চট্টগ্রাম, ০৭ সেপ্টেম্বর- দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ বোলিংয়ে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম ইনিংসে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় লিড বেড়েই চলেছে আফগানিস্তানের। তৃতীয় দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগে ৩ উইকেটে ৫৬ রান তুলেছে সফরকারিরা। তাদের লিড এখন ১৯৩ রানের। আফগানিস্তানের ৩৪২ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৭০.৫ ওভার খেলে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২০৫ রানে। ফলে ১৩৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমেছে রশিদ খানের দল। বাংলাদেশ শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছে আফগানদের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বল হাতে নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আর নিজের তৃতীয় ডেলিভারিতে ওপেনার ইহসানউল্লাহ জানাতকে (৪) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন। ঠিক পরের বলে আরও এক উইকেট। এবার সাকিবকে দুই পা এগিয়ে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহ (০)। তৃতীয় উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে আফগানিস্তান। ১৪ ওভারের জুটিতে ২৪ রান যোগ করেন ইব্রাহিম জাদরান আর হাসমতউল্লাহ শহীদি। শেষতক এই জুটিটি ভেঙেছেন নাইম হাসান। তার ঘূর্ণিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়েছেন শহীদি (১২)। এর আগে ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারটা শুরু করেন আফগানিস্তানের অফস্পিনার মোহাম্মদ নবী। আর তৃতীয় ডেলিভারিতেই তিনি ফিরিয়ে দেন তাইজুলকে। ৫৮ বল মোকাবেলায় ১৪ রান করা কাটা পড়েন পরিষ্কার বোল্ড আউটে। এর দুই ওভার পর রশিদ খানের দারুণ এক ডেলিভারি বুঝতে না পেরে বসে প্যাড দিয়ে ঠেকিয়ে দেন নাইম হাসান। আম্পায়ারও আঙুল তুলতে দেরি করেননি। রিভিউ নিলেও তাতে কাজ হয়নি। ১২ বলে ৭ রানে আউট হন নাইম। অপরপ্রান্তে থাকা মোসাদ্দেক হাফসেঞ্চুরির আশায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ৮২ বলে ১ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় গড়া তার ৪৮ রানের ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি থেমেছে সঙ্গীর অভাবে। বাংলাদেশ ইনিংস ওপেন করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন সাদমান ইসলাম। মূলতঃ একজন পেসারও না রেখে পুরোপুরি স্পিনার দিয়ে বোলিং অ্যাটাক সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে আফগানিস্তান দলে নেয়া হয়েছিল একজন পেসার। সেই এক পেসারে শুরুতেই কোণঠাসা বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই ওপেনার সাদমান ইসলামকে ফিরিয়ে দেন আফগান পেসার ইয়ামিন আহমদজাই। আফগান বোলারদের বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে মনে হচ্ছিল এক একটি যম। শুধু ব্যাট নয়, পুরো শরীর দিয়ে বাঁচাতে হচ্ছে আফগান বোলারদের কাছ থেকে ছুটে আসা বলগুলো। এর মধ্যে এলবিডব্লিউর চান্সও থেকে যায়। সেই এলবিডব্লিউর শিকারই হন সৌম্য সরকার। সাদমানের বিদায়ের পর জুটি বেঁধে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য আর লিটন কুমার দাস। ওয়ানডাউনে লিটনকে মাঠে নামানো ছিল হয়তো একটি বিশেষ পরিকল্পনার অংশ। ৩৮ রানের জুটি গড়ে এ দুজন অনেকটাই সাবলীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ভুলটা করে বসলেন সৌম্য। মোহাম্মদ নবীর সোজা লেন্থ বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬৬ বলে ১৭ রান করে বিদায় তিনি। সৌম্য বিদায় নেয়ার পর মুমিনুল হকের সঙ্গে জুটি বাঁধার চেষ্টা করছিলেন লিটন দাস। কিন্তু দলীয় ৫৪ রানের মাথায় রশিদ খানের ঘূর্ণি বলে পুল করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল উঠলো না এবং সোজা গিয়ে আঘাত হানলো স্ট্যাম্পে। বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি ব্যক্তিগত ৩৩ রানে। দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নেমে সাকিব আল হাসান শুরুটা করেছিলেন ভালোই। দেখেশুনে ১১ রান পর্যন্ত গেলেন, তারপর রশিদ খানের বল আটকে দিতে গিয়ে মিডল স্ট্যাম্পের বলটা প্যাডে লাগিয়ে বসলেন। হলেন এলবিডব্লিউ। এক বল পর দলের ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীমকেও সাজঘরের পথ দেখালেন রশিদ। মুশফিক অবশ্য নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। রশিদ খানের ঘূর্ণি ডেলিভারিটি তার ব্যাট ছুয়ে মাটিতে পড়ার সময় বুটের সামনের দিকে লেগে শর্টে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে চলে যায়। যদিও রিপ্লেতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না, বলটি মাটিতে ছুয়েছে কি না। বল মাটির কাছে যাওয়া সময় কিছু ধুলো উড়তে দেখা যায়। কিন্তু অন ফিল্ড আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল আউট হওয়ায় তৃতীয় আম্পায়ার সেটাই বহাল রাখেন। মুশফিক ফেরেন শূন্যতেই। রশিদের ঘূর্ণিতে এরপর পর্যদুস্ত মাহমুদউল্লাহও। ৭ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের এই আসা যাওয়ার মাঝেও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন মুমিনুল হক। দেখেশুনে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন। কিন্তু সেই হাফসেঞ্চুরির পর আর উইকেটে থাকা হয়নি মুমিনুলের। মোহাম্মদ নবীর ডেলিভারিটি স্লটে পেয়ে মারার মতোই মনে করেছিলেন এই লিটলম্যান। কিন্তু সেটা তেমন ছিল না। কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন ৭১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করা মুমিনুল। ১৩০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। অষ্টম উইকেট জুটিতে সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও এই জুটিতে উঠে মাত্র ১৬ রান, তবে উইকেটে প্রায় দশ ওভারের মতো সময় কাটিয়েছেন তারা। জুটিটি ভাঙে মিরাজের অতি আত্মবিশ্বাসে। কায়েস আহমেদের লেগ সাইডে পড়া বলটি সুইপ করতে গিয়ে পেছন দিকের স্ট্যাম্প হারান মিরাজ (১১)। এরপর নবম উইকেটে তাইজুল-মোসাদ্দেকের প্রতিরোধ, যেটি ছিল বাংলাদেশ ইনিংসেরই সবচেয়ে বড় জুটি। এই জুটিটা তৃতীয় দিনের সকালেই ভাঙলো ৫৮ রানে। এই টেস্টে প্রথম ইনিংসে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৪২ রানের বড় স্কোর গড়ে তোলে আফগানরা। ১০২ রান করে আউট হন রহমত শাহ। ৯২ রান করেন আসগর আফগান এবং শেষ মুহূর্তে ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি করেন রশিদ খানও। তাইজুল ইসলাম ৪১ ওভার বল করে নেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন নাইম হাসান এবং সাকিব আল হাসান। ১টি করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/০৭ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2ZH34c3
September 07, 2019 at 09:04AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন