লন্ডন, ১১ জুলাই- রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পেরে হতাশায় ব্যাট ছুড়ে ফেললেন বিরাট কোহলি। ভারতের ড্রেসিংরুম তখন ম্যানচেস্টারের আকাশের মতোই মেঘাচ্ছন্ন। কোচ রবি শাস্ত্রীর মাথায় হাত। তার শিষ্যরা বসে আছেন মুখ ঢেকে। ভরা গ্যালারি যেন মৃত্যুপুরী। কিন্তু নাটকের তখনও অনেক বাকি। ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য এক গল্প প্রায় লিখে ফেলেছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। এমএস ধোনি পরিণত ব্যাটিংয়ে দেখাচ্ছিলেন রূপকথার এক জয়ের স্বপ্ন। সপ্তম উইকেটে ১১৬ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে ম্যাচের মোড় প্রায় ঘুরিয়েই দিয়েছিলেন জাদেজা ও ধোনি। কিন্তু শেষ দৃশ্যে ওল্ড ট্রাফোর্ডের নীল জনসমুদ্র ভাসল চোখের জলে। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ভারতকে ১৮ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। ক্রিকেটে অনিশ্চয়তার সূত্র কখনও কখনও এমন ভেলকি দেখায়, চমকে যেতে হয়। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসরের প্রথম সেমিফাইনালে বুধবার সেই চমকটাই দেখালেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। দুরন্ত বোলিংয়ে হট ফেভারিট ভারতের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিলেন তারা। বৃষ্টির বাধায় রিজার্ভ ডেতে গড়ানো প্রথম সেমিতে আট উইকেটে ২৩৯ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। জবাবে অনেক নাটকের পর তিন বল বাকি থাকতে ২২১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ম্যাচসেরা ম্যাট হেনরির বিষাক্ত ছোবলে পাঁচ রানে তিন উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ধোনি-জাদেজার জুটিতে ঘুরে দাঁড়ালেও তাদের লড়াই শেষ পর্যন্ত বিফলেই গেছে। মঙ্গলবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৪৬.১ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২১১ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। কাল রিজার্ভ ডেতে সেখান থেকেই শুরু হয় খেলা। ইনিংসের বাকি ২৩ বলে তিন উইকেট হারিয়ে কিউইরা যোগ করতে পারে মাত্র ২৮ রান। ৬৭ রানে দিন শুরু করা রস টেলর থামেন ৭৪ রানে। বাকিরা তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু মেঘলা কন্ডিশনে ২৩৯ রানের মামুলি পুঁজিকেই ভারতের জন্য হিমালয় বানিয়ে ফেলেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। রান তাড়ায় ভারতের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি- ভারতের টপ অর্ডারের তিন স্তম্ভকে পাঁচ রানের মধ্যে ফিরিয়ে ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেন দুই কিউই পেসার ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট। টপ অর্ডারে মড়ক লাগার পর দলীয় ২৪ রানে হেনরির তৃতীয় শিকার হয়ে দিনেশ কার্তিকও ধরেন সাজঘরের পথ। সেই মহাবিপর্যয়ের মুহূর্তে প্রথম প্রতিরোধ গড়েন ঋষভ পন্ত (৩২) ও হার্দিক পান্ডিয়া (৩২)। কিন্তু কিউইদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের গতি বাড়াতে না পারায় ধৈর্য হারিয়ে দুজনই আউট হন স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। ৯২ রানে ছয় উইকেট হারানো ভারতের হার তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু পাশার দান উল্টে যায় ৩১তম ওভারে জাদেজা এসে ধোনির সঙ্গে জুটি বাঁধতেই। জয়ের জন্য ১১৪ বলে ভারতের দরকার তখন ১৪৬ রান। সপ্তম উইকেটে ১১৬ রানের জুটি গড়ে সেই কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ফেলার আশা জাগিয়েছিলেন জাদেজা ও ধোনি। ৫৯ বলে ৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলা জাদেজা ৪৮তম ওভারে বোল্টকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে আনেন। পরের ওভারে গাপটিলের সরাসরি থ্রোতে রানআউট ধোনি (৭২ বলে ৫০)। সেখানেই আশার সমাধি ভারতের। শেষ ওভারে ২৩ রানের অসম্ভব সমীকরণ আর মেলানো সম্ভব হয়নি। শেষ ব্যাটসম্যান যুজবেন্দ্র চাহালকে তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল নিশ্চিত করেন জিমি নিশাম। ৩৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে ভারতের আসল সর্বনাশটা করেছেন ম্যাট হেনরি। ভারতের অভাবনীয় হারে বিশ্বকাপ থেকে এশিয়ারও বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল। গতবার ফাইনালে হারা নিউজিল্যান্ড আরেকবার পা রাখল ফাইনালের মঞ্চে। ১৪ জুলাই লর্ডসে শিরোপাযুদ্ধে তাদের প্রতিপক্ষ হবে আজ অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেমিফাইনালের বিজয়ী দল। নিউজিল্যান্ড ২৩৯/৮, ৫০ ভারত ২২১/১০, ৪৯.৩ ফল : নিউজিল্যান্ড ১৮ রানে জয়ী এমএ/ ০৯:০০/ ১১ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2YLsuAF
July 11, 2019 at 05:03AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top