এবারের কোপা আমেরিকা শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিল ব্রাজিল। সেভাবে খেলেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লিখিয়েছিল তারা। ফাইনালি লড়াইয়েও ছন্দময় ফুটবল উপহার দিলেন সেলেকাওরা। রোববার ফুটবলের তীর্থভূমি মারাকানায় পেরুকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে কোপা চ্যাম্পিয়ন হলেন তারা। এ নিয়ে মহাদেশীয় সেরার লড়াইয়ে নবমবার শিরোপা ঘরে তুলল ব্রাজিল। নেপথ্যে রয়েছে ৫ কারণ- ১. শক্তিমত্তায় যোজন এগিয়ে থাকা খাতা-কলমের হিসাব কিংবা মাঠের খেলায় পরিষ্কারভাবে পেরুর চেয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত শক্তিমত্তা দেখিয়েছেন সেলেকাওরা। কৌশলগত দিক দিয়ে যোজন যোজন এগিয়ে তারা। লিগপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিলেন তারা। ফলে ফাইনালি লড়াইয়ে তাদের পেয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ হয়ে ফুটছিলেন আলভেজ-জেসুসরা। ২. গতি ও পাসের সংমিশ্রণ আধুনিক ফুটবল আবর্তিত হয় গতি ও পাসের সংমিশ্রণে। সম্প্রতি বছরগুলোতে বড় টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ এর সমন্বয় করতে না পারা। তবে এবারের কোপায় তাদের পায়ে সেটিই দেখা গেছে। টুর্নামেন্টে দ্রুতগতির ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল। সঙ্গে ছিল নিখাদ পাস। দারুণ দক্ষতা- ক্ষিপ্রতায় বলের নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডআপ ফুটবলে গতিময় পাসের পর পাস খেলে মালা গেঁথে এবং বৈচিত্র্যময় আক্রমণে অনুরাগীদের মন কেড়েছেন জেসুস, কুতিনহো, এভারটনরা। তাদের সামনে পেরুর রক্ষণভাগ তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়েছে। ৩. জমাট রক্ষণভাগ আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু শিরোপা জেতাবে রক্ষণভাগ- অমর অক্ষয় কথাটি ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম সেরা কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। স্কটিশ এই কোচের কথাটি ফুটবলে চিরন্তন সত্য এবং হরহামেশা প্রমাণিত হয়ে আসছে। সেই বিবেচনায় ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয় ছিল সময়ের ব্যাপার। টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগে পাঁচ ম্যাচে একটিও গোল হজম করেনি সেলেকাওরা। গোল খাওয়া কী, শুধু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে সেমিফাইনালে দুই অর্ধে কিছু সময় ছাড়া তাদের রক্ষণে ত্রাস ছড়াতে পারেনি কেউ। একেবারে জমাট রক্ষণ বলতে যা বোঝায়- প্রতিটি ম্যাচেই তা দেখিয়ে দিয়েছে সিলভা, মার্কিনহোস, আলভেজ, লুইসদের ব্যাক ফোর। তাদের সামনে ছায়া হয়ে থেকেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা হোল্ডিং মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরো। এই প্রতিরক্ষা চৌকির চোখ ফাঁকি দিয়ে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গোলরক্ষক আলিসনের কাছে খুব একটা পৌঁছতে পারেননি পেরুর ফরোয়ার্ডরা। অধিকন্তু গোলরক্ষক হিসেবে সেরা ছন্দে আছেন আলিসন। ফাইনালে যে গোলটি খেয়েছেন, সেটিও গড়বড় লাগিয়ে। ৪. টিম গেম শুধু রক্ষণসেনারাই নন, ব্রাজিলের মাঝমাঠ- আক্রমভাগের খেলোয়াড়রাও রয়েছেন সেরা ছন্দে। মধ্যমাঠে ক্যাসিমিরো, ফার্নান্দিনহো, কুতিনহোরা আলো ছড়িয়েছেন। সামনে দ্যুতি ছড়িয়েছেন এভারটন, ফিরমিনো, উইলিয়ানরা। সবাই পায়ে ফুটবলের শৈল্পিক ফুল ফুটিয়েছেন-সুরভি ছড়িয়েছেন। এই টিম গেম নির্ভর দলের বিপক্ষে নিজেদের ভোজবাজির মতো বদলাতে পারেননি রিকার্দো গারেসার শিষ্যরা। ৫. ইতিহাস, রেকর্ড-পরিসংখ্যান ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা মানেই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। শতবর্ষী টুর্নামেন্টে বিষয়টি অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর আগে চারবার নিজেদের মাটিতে কোপার আয়োজন করেন সেলেকাওরা। প্রতিবারই টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে নীল-হলুদের শিরোপা উচ্ছ্বাসে। এর আগে সবশেষ ১৯৮৯ সালে নিজ দুর্গে কোপা খেলে ব্রাজিল। সেবার উরুগুয়েকে পেছনে ফেলে শিরোপা উল্লাস করে তারা। এরও আগে হোমগ্রাউন্ডে ১৯৪৯, ১৯২২ ও ১৯১৯ আসর আয়োজন করে সাম্বার দেশ। প্রতিবারই ঐতিহাসিক শিরোপায় চুমু আঁকে তারা। অধিকন্তু পেরুর বিপক্ষে কালেভদ্রে হারে ব্রাজিল। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩২ বার মুখোমুখি হয়েছে দুদল। এর মধ্যে মাত্র চারবার জয়ের মুখ দেখেছে পেরু। অবশ্য সবশেষ দেখায় ব্রাজিলকে হারিয়েছিল তারা। সেটিই ছিল পেরুভিয়ানদের অনুপ্রেরণা। সদ্য সুখস্মৃতি টাটকা ছিল। ২০১৬ লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অঘটনের জন্ম দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ব্রাজিলকে বিদায় করে দেয় পেরু। তবে সেটাও কাজে লাগেনি। সূত্র: যুগান্তর আর/০৮:১৪/০৮ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2xzMQ3Q
July 08, 2019 at 06:52AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন