ঢাকা, ১৭ জুলাই - পৃথিবী বদলে গেছে। পাখির মতো শখ করে গান করার দিন ফুরিয়েছে। এখন গান বেচতে হয়। গানে গানে কবির সুমন বলেছিলেন, আমি বেচি আমার কণ্ঠ তোমার হাতে। আগে সংগীত প্রযোজকেরাই শিল্পীর গান বেচার দায়িত্ব নিতেন। রোজগারের অর্থ থেকে সম্মানী হিসেবে কিছুটা তুলে দিতেন শিল্পীর হাতে। কিন্তু এখন কেবল গাইতে জানলেই চলে না। অনেক শিল্পীই নিজের গান বিপণনের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। সারা পৃথিবীতে তো বটেই, বাংলাদেশের শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছে অহরহ। একসময় রেকর্ডিং-বাজারজাতকরণ-পরিবেশন ব্যয় ছিল অনেক বেশি। ব্যক্তির পক্ষে সেসব নির্বাহ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। বাজারজাতকরণে সিদ্ধান্ত ভুল হলে সব ভেস্তে যেত। এখন সামাজিক মিডিয়ার কল্যাণে এসব সহজ হয়ে গেছে। তা ছাড়া শিল্পী প্রযোজক হলে যত মাথা, তত ভাগ হয় না, শিল্পীই এককভাবে লাভবান হন। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে নিজেদের গান প্রযোজনা করে থাকেন বাপ্পা মজুমদার, হাবিব ওয়াহিদ, তাহসান, মিনার, কনা, ইমরানসহ অনেকে। কিন্তু এতে কতটা লাভবান হচ্ছেন তাঁরা? কেনইবা এই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল কাজটি নিচ্ছেন নিজের কাঁধে? এ প্রসঙ্গে তরুণ গায়ক ইমরান মাহমুদুল বলেন, এ কাজে কিছুটা লাভ হয়। নিজের গানের স্বত্ব নিজের হাতেই থাকে। পরে যেভাবে খুশি, ব্যবহার করা যায়। গান জনপ্রিয় হলে মুনাফা হয় এবং সেই গানের সুবাদে মঞ্চে গাওয়ার ডাক আসে। মঞ্চ থেকে পাওয়া সম্মানীর অঙ্কটি সংগীত থেকে যেকোনো আয়ের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু কোনো কারণে গানটি জনপ্রিয় না হলে ক্ষতি হয়। এসব ক্ষেত্রে প্রযোজকের হাতে গানের স্বত্ব তুলে দিলে এককালীন কিছু টাকা পাওয়া যায়। লাভ-ক্ষতির চিন্তা করতে হয় না। গান থেকে আয় হয় নানাভাবে। মূলত মোবাইলের কলার টিউন, ইউটিউব ভিউ ও স্ট্রিমিং অ্যাপসগুলো থেকে আয়ই মূল। তা ছাড়া স্পনসরের মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও করলেও বেশ মুনাফা করতে পারেন প্রযোজকেরা। ২০১১ সালে নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন শিল্পী কনা। নিজের চ্যানেলে নিজেই ভিডিও অবমুক্ত করছেন তিনি। সম্প্রতি সেই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার লাখ ছাড়িয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে ইউটিউব তাঁকে দিয়েছে সিলভার বাটন। তিনি জানালেন, নিজের চ্যানেল থাকায় অন্যদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। কনা বলেন, চ্যানেল থেকে খুব যে লাভবান হচ্ছি, তা নয়। কিন্তু গান প্রকাশের পর অন্তত বুঝতে পারছি, কতজন মানুষ দেখছেন, কতগুলো মানুষের কাছে গানটি পৌঁছাচ্ছে। গান ভালো হলে সবাই শুনবে, আমার আয় হবে। ভালো না হলে শুনবে না। বৈশ্বিক ক্ষেত্রে রেকর্ডিং লেবেল প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পী জানান, এখন সামাজিকতার শক্তি অনেক। একটি সম্প্রদায়ের মাধ্যমে তাই শিল্পীরা নিজেরাই রেকর্ডিং লেবেল নিয়ে কাজ করেন। এতে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ করা যায়। প্রাথমিক সাফল্যের পর তাই প্রতিটি শিল্পীই নিজের একটি রেকর্ডিং লেবেল চালু করেন। এতে আয়কর দেওয়া ও আইনি কাজগুলো করাও সহজ হয়। সংগীত প্রযোজনা সংস্থা সিএমভির স্বত্বাধিকারী এস কে শাহেদ আলী বলেন, শিল্পীরা নিজেরা নিজের গান প্রযোজনা করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক কাজ। একক ব্যক্তির দ্বারা সেসব সম্ভব নয়। ধ্রুব মিউজিক স্টেশনের স্বত্বাধিকারী শিল্পী ধ্রুব গুহ বলেন, শিল্পীরা প্রযোজনা করছেন, নিজেদের কাজ এক জায়গায় রাখার জন্য। কেউ কেউ লাভবান হচ্ছেন বটে কিন্তু সেটা সবার ক্ষেত্রে হচ্ছে না। শিল্পীর প্রযোজনার বদলে সংস্থার উদ্যোগ বেশি ফলপ্রসূ বলে মনে করেন ধ্রুব গুহ। তিনি বলেন, আমরা সবাই মিউজিক ভিডিও তৈরি করছি। দর্শক-শ্রোতারা কোম্পানির চ্যানেলে গিয়ে সেসব দেখলে একসঙ্গে অনেক শিল্পীর গান শুনতে পান। তাহসানের গান শুনতে এসে ইমরানের গান শুনবেন। এতে গান ছড়ায় ভালোভাবে। একজন শিল্পীর চ্যানেলে গেলে সেটা হয় না। পাশাপাশি ইউটিউবের বিকল্প নিজস্ব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গড়ার তাগিদও অনুভব করছে সংগীত প্রযোজকদের সংগঠন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)। গানের শিল্পীদের নিজস্ব প্রযোজনা এখন সময়ের দাবি। সারা পৃথিবীতেই সেটা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্পী কনা মনে করেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বিকল্প এ পথেও আমাদের হাঁটতে হবে। সূত্র : প্রথম আলো এন এইচ, ১৭ জুলাই.
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2YTReqJ
July 17, 2019 at 09:01AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন