আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত মুখ বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন এমন এখন পর্যন্ত ৮ জন ক্রিকেটার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট হিসেব করলে আরও তিনজন এই লিস্টে আসবে। আজীবন নিষিদ্ধ আটজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আধিপত্য বেশি। দুই দেশেরই তিনজন করে ক্রিকেটার আছেন এই লিস্টে। আর অন্য দুইজনের মধ্যে একজন দক্ষিণ আফ্রিকান ও একজন নিউজিল্যান্ডের। তো চলুন পরিচিত হওয়া যাক সেই আটজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ১. সেলিম মালিক : ফিক্সিংয়ের দায়ে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়া প্রথম ক্রিকেটার সেলিম মালিক। ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, টিম মে ও মার্ক ওয়াহকে ঘুষ নিয়ে বাজে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই দোষে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ঘটনার ৬ বছর পর ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হন সেলিম। তবে পরবর্তীতে ২০০৮ সালে লাহোরের স্থানীয় আদালতের আপত্তির কারণে তার আজীবন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে ততদিনে তার ক্রিকেট খেলার মত বয়স আর ছিল না ফলে ব্যাট বল হাতে আর মাঠে নামা হয়নি৷ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ২০১২ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু তার আবেদন গ্রহণ করেনি পিসিবি। ২. আতাউর রহমান : পাকিস্তানের উদীয়মান ফাস্ট বোলার ছিলেন। তিনিও ২০০০ সালে ফিক্সিংয়ের দায়ে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হন। পরে ২০০৬ সালে তার নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয়া হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে আতাউর প্রথমে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ওয়াসিম আকরাম তাকে বাজে বল করার জন্য ১ লাখ পাকিস্তানি রুপি দিয়েছিল। যদিও পরে তিনি তার স্টেটমেন্ট পরিবর্তন করেন। এতে বেঁচে যায় ওয়াসিম আর ফেঁসে যান আতাউর। তখনকার অনেকের মতেই ওয়াসিম আকরামও ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ওয়াসিমের মত বোলারকে হারাতে চায়নি তাই তাকে বাঁচিয়ে বলির পাঠা বানিয়েছিল আতাউর রহমান আর সেলিম মালিককে। কারণ সেলিম মালিকের বয়স তখন ৩৭ খুব বেশিদিন আর খেলতে পারবেনা আর আতাউর রহমান ১৯৯৬ সালের পর পাকিস্তান দলে আর সুযোগ ই পান নি। অন্যদিকে ওয়াসিম আকরাম ছিলেন তখন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে। ৩. দানিশ কেনেরিয়া : পাকিস্তানের ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট ন্যাটওয়েস্ট প্রো৪০ প্রতিযোগিতায় একটি ম্যাচে তার ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে ২০১০ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড তাকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০১০ সালে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের স্কোয়াডে ছিলেন দানিশ কেনেরিয়া কিন্তু এ ঘটনার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড স্কোয়াড থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে কেনেরিয়া নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে আপিল করলেও ২০১৩ সালে তা নাকোচ করে দেয়া হয়। ৪. মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন : হ্যানজি ক্রনিয়ে ও আজহারউদ্দিনের নিষেধাজ্ঞা ওতোপ্রতভাবে জড়িত। ২০০০ সালে ক্রনিয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ আনা হলে বিশদ তদন্তে আজহারের নাম বের হয়ে আসে। ক্রনিয়ে জানায়, ১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে আমি আজহারের ফোন পাই। তিনি আমাকে সন্ধ্যায় রুমে ডাকেন। সেখানে তিনি আমাকে মুকেশ গুপ্তা নামক এক বুকির (জুয়াড়ি) সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে একা রেখে আজহার চলে যান। এরপর তদন্তে বের হয়ে আসে ১৯৯৬ সালে রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালের পেপসি কাপে ম্যাচ ফিক্সিং এর সাথে আজহারের জড়িত থাকার ঘটনা। এতে আজহারকে আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর কারণে আজহারকে ৯৯টি টেস্ট খেলেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয়েছিল। খেলা হয়নি ১০০ টেস্ট। ২০১২ সালে আজহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি একজন রাজনীতিবিদ। বিখ্যাত বলিউড নায়িকা সঙ্গীতা বিজলানীকে বিয়ে করেছিলেন আজহার। তাকে নিয়ে বলিউডে ছবিও নির্মাণ হয়েছে যা সবারই জানা। ৫. হ্যানজি ক্রনিয়ে : আজহারউদ্দিনের ঘটনায় ক্রনিয়ের কাহিনীও জড়িত। ওই সময় ফিক্সিংয়ের কারণেই আজীবন নিষিদ্ধ হন ক্রনিয়ে। ক্রনিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। তার অধীনে ৯৯ টি ওয়ানডে ও ২৩টি টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০০ সালে ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত থাকায় আজীবন নিষিদ্ধ হন তিনি। ২০০২ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন ক্রনিয়ে। তবে তার মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা বলে অনেকেই মেনে নেন না। তাদের ধারণা ক্রনিয়ের মৃত্যুর পেছনে জুয়াড়িদের হাত আছে। ২০০০ সালে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হলেও ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের সেরা অধিনায়কের ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ৬.অজয় শর্মা : প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০ হাজারের বেশি ম্যাচ খেলেছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে গড়ের দিক দিয়ে অজয় শর্মা তৃতীয় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার গড় ছিল ৬৭ এর উপরে। এমন একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার ভারতের হয়ে খেলেছিল মাত্র ১ টি টেস্ট ও ৩১ টি ওয়ানডে। ২০০০ সালে ক্রিকেটের কালো অধ্যায়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ের আজহারউদ্দিনের সাথে অজয় শর্মাও আজীবন নিষিদ্ধ হয়। পরে ২০১৪ সালে তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বয়স ততদিনে তার ৫০ পার হয়ে যায়। ৭.শান্তাকুমারান শ্রীশান্ত : শ্রীশান্তের নিষিদ্ধের ঘটনা এই প্রজন্মের কমবেশি সবাই জানেন। ২০১৩ সালে আইপিএলে ফিক্সংয়ের দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ হন শ্রীশান্ত। ২০১৩ সালের ১৬ মে দিল্লি পুলিশ শ্রীশান্তকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের দায়ে গ্রেফতার করে। পরদিন শ্রীশান্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে। তার সাথে রাজস্থান রয়েলসের আরেক খেলোয়াড় অঙ্কিত চৌহানকেও আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। ৮. লো ভিনসেন্ট : বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) একটি ম্যাচে তার ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। এরপর ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি ম্যাচে আবারও ফিক্সিং করায় আজীবন নিষিদ্ধ হন। সূত্র: বিডি২৪লাইভ আর/০৮:১৪/৩০ অক্টোবর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2NphGUB
October 31, 2019 at 04:33AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top