খুলনা, ১৬ সেপ্টেম্বর - খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার বাগালির গুলতিবাজ সবুজই এখন এশিয়ার সেরা তীরন্দাজ (আর্চার) রোমান সানা। ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত আসরে একক বিভাগে সোনা জিতে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দিয়েছেন আর্চারিতে। ছেলের এমন অর্জনে গর্বিত রোমান সানার পরিবার। রোমান সানার বাবার নাম মো. আব্দুল গফুর সানা, মায়ের নাম বিউটি বেগম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রোমান সবার ছোট। আদর করে মায়ের দেওয়া নাম ছিল সুজন। স্কুলে ভর্তির সময় নাম হয় রোমান সানা। বড় ভাই বিপ্লব সানা, মেজ বোন লুবনা আক্তার ঝর্ণা। রোমানের বাবা গফুর সানা ও বড় ভাই বিপ্লব সানা খুলনার পূর্ব রূপসার রাজু ফিস ট্রেডার্সে কর্মরত। রোমানের বড় ভাই বিপ্লব সাহা জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মার্বেল ও গুলতি দিয়ে পাখি শিকারে সিদ্ধহস্ত ছিলেন রোমান। রোদে ঘুরে আর কাদামাটি নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। সে সময় কারও বারণও মানতেন না। ছিলেন অনেকটা একরোখা। পরিবারই জানায়, বিভিন্ন সময়ে গুলতি দিয়ে অনেক পাখি শিকার করে করে নিশানায় হাত পাকিয়েছেন। রোমানের পিতা গফুর সানা জানালেন, ছেলের পাখি শিকারের কথা, গ্রামে থাকাকালে ছোটবেলা থেকে রোমানের গুলতির নিশানা ছিল চমৎকার। ও ছোট ছোট চড়ুই পাখি একটা একটা করে বলে বলে গুলতি দিয়ে নিশানা করতো। গাছে থাকা অনেক আমের মধ্য থেকে পাকা আমটি গুলতি দিয়েই নিচে নামাতে পারতো। রোমানের বাবা আরও জানালেন, ২০০৭ সালের আইলার সময় জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে যায় তাদের ঘড়, বাড়ি। তার দেড় মাস পর পরিবার নিয়ে চলে আসেন খুলনায়। টুটপাড়ার একটি ঝুপড়ি ঘরে পরিবার নিয়ে ওঠেন। জানালেন তখনকার অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা কেড়ে নিতে পারতো আজকের সোনা জয়ী রোমানের জীবন প্রদীপ। যা আজও ভুলতে পারেনি তার পরিবার, রোমান ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তখন। ওই সময় রোমান হঠাতই বৈদ্যুতিক হিটারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অচেতন ছিল প্রায় দুঘণ্টা। ওই ঘটনায় রোমান বেঁচে না থাকলে আজকের দিনটি হয়তো আর দেখা হতো না। খুলনার শিশু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তীরন্দাজ হিসেবে রোমানের যাত্রাটা শুরু হয়। তখন ফেডারেশনের একটি টিম খুলনায় এসে তীরন্দাজ বাছাইয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। ওই স্কুলের হাসান স্যারের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন রোমান। এরপর রোমান ওই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে সফলতার সঙ্গে তালিকাভুক্ত হন। তখন কোচ হিসেবে থাকা সাজ্জাদ হোসেন তার মা বিউটি বেগমকে ডেকে পাঠান। তাকে রাজি করিয়েই রোমানকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেন। তার পর থেকে রোমানের তীরন্দাজ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে কষ্টের মধ্যে থেকেও কিছু কিছু টাকা রোমানকে হাত খরচ হিসেবে সরবরাহ করতো তার পরিবার। বছর খানেক পর থেকে আর কোনও অর্থ সহায়তা পরিবার থেকে করতে হয়নি। ২০১২ সালে একটি দুর্ঘটনায় রোমানের পা ভেঙে গেলে তীরন্দাজ হওয়ার স্বপ্নটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ফেডারেশনের সহায়তা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই বছরই বাংলাদেশ গেমসে আনসারের হয়ে ভাঙা পায়ে স্বর্ণ জিতে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। এরপর একে একে আটটি সোনা জিতেছেন। তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ। রোমানার মা বিউটি বেগম জানান, বাছাই প্রশিক্ষণে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ছেলেকে খেলতে দিতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু দূরে যেতে দিতে মন চাচ্ছিল না। তাই শুরুতে তাকে দূরে যেতে দিতে রাজি ছিলাম না। পরে এই ছেলে এ খেলায় ভালো করবে সে আশায় যাওয়ার অনুমতি দেই। আমি জানি ও ছোটবেলা থেকেই খুব জেদী আর একরোখা ছিল। ও যা করতে চায়, সফলতা না পাওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়ে না। রোমানের মা আরও বলেন, ফিলিপাইনে রোমানের সোনা জেতার খবরটি প্রথমে আমাকে ছেলের বউ আমাকে জানায়। ওই খবরের পর এত বেশি খুশি হয়েছিলাম যে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। তবে রোমান সানা ফিলিপাইনে যাওয়ার আগে থেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলেকে তা বুঝতে দেননি। হাসপাতালে থেকে ছেলেকে ফোনে কথা বলে বিদায় জানিয়েছিলেন। দোয়া করে বলেছিলেন, তুমি দেশের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসো। সেই কথাটিই গর্ব করে বলেন তিনি, আমার সুজন আমার কথা রেখেছে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন এন এইচ, ১৬ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2UYoIDe
September 16, 2019 at 09:52AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন