লন্ডন, ০৫ জুলাই - বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেললেও নিষ্প্রভ মাশরাফি। তার চৌকস নেতৃত্ব নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন দেখা না দিলেও বল হাতে তার পারফরমেন্স নিয়ে নিযুত সমালোচনা। সাত ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১টি। জোরে বল করতে পারছেন না। ১০ ওভার বল করতে পারছেন না। কত্তো কী! তবে এসব সমালোচনায় নিরব মাশরাফি। পক্ষে বিপক্ষে কোনো যুক্তি দিচ্ছেন। দলকে নিংড়ে দেয়ার পরও এ ধরণের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে কদিন ধরেই বিষন্ন সময় কাটছে টাইগার অধিনায়কের। গত দুদিন ধরে তো মিডিয়াকেই এড়িয়ে চলছেন মাশরাফি। অথচ সংবাদ সম্মেলনেরও পর মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা না দিলে তার পেটের ভাত হজম হতো না। সেই মাশরাফিই কিনা বৃহস্পতিবার ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অনুপস্থিত। বিষণ্ন মাশরাফির হঠাৎ চুপসে যাওয়া নিয়ে উকি দিয়েছে নানা গুঞ্জন। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে হুট করেই টি-টোয়েন্টির থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মাশরাফি। কাউকে কিছু না বলে, টস করতে গিয়ে ঘোষণা দেন অবসরের। আজকে লর্ডসে এমন কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা না দিলেও বিশ্বকাপে যে আজই তার শেষ ম্যাচ, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাছাড়া মাশরাফি দিনকয়েক আগেই নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কানাডার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল মাশরাফির বিশ্বকাপ যাত্রা। সেই যাত্রা শেষ হচ্ছে লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচের আগে মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে অবসরের বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তিনি নীরব। মাশরাফির এই নিরবতা শ্রীলংকা সফরের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিলের মত অবসরের ঘোষণা (টি-টোয়েন্টিতে) দিয়ে বসবেন না তো আবার? ভারতের সঙ্গে ম্যাচ হারার পর সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। পাকিস্তান ম্যাচের আগেও একই চিত্র। কী হলো মাশরাফির? মিডিয়া ম্যানেজার রাবেদ ইমাম জানিয়ে গেলেন, কোনো কারণ নেই। মাশরাফি ভালো আছে, এমনিতেই আসেনি। কিন্তু মাশরাফির জীবন দর্শনের সঙ্গে এটি যায় না। লর্ডস ক্রিকেটের তীর্থস্থান। ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়ামটির ব্যালকনিতে অনেক সুন্দর মুহূর্তের জন্ম হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে আছে সম্ভবত সৌরভ গাঙ্গুলির জার্সি ওড়ানোর দৃশ্য। সংবাদ সম্মেলনে না আসা মাশরাফিকে পাওয়া সেই ব্যালকনিতে। আনমনে বসে আছেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক। শূন্য দৃষ্টিতে কী যেন ভাবছেন। যে ভাবনাগুলো হয়তো এক সুতোয় গাঁথতে পারছেন না। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন বলেই কী তার এই বিষণ্নতা? নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে ইতি জানাবেন বলে এই নিরবতা। নাকি সব সমালোচনার জবাব আজ মাঠেই দিতে চান এই কাপ্তান। মাশরাফি হয়তো খেলোয়ারি জীবনের শেষটা এমনভাবে করতে চাইছিলেন না। তার চাওয়া ছিল সম্মানজনক ও ফর্ম নিয়েই বিদায়। কিন্তু বাধ সাধল তার ইনজুরি। বিশ্বকাপের পুরো আসরে ইনজুরি তাকে ভোগাচ্ছে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে বড় রান আপ নিয়ে বল করতে পারছেন না। যে মাশরাফি দলের বিপদে নিজের হাতে বল তুলে নিতেন তিনিই কিনা ১০ ওভার বল করতে পারছেন না। এসবই নিশ্চয়ই পীড়া দিচ্ছে তাকে। এছাড়া ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের কারণে কিছুদিন মাশরাফির অবসর নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের নায়ক সেই আলোচনায় কিছুটা বিরক্ত। বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগেই যেখানে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ক্রিকেট ছাড়ার, এরপরও বারবার একই প্রশ্ন সামলাতে হচ্ছে তাকে। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে সংবাদ সম্মেলনে আসেননি, পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিনও তাই। দুটো সংবাদ সম্মেলনই সামলাতে হয়েছে প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে। এরপরও বেশিরভাগ প্রশ্নে জুড়ে ছিলেন মাশরাফি। এই পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতেই কী তার আড়ালে থাকা? অবশ্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনের পর পাওয়া যায় মাশরাফিকে। অনুশীলন শেষে দলের সবাই যখন টিম বাসে করে ফিরতে ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন, শেষ মুহূর্তে ধীরপায়ে এগিয়ে এলেন অধিনায়ক। সাংবাদিকরা ঘিরে ধরেন। আপনার অবসর নিয়ে এতো আলোচনা? শুকনো হাসিতে মাশরাফি বলে গেলেন, ঘোষণা দিলে তো জানতেই পারবেন। নিজের মত করে জোরে বল করতে না পারা, দলের দুঃসময়ে বল হাতে নিতে না পারা, বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া এবং অবসর নিয়ে বাইরের আলোচনা অনেক ভাবনাই উকি দিচ্ছে মাশরাফির মনে। লর্ডসের ব্যালকনিতে সেই ভাবনাগুলোই হয়তো বিষণ্ন করে তুলেছিল মাশরাফিকে! এন এ/ ০৫ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2KYBrU7
July 05, 2019 at 09:01AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন