লন্ডন, ০৬ জুলাই- ইএসপিএন ক্রিকইনফো তাদের ওয়েবসাইটে ছবিটা প্রকাশ করে ক্যাপশন লিখেছে, এটাই সাকিব আল হাসানের বিশ্ব..., অন্তত এটা একান্তই তার বিশ্বকাপ। ৬০৬ রান এবং ১১ উইকেট কারো নামের পাশে থাকলে ক্রিকইনফো কেন, যে কেউ বলবে এই কথা। ভারতের বিপক্ষে এক ক্যাচেই ম্যাচ মিস হয়েছে। না হলে হয়তো আজ সেমির লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামতো বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচেও সাকিব আল হাসান ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। করেছিলেন ৬৬ রান। ম্যাচের পর বিদেশি মিডিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, সবাই আরেকটু সিরিয়াস হলে হয়তো আমাদের লক্ষ্যটা পূরণ হতো। সেই লক্ষ্যটা কি? তা বলে দিতে হবে না। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গিয়েছিল সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে। ছোট ছোট বেশ কিছু ভুলের খেসারত দিয়ে অবশেষে সেই লক্ষ্য পূরণ হলো না টাইগারদের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক উইলিয়ামসনের সেই রানআউট মিস না করলে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সাব্বির ওয়ার্নারের সেই ক্যাচটি মিস না করলে কিংবা ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মার ক্যাচটি যদি তামিম মিস না করতেন, তাহলে নিশ্চিত- বাংলাদেশই হয়তো থাকতো আজ সেরা চার দলের একটি। সেই আক্ষেপটাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর মিডিয়ার সামনে চেপে রাখতে পারলেন না। নিজে এতটা ভালো পারফরম্যান্স করেছেন যে সাকিব আল হাসানকে ১০০র মধ্যে ২০০ দিতে হবে। এতটা ভালো পারফরম্যান্স বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর কোনো ক্রিকেটার করতে পারেননি। সাকিব হয়তো ব্যক্তিস্বার্থে এমন পারফরম্যান্স করেননি। দলের স্বার্থেই করেছেন। ব্যক্তিগত সাফল্যগুলো একে একে যোগ হলেই দলীয় সাফল্য অর্জিত হয়। খেলোয়াড়রা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের দায়িত্বটা পালন করলে সাফল্য এমনিতেই আসে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ সাকিব আল হাসান। অন্যরা যে দায়িত্ব পালন করেননি তা নয়। কিন্তু সাকিবের মত আর দুতিনজনও যদি ধারাবাহিক হতেন, তাহলে হয়তো বা সাকিবের সেই আক্ষেপটা আর থাকতো না। কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ করেই দেশে ফিরতে পারতো টাইগাররা। কিন্তু সেটা আর শেষ পর্যন্ত হয়নি। বরং, শেষ ম্যাচে এসে লর্ডসে বাংলাদেশ হেরেই গেলো পাকিস্তানের সাথে। নিজেদের বিদায় তো নিশ্চিত ছিলই, সঙ্গে বিদায় নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানেরও। কাঙ্খিত লক্ষ্য হয়তো পূরণ হয়নি, হয়তো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি; কিন্তু যে পারফরম্যান্স সাকিব করেছেন তাতে এই বিশ্বকাপটাকে তিনি একান্তই নিজের করে নিয়েছেন। ৯ ম্যাচের একটি খেলতে পারেননি বৃষ্টির কারণে। খেলেছেন ৮ ম্যাচ। তাতেই ৭টি ইনিংস ফিফটি প্লাস। দুটি সেঞ্চুরি, ৫টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বনিম্ন ইনিংসটাও চলিশোর্ধ্ব (৪১ রানের)। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন পারফরম্যান্স নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের। সাকিবের চেয়ে এগিয়ে থাকা শচীন টেন্ডুলকার ২০০৩ বিশ্বকাপে হয়তো ৬৭৩ রান করেছেন। কিন্তু তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন কেবল ১টি। হাফ সেঞ্চুরি ৬টি। তাও ৬৭৩ রান করেছেন ১১ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ব্যাট করে। একবার ভাবুন তো, সাকিব যদি ১১ ইনিংস ব্যাট করার সুযোগ পেতেন, তাহলে তার রানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো? নিশ্চিত কল্পনারও বাইরে। কিংবা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ম্যাথ্যু হেইডেন। যিনি ২০০৭ বিশ্বকাপে করেছিলেন ৬৫৯ রান। তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩টি। হাফ সেঞ্চুরি ১টি। ব্যাট করেছেন ১০ ইনিংসে। সাকিবের চেয়ে ২ ইনিংস বেশি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৫০০ প্লাস রান এবং ১০টিরও বেশি উইকেট নেয়ার মত পারফরম্যান্স এখনও পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেননি। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু। এর মধ্যে অনেক রথি-মহারথির আগমণ ঘটেছে। ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করে গেছেন। কিন্তু এমন কীর্তি কেউ দেখাতে পারেননি, যা দেখালেন সাকিব আল হাসান। শুধু ৫০০ প্লাসই নয়, ৬০০ প্লাস (৬০৬) রান করেই ক্ষান্ত হলেন সাকিব। সঙ্গে ১১ উইকেট। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে ৫০ প্লাস রান এবং ৫ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব ছিল কেবল একজনের। ভারতের যুবরাজ সিং। ২০১১ বিশ্বকাপে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ভাগ বসিয়ে দিলেন সাকিব। আবার একই টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরি প্লাস ৫ উইকেট। এমন বিরল কৃতিত্বের জন্ম দিয়েছিলেন কেবল ভারতের দুই কিংবদন্তি। কপিল দেব আর যুবরাজ। সেখানেও ভারতের বাইরে আরেকজন হিসেবে নাম লেখালেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যে কোনো এক আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহের তালিকায় এখন সাকিব রয়েছেন তিন নম্বরে। তার সামনে কেবল শচিন টেন্ডুলকার আর ম্যাথ্যু হেইডেন। সাকিব যদি এই দুজনের মত আর দুটা কিংবা তিনটা ইনিংস খেলার সুযোগ পেতেন, তাহলে বিশ্বকাপে ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের সব রেকর্ড একাই নিজের পকেটে পুরে নিতে পারতেন তিনি। সেমিতে খেলতে পারছেন না। ফাইনালে তো নয়ই। তবুও, এখনই বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারটা সাকিবকে দেয়ার জোর দাবি উঠে গেছে। ৬০৬ রান প্লাস ১১ উইকেট। আর খেলোয়াড় কবে এমন কৃতিত্ব দেখাতে পারবেন? ইএসপিএন ক্রিকইনফো তো অলরেডি তাকে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ঘোষণা করেই দিয়েছে বলতে গেলে। সাকিবের ছবির পাশে এডিট করে বসিয়ে দিয়েছে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। সাকিবের পারফরম্যান্স দেখে বিশ্বকাপের মাঝপথেই ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফ স্টোরি চাপিয়েছে, দ্য মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কয়েকদিন আগে, ইএসপিএন ক্রিকইনফো আলাদাভাবে স্টোরি সাজিয়েছে, কেন সাকিবের মত এমন একজন নিখুঁত অলরাউন্ডার আর উঠে আসছে না। বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেই তো এসব প্রশংসা অর্জন করেছেন সাকিব। এটা তার সঙ্গে পুরো দেশেরও কৃতিত্ব। পরিশেষে এটাই বলা যায়, সাকিবের হয়তো দলীয় লক্ষ্য পূরণ হলো না। কিন্তু একা যে পারফরম্যান্স তিনি করেছেন, তাতে করে পুরো বিশ্বকাপটাকে একান্তই নিজের করে নিয়েছেন তিনি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে না পারুন, কিন্তু ব্যক্তিগত সাফল্যে নিশ্চিত যে কোনো বিশ্বকাপজয়ী সেরা খেলোয়াড়ের চেয়েও সেরা হয়ে থাকবেন তিনি। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/০৫ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2LFxXp5
July 06, 2019 at 04:33AM
06 Jul 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top