩০০-৩৫০ রান করা সম্ভব ছিল না। ওদের ৩ জন কোয়ালিটি স্পিনারদের আমরা ভালভাবেই সামলেছি। সে কারণেই আমরা ২৬২ রান করতে পেরেছি। আমাদের নুন্যতম লক্ষ্য ছিল ২৪০। সেই সাথে আমরা পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করারও টার্গেট নিয়ে নেমেছিলাম। লক্ষ্য ছিল ৫০ ওভার পুরো খেলে অন্তত ২৪০র ঘরে ঘরে পা রাখা। তিনি আরও বলেন, আর আমরা ধরেই নিয়েছি এর বেশি হলে সেটা হবে বোনাস। আমার মনে হয় ঠিক সেটাই আমরা করতে পেরেছি। বরং প্রত্যাশার চাইতেও ২৫ রান আমরা বেশি করেছি। উইকেটটা সহজ না। তাই ডট বল করে ওদের চাপে রাখতে চেয়েছি। এবং সেটা পেরেছি। চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। এবার সেরা পারফরম্যান্স। অনেক রেকর্ড আর সাফল্যের নতুন নতুন মাইল ফলক স্পর্শ করলেন, অনুভূতি কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে সাকিবকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে আলাদা মনে হলো। উত্তরের ভাষা আর অভিব্যক্তি বলে দিল, এবারের বিশ্বকাপে ভাল করতে মুখিয়ে ছিলেন। এজন্য প্রচুর ঘামও ঝরিয়েছেন। ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন। ওজন কমানো থেকে শুরু করে নিজেকে আরও ফুরফুরে, ঝরঝরে, তরতাজা করে তুলেছেন। রান ক্ষুধা বেড়েছে বহুগুণে। ভাল করার ইচ্ছেও প্রবল হয়েছে। তাই চোখ মুখে রাজ্যের খুশি নিয়েই জবাব দিলেন, ভীষণ সন্তুষ্ট। আসলে কোন টার্গেট বা ইচ্ছে পূরণ হলে ভাল তো লাগেই। আমি আজকে যে কটা সাফল্যের ফলক স্পর্শ করেছি, সেগুলো জানা ছিল। আমার টার্গেটও ছিল তা ছোঁয়া। সে কারণেই ভাল লাগাটা একটু বেশি ও অন্যরকম। এছাড়া আমার পারফরমেন্স দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান ও ভূমিকা রাখছে, সেটাও এক ধরনের ভাল লাগা। দলের জন্য যেমন এটা প্রয়োজন ছিল তেমনি গুরুত্বপূর্ণও ছিল। সৌভাগ্যবশত আমি এটা করতে পেরেছি এবং সেজন্য খুবই খুশি। যদিও সামনের দিনগুলোয় অনেক কিছুই ঘটতে পারে, তারপরও খালি চোখে ভারত, নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার সেমিতে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত। চার নম্বর দল কে হবে?- তা নিয়েই রাজ্যের জল্পনাকল্পনা। এ মুহূর্তে সেমিফাইনালে খেলার পথে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ইংলিশদের সামনে তিনটি ম্যাচ বাকি। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর ভারত। আর বাংলাদেশের খেলা আছে দুই প্রতিবেশি ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে। সাদা চোখে মনে হচ্ছে হিসেব বুঝি পরিষ্কার। কেউ কেউ ভাবছেন ইংল্যান্ড ঐ তিন ম্যাচের একটিতে জিতে গেলে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানকে হারালেও লাভ হবে না। ইংলিশরাই চলে যাবে সেমিতে। সে সমীকরণ ঠিক নয়। এই কারণে ঠিক নয় যে, তখন নেট রানরেট আর অন্য দলগুলোর খেলার ফলাফলকেও মানদন্ড ধরতে হবে। তারপরও ভাবা হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানকে হারাতে পারলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা থাকবে অনেক। এ কারণেই ঐ দুই ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ। আর সবার মত সাকিবও জানেন ঐ দুই খেলার গুরুত্ব কতটা? তাইতো প্রেস মিটে সাকিবের উচ্চারণ, আমাদের সামনের ম্যাচ দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি ভারতের সঙ্গে। ওরা টপ সাইড। জেতা সহজ হবে না। কিন্তু এটা ঠিক আমরা আমাদের সেরাটা দিব। বিশ্বকাপে ভারতকে অভিজ্ঞতা রয়েছে তার দলের, সেটা ভারতের বিপক্ষে ভাল করায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সাকিব বলেন, অভিজ্ঞতা সহায়ক শক্তি। তবে শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। কিন্তু সেটাই শেষ না। ভারত সেরা দল। জিততে হলে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। তবে আমাদের সামর্থ্য আছে। এবার আইপিএলে সেভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। কেউ কেউ মনে করছিলেন সাকিব বুঝি এবারের বিশ্বকাপে ভাল খেলে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে চান। একজন প্রশ্নও করে বসলেন, এবার আইপিএলের পরে বিশ্বকাপে কি আপনার প্রমাণের কিছু ছিল? এবার সাকিব একটু অন্যরকম ম্যুডে জবাব দিলেন, না না। আমার প্রমাণের কিছু ছিল না। আমার বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য যা যা দরকার আামি তা করেছি। ওজন কমানো থেকে শুরু করে, ফিটনেস বাড়ানো নিজেকে সতেজ, সজীব ও ঝরঝরে রাখতে প্রাণপন চেষ্টা করেছি। সৌভাগ্যবশত সেগুলো আমাকে সাহায্য করেছে। একই ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরি- বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসেই এমন অলরাউন্ডিং পারফরমেন্স ছিল মাত্র একটি। এতকাল এ দূর্লভ কৃতিত্বটি ছিল ভারতের বাঁহাতি অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫১ রান করার পর ২৯ রানে ৫ উইকেট দখল করে সে কৃতিত্বে ভাগ বসালেন সাকিব। এ অর্জন-কৃতিত্ব ভাল লাগার। সাকিব এটাকে কীভাবে দেখেন? এটা কি শুধুই ভাল লাগার? না অন্য কিছু? সাকিবের নির্লিপ্ত জবাব, আমি কখনোই আমার পারফরমেন্সের মার্কিং করি না। ওসব নিয়ে মাথাও ঘামাই না। হ্যাঁ, সময়টা ভাল কাটছে। ব্যাটে বলে অবদান রাখতে পারছি এটা অবশ্যই সন্তুষ্টির। এক বিভাগে অবদান না রেখে দুটি বিভাগেই রাখছি এটাও দারুণ আনন্দের। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/২৫ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2IHSU0J
June 25, 2019 at 05:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন