ঢাকা, ১০ অক্টোবর- বিদ্যা সিনহা মিম এক অপরাজিতার নাম। এক দশকের বেশি সময় ধরে ভিন্ন ভিন্ন অবয়বে পর্দায় নিজেকে তুলে ধরেছেন। জয় করেছেন অগণিত দর্শক-হৃদয়। কিন্তু জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কখনও স্রোতের জোয়ারে গা ভাসাননি। এবারের দুর্গাপূজা ছিল উৎসবে মেতে ওঠার চেয়ে ছিল বেশি কিছু। একদিকে সাপলুডু ছবির সাফল্য, অন্যদিকে ওয়েব সিরিজ বিউটি অ্যান্ড দ্য বুলেট নিয়ে দর্শক প্রশংসা। দুটি নতুন বিজ্ঞাপনেও মিমকে দর্শক আবিস্কার করেছেন নতুন রূপে। তাই তো মিম যেখানে গেছেন, সেখানেই শুনতে পেয়েছেন তার কাজ নিয়ে নানাজনের নানা মত। সমালোচনার চেয়ে কাজের প্রশংসাই ছিল বেশি। কারও কারও কথায়, অভিনেত্রী ও মডেল হিসেবে মিম কতটা পরিণত, তা এ সময়ে এসে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অভিনয়ে নিজেকে ভাঙার বিষয়ে আগের চেয়ে সাহসী হয়ে উঠেছেন তিনি। দর্শকের এই কথা কতটা সত্যি তা জানতে চাইলে মিম বলেন, যারা এমন মন্তব্য করেছেন, তাদের ধারণা ভুল, এটা বলব না। অভিনয় বা মডেলিং যেটাই বলুন, প্রতিটি কাজে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি, এটাই সত্যি। শিল্পীরা বেঁচে থাকেন তার কাজের মধ্য দিয়ে- এটা যখন থেকে বুঝছি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জোয়ারে গা ভাসাব না। কী হবে, বাছ-বিচারের কারণে কাজের সংখ্যা কমে যাবে, এই তো? এর বেশি কিছু তো হবে না। কিন্তু আমি যদি বছরে একটি কাজও করি এবং তা যদি দর্শকের মনে ছাপ ফেলে তাহলে যে আত্মতৃপ্তি পাব, তার সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা চলে না। খেয়াল করে দেখেছি, ভুল-ভ্রান্তিগুলো যখন কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তখন সব প্রচেষ্টা ম্লান হয়ে যায়। আমরা যারা মডেল বা অভিনেতা-অভিনেত্রী, তারা তো প্রতিটি কাজে শ্রম-ঘাম ঝরাই। দিনের পর দিন কষ্ট করে একেকটি কাজ শেষ করি। তাহলে সেটা কেন করি না, যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনব হয়ে উঠছে। এসব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেই কাজগুলো করব, যেখানে দর্শক নতুন এক মিমের দেখা পাবেন। মিমের কথা মেনে নিলেও একটা বিষয় অস্পষ্ট থেকে যায়। তাহলো আগে থেকে কীভাবে তিনি বুঝতে পারবেন কোন নাটক, টেলিছবি, বিজ্ঞাপন বা চলচ্চিত্র ভিন্ন ধরনের হবে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মিম বলেন, কোনো সিনেমা বাণিজ্যিক সাফল্য পাবে কি পাবে না, এটা বলা খুবই কঠিন। কিন্তু যে কোনো কাজ করার পর শিল্পী ও কলাকুশলীরা এটা ঠিকই ধরতে পারবেন তা কতটা সময়োপযোগী বা ভিন্ন ধরনের হয়েছে। আমরা যখন কোনো গল্প পড়ি, তখন কিন্তু মনের পর্দায় চরিত্রগুলো নানা দৃশ্যের মধ্য দিয়ে ধরা দেয়। তাতে কিছুটা হলেও অনুমান করা যায়, সেই গল্প দর্শক মনে কতটা ছাপ ফেলতে পারে। যারা পরীক্ষিত পরিচালক, তাদের গল্প উপস্থাপন ও নির্মাণের ধরন থেকেও বোঝা যায়, সেটা কেমন হতে পারে। আর সবশেষে শিল্পীদের অনুধাবন করতে হবে চরিত্র কীভাবে তিনি পর্দায় বাস্তব করে তুলে ধরতে পারবেন। যদি দেখা যায় এমন চরিত্রে কাজ করতে যাচ্ছি, যার জীবনযাপনের ধরন, সমাজে ওঠাবসা, ব্যক্তি স্বভাব- এসবের কোনো কিছুই জানি না, তখন আগে থেকে সেই চরিত্র নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। আত্মস্থ করতে হবে তার স্বভাব, চলাফেরাসহ জীবনযাপনের সবকিছু। যদি ফ্যান্টাসি চরিত্র হয়, সে ক্ষেত্রে পুরোপুরি পরিচালকনির্ভর হওয়া যেতে পারে। কিন্তু চরিত্রে যদি থাকে চেনাজানা মানুষের ছায়া, পর্দায় তা বাস্তব করে তুলে ধরতে পারাটাই অভিনেতা-অভিনেত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ। এমন চ্যালেঞ্জ নিয়েই এখন প্রতিটি কাজ করতে চাই। মিমের কথায় এটা বোঝা গেল, কেন অভিনয়ে নিজেকে ভাঙতে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন। তার পরও তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তার নতুন ছবি সাপলুডু নিয়ে তিনি আশাবাদী ছিলেন? মিম বলেন, সাপলুডু ছবি দেখার জন্য যেসব দর্শক সিনেমা হলে যাবেন, তারা যে নিরাশ হবেন না, এই বিশ্বাস ছিল। থ্রিলারধর্মী গল্প নিয়ে দেশে এমনিতেও খুব কম ছবি তৈরি হয়েছে। তার ওপর এর গল্পে যথেষ্ট বাঁকবদলও আছে। এ ছাড়া তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, সালাউদ্দিন লাভলু, আরিফিন শুভ, রুনা খানসহ ছবির প্রতিটি শিল্পীর অভিনয় এবং পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুলের নির্মাণশৈলী, গল্প উপস্থাপন ভঙ্গি অনেকের ভালো লাগবে বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু ছবি মুক্তির পরপরই এভাবে দর্শক সাড়া পেতে থাকব, তা সত্যি ভাবিনি। তবে এটাই ঠিক যে, অগণিত দর্শক সাড়া পেয়ে মনে হচ্ছে, এ ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। ছবি বাণিজ্যিক সাফল্য না পেলে কিংবা পুষ্প চরিত্রে অভিনয় করে এত দর্শকের সাড়া না পেলেও কী এ কথাই মনে হতো? এর জাবাবে মিম বলেন, কোনো কাজ ভালো না মন্দ হয়েছে, সেটা শেষ করার পর কমবেশি সবাই বুঝতে পারেন। প্রথম থ্রিলার গল্পের কোনো ছবিতে কাজ করলেও এটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, এটা সময়োপযোগী ছবি। নিজের সেরা কাজ তুলে ধরার চেষ্টা ছিল এ ছবির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সবার। কাজ শেষেও এক ধরনের আত্মতৃপ্তি ছিল। শুধু সংশয় ছিল একটা ভালো কাজ করার পরও তা দর্শকের আড়ালে থেকে যাবে কি-না তা নিয়ে। দর্শক ছবিটি দেখছেন এবং ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন, যে জন্য কাজটি সার্থক হয়ে উঠেছে। মিমের এই কথার সঙ্গে একমত হবেন অনেকে। সেই সঙ্গে হয়তো সাধুবাদ জানাবেন অভিনয়ের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়াকে। এর আগে যারা মিমের পদ্ম পাতার জল, পাষাণ, ভালোবাসা এমনই হয়, আমার আছে জল, জোনাকির আলো, সুলতানসহ তার অন্য ছবিগুলো দেখেছেন, তারা এটা স্বীকার করবেন যে, মিম বরাবরই নিজেকে ভিন্ন রূপে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যদিও রোমান্টিক ও হাতেগোনা কিছু অ্যাকশন ছবিতে অভিনয় করেছেন, তার পরও আগের চিন্তাধারা বদলে থ্রিলারসহ অন্যান্য ধারার ছবিতে অভিনয় করতে পিছপা হননি। এর মধ্যে রায়হান রাফির পরিচালনায় পরান ছবির শেষ করেছেন। এটিও রোমান্টিক গল্পের ছবি। তবে মিম এখানে যে কলেজছাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সে চরিত্রে সঙ্গে তার আগের কোনো ছবির চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ ছবিতে তার সহশিল্পী ইয়াস রোহান ও শরিফুল রাজ। শুধু ছবি নয়, লাক্সের পর গ্রামীণফোনের একটি সিরিজ বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সেই সিরিজের দুটি বিজ্ঞাপনের প্রচার শুরু হয়েছে। বাকি দুটি বিজ্ঞাপনও শিগগিরই শুরু হবে। এই বিজ্ঞাপনেও মিম কাজ করেছেন শুধু নতুন এক গল্প থাকার কারণে। পাশাপাশি অনিমেষ আইচ পরিচালিত বিউটি অ্যান্ড দ্য বুলেট দর্শক প্রশংসা কুড়ানোর পর ওয়েব সিরিজ নিয়েও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তিনি। শুনলে অবাক হবেন, ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্রের জন্য মিম নাটক ও টেলিছবির কাজও কমিয়ে দিয়েছেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব শিল্পীর নিজস্ব ভালো লাগা আছে। আমারও ভালো লাগা বড় পর্দা ও নেট দুনিয়ার কাজগুলোর প্রতি। এ কারণেই ওয়েব কনটেন্টগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি। খেয়াল করলে দেখবেন, ওয়েব সিরিজ স্বল্প সময়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এ দেশেও ভালো কিছু ওয়েব সিরিজ নির্মিত হয়েছে। অনেকে এই মাধ্যমটি নিয়ে কাজ করছেন। আমার ধারণা, আর কয়েক বছর পর ওয়েব কনটেন্টগুলোর পরিসর আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণে আরও বাঁকবদল হবে। কিন্তু এটাও ঠিক, নাটক, সিনেমা, টেলিছবি, ওয়েব সিরিজ যেটাই হোক, গল্প ভালো না হলে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেবেন। প্রতিটি কাজের পেছনে আমাদের শ্রম, ভালোবাসা তা যেন বৃথা না যায়, সেদিক খেয়াল রেখেই ভালো কিছু কাজ করে যেতে চাই। যে কাজগুলো আমাকে দর্শকের মাঝে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখবে। আর/০৮:১৪/১০ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Mwinuy
October 10, 2019 at 10:15AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top