ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর - নব্বই দশকের শেষদিকে ঢাকাই সিনেমায় হাজির হন কলকাতার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। মান্না, আমিন খানসহ বেশ কজন নায়কের সঙ্গে দেখা যায় তাকে। সর্বশেষ আরিফিন শুভর সঙ্গে একটি সিনেমার গল্প ছবিতে জুটি বেঁধেছেন। ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নঈম ইমতিয়াজের পরিচালনায় জ্যাম ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এখানে তাকে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে দেখা যাবে। তার শুটিং করতে এসেছেন ঢাকায়। ২৪ সেপ্টেম্বর এফডিসিতে যোগ দেন শুটিংয়ে। এ ছবির সেটে শুটিংয়ের ফাঁকে তিনি বলেন, ছবির কাহিনীটা বেশ জোরালো। এখানে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করছি। সেইসঙ্গে দুই বাংলার সিনেমা নিয়েও বললেন অনেক কথা- স্বামী কেন আসামী সিনেমা দিয়ে বাংলাদেশের দর্শকের সামনে প্রথম আসা। ছবিটি সাফল্যের পর এখানে ব্যস্ত হতে দেখা যায় আপনাকে। কিন্তু হঠাৎ অনেক লম্বা সময়ের বিরতি। কেন? বাংলাদেশের সিনেমায় কি প্রতিকূলতা তৈরি হয়েছিলো আপনার জন্য? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : প্রতিকূলতার প্রশ্নই আসে না। সবসময় আমি ঢাকায় ভালোবাসা ও অভিনেত্রী হিসেবে সম্মান পেয়েছি। এখানকার দর্শকও আমাকে সবসময় গ্রহণ করেছেন। তাই প্রতিকূলতার বিষয় কিছু ছিলো না। এটা ঠিক প্রথম সিনেমার সাফল্যের পর ঢাকার সিনেমায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং একটানা কিছু করেছি। কিন্তু মাঝের সময়টাতে আমাকে কলকাতার সিনেমায় ব্যস্ত থাকতে হয়। সেখানে বেশ কিছু সিনেমা আমার হাতে ছিলো। তাছাড়া আরেকটা সমস্যা যেটা ছিলো ২০০২ সাল থেকেই কোথাও একটা গণ্ডগোল হচ্ছিলো যেন। বাংলাদেশে কাজ করার ওয়ার্ক পারমিট সহসাই মিলছিলো না। এজন্য ওই সময়টাতে ঢাকার সিনেমায় কম দেখা গেছে। মূলধারার ও বিকল্পধারার দুই ধারার সিনেমায় কাজ করেছেন। একজন অভিনয়শিল্পীর ক্যারিয়ারে কোন ধারাটা বেশি প্রভাব ফেলে? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : বলিউডের অনেক মূলধারার তারকারা আছেন তারা টিপিক্যাল কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রের সঙ্গে কনটেন্ট নির্ভর সিনেমায়ও কাজ করে যাচ্ছেন। এভাবে যদি আমরা কাজ না করি তাহলে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে চলতে পারবো না। সিনেমার কমার্শিয়াল ভ্যালুটাকে ঠিক রেখে আরও বিষয়ভিত্তিক সিনেমা করা গেলে সেটা অবশ্যই ভালো। দুটোই দরকার। যদি আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে দুটোরই দর্শক বা চাহিদা থাকে। আমি সবরকম মেজাজের ছবিই করি। আসলে ক্যারিয়ারে ব্যালেন্স আনতে চাইছি। দর্শকরা আমাকে সবরকমভাবেই পাবে এটাই আমার ভাবনা বা ইচ্ছে বলতে পারেন। আমি পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে এক্সপ্লোর করতে চাই। নতুন নতুন স্বাদের সিনেমার সঙ্গে থাকতে চাই। আমি সিনেমাটা খুব ভালোবাসি। তাই সিনেমায় এক্সপেরিয়েন্স ও এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যেতে চাই। সব সব শিল্পীর মধ্যেই এমন তাগিদ থাকে বা থাকা উচিত। আপনি সবসময়ই চরিত্র প্রধান গল্পের সিনেমায় অভিনয় করে থাকেন। নিজের চরিত্র নিয়ে কতোটা গুরুত্ব দেন? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : আমি অভিনয় সমৃদ্ধ চরিত্র প্রধান গল্পে কাজ করতে পছন্দ করি। কারণ ওইসব ছবিতে সব চরিত্রগুলোই সমান গুরুত্ব পায়। নিজের চরিত্র নিয়ে অতো দুশ্চিন্তা আমার নেই। কারণ পরিচালকরা যখন ঋতুপর্ণাকে কোনো ছবিতে চান সেটা তারা মাথায় রাখেন কেমন চরিত্রে আমাকে মানাবে বা আমাকে প্রস্তাব করা উচিত। চরিত্রের সময়কাল নিয়ে নয়, এর গ্রহণযোগ্যতা বা প্রয়োজনীয়তা কতটুকু ওই সিনেমায় সেটাই মূখ্য। আমি শাহজাহান রিজেন্সি ছবিতে কাজ করেছি। এখানে আমার চরিত্র কিন্তু অনেক সময়ের জন্য নয়। কিন্তু চরিত্রটা দেখুন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক হিসেবে সৃজিতের উপর আমার একটা ভরসা ছিলো। সেই ভরসার অবমূল্যায়ণ হয়নি। সামনেও আমার অভিনীত বেশ কিছু সিনেমা আসছে। সেগুলোও চরিত্র নির্ভর চলচ্চিত্র। মুক্তির পর দর্শক তা দেখলেই বুঝতে পারবেন। আপনি অনেক সিনেমায় কাজ করেছেন। কখনো কি মনে হয়েছে এই কাজটা করা ভুল হয়েছে? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : এমন অনেক কাজ আছে যেগুলো করার পর মনে হয়েছে আসলে এগুলো করা আমার ঠিক হয়নি। প্রথমে হয় কি যারা আমার কাছে কোনো কাজের অফার নিয়ে আসে ভালো করুক ভালো হোক এর জন্য উৎসাহ দেই। কিন্তু কাজটা ঠিকঠাক মতো করতে পারে না।তখনই মনে হয় কাজটা করা ঠিক হয়নি। কিছু করার নেই। এটাও ক্যারিয়ারের অংশ। মানুষ ভুল করে শেখে। তাই না? তেমনি ভুল করে করেই শিল্পীর ক্যারিয়ার শুদ্ধ হয়। অনেকেই রয়েছেন যারা সমালোচনাকে গ্রহণ করতে পারেন না। অনেক বড় বড় তারকাদের দেখা যায় সমালোচনায় বাজে প্রতিক্রিয়া দেখান। আপনি কিভাবে দেখেন সমালোচনাকে? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : আগে আমার কোনো কাজের সমালোচনা হলে মন খারাপ হয়ে যেতো। কষ্ট পেতাম কেন আমাকে এগুলো বলছে? তারা এমনভাবে কেন নিচ্ছে? কিন্তু এখন উল্টো। বুঝতে পেরেছি যে সমালোচনা না থাকলে ভালো কাজ হয় না। এখন সমালোচনাকে তাই পজিটিভ ভাবে দেখি। সমালোচনা হওয়া উচিত। এটা আয়নার মতো। ভালো ও মন্দ দুটোকেই দেখিয়ে দেয়। শুধু প্রশংসা পাওয়া কোনো ভালো অভ্যাস নয়। চারদিকে যখন শুধুই প্রশংসা শুনবেন মনে করবেন কিছু একটা গড়বড় হোগায়া। তখন সাবধান থাকা উচিত কে কোনদিক থেকে আপনাকে ব্যবহার করে নিচ্ছে সেই ব্যাপারে। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার আপনার। এক জীবনে অসংখ্য সিনেমায় কাজ করেছেন। বলিউডেও দেখা গেছে আপনাকে। আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা প্রায় আড়াই দশক ধরেই। পেয়েছেন নানা রকম পুরস্কার ও সম্মান। তবুও কী কোনো রকম অপ্রাপ্তি কষ্ট দেয়? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : আমার অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তিটাই বেশি। পাওয়ার তো আর শেষ নেই।যেগুলো পেয়েছি সেগুলোকে তো আর ইগনোর করতে পারবো না। হ্যাঁ, এটা ঠিক আছে যে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। আমি আরো অনেক কাজ করে যেতে চাই। প্রয়াত নায়ক মান্নার সঙ্গে আপনি অনেকগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন।আজ তার প্রযোজনা সংস্থা কৃতাঞ্জলি প্রোডাকশনের সিনেমায় কাজ করছেন। মান্নাকে মিস করেন না? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : (নিশ্চুপ হয়ে রইলেন খানিকক্ষণ) ঢাকায় এলে অনেককেই আমি মিস করি। রাজ্জাক সাহেবকে মিস করি। মান্না ভাইকে মিস করি। বিশেষ করে মান্না ভাইয়ের চলে যাওয়াটা আমাকে ব্যথিত করে। মান্না ভাইয়ের প্রতি মুগ্ধ ছিলাম আমি। সিনেমাপাগল একজন ভালো মানুষ। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেক ভালো ভালো স্মৃতি রয়ে গেছে। এগুলোই এখন তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে আমার কাছে। মান্না ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেও আমার ভীষণ ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমি মান্না ভাইয়ের পরিবারের সাথে যুক্ত আছি। সবসময় থাকবো। জ্যাম সিনেমায় অভিনয় করছেন। জ্যাম নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? শুনেছি কলকাতাতেও ঢাকার মতো জ্যাম থাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : সব শহরেই কম বেশি জ্যাম রয়েছে। তবে ঢাকা শহরে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। এবার আগের তুলনায় একটু কম জ্যাম পেলাম। এর আগে ঢাকার শহরে জ্যাম রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তি করিয়েছে। কলকাতাতেও জ্যামের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। জ্যাম নিয়ে এই যে অভিজ্ঞতা সেটাই তুলে ধরা হয়েছে জ্যাম সিনেমাতে। সবশেষে নতুন কী সিনেমা করছেন জানতে চাই.... ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত : ঢাকায় তো জ্যাম ও গাঙচিল করছি। অনুরাগ কাশ্যপের হিন্দি সিনেমা বাসুরি করছি। কলকাতায় নতুন সিনেমা আসছে পার্সেল, গুডমর্নিং সানশাইন, লাইম অ্যান্ড লাইট। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সঙ্গে দুটো ছবি আসবে। একটি বেলাশুরু আরেকটি বেলাশেষর সিক্যুয়েল। এন এইচ, ২৯ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2nGy1uB
September 29, 2019 at 11:18AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন