ঢাকা, ০৭ অক্টোবর - ২০১৭ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। গেল দুই বছর ভালো-মন্দেই কেটেছে তাদের। বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ দিয়ে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন তেমনি অনেক কার্যক্রম তাদের তুলেছে অভিযোগের কাঠগড়ায়। ক্ষমতায় বসে সমিতিতে নানা অনিয়মে জড়িয়েছেন মিশা-জায়েদ। তারমধ্যে অন্যতম হয়ে দেখা দিয়েছে সমিতির সদস্য যোগ বিয়োগে অস্বচ্ছতা। সেইসঙ্গে সমিতির আয় ও ব্যয়ের যে হিসাব সেখানেও রয়েছে গন্ডগোল। এসব নিয়ে কাউকে মুখ খুলতে দেন না সভাপতি ও সেক্রেটারি। প্রসঙ্গ আসলেই নানা বাহানায় এড়িয়ে যান বলে দাবি করেছেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সম্প্রতি গেল দুই বছরে সমিতির নানা বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। মিশা-জায়েদ নেতৃত্বে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন এই নায়ক। গত নির্বাচনে শিল্পী সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ৬২৪ জন। মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল ক্ষমতা নেয়ার পর এ তালিকা থেকে ১৮১ জন ভোটারের ভোটাধিকার খর্ব করে কেবল সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। যারা এবার ভোট দেয়ার অধিকার পাবেন না। অন্যদিকে সংগঠনের নিয়ম না মেনে নতুন করে ২০ জন শিল্পীকে করা হয়েছে ভোটার। সমিতির নানা আয়োজনে তাদের আয়-ব্যায়ের গড়মিলের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, শিল্পী সমিতি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না। কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান না। এটা কারো ব্যাবসা না। এটা কারো পৈতৃক সম্পদ না। শিল্পীদের কল্যাণের জন্য এই সমিতি করা হয়েছে। যেখানে শিল্পীরা একত্রিত হবেন, বসবেন, গল্প করবেন, নিজেদের সুখ দুঃখ শেয়ার করবেন, নিজেদের সমস্যার সমাধান করবেন। এফডিসি আমাদের একটা জায়গা দিয়েছে। সেখানে শিল্পী সমিতির কার্যালয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ এটাকে সম্মান করা। এটা কারো ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা উচিৎ নয়, যেটা এখন হচ্ছে। এখন যারা আছেন তারা এটাকে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। অনিয়মের আখড়া যেন শিল্পী সমিতি। যাদের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নেই তাদের তারা ভোট পাওয়ার জন্য সদস্য বানিয়েছেন। অনেক যোগ্য লোক সদস্যপদ হারিয়েছেন। কিছু শিল্পীর নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। যারা শিল্পী সমিতির পদ আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। তারা নিশ্চয় কোনো না কোনোভাবে লাভবান হন এখান থেকে। নইলে এত টাকা ঢেলে, ক্ষমতা দেখিয়ে কেন নির্বাচনের ছক কষবেন! শিল্পীদের তো এসব রাজনীতি মানায় না। আফসোস করে এ নায়ক বলেন, একটা অশুভ শক্তি কাটাতে গেল নির্বাচনে সবাই এক হয়েছিলাম। দুঃখের ব্যাপার এবার নিজেদের ভেতরেই সেই নোংরা অশুভ আরেকটা শক্তির পয়দা হয়েছে। শিল্পীদের এক হওয়ার বিকল্প নেই। এইসব অ-শিল্পীর নেতৃত্ব থেকে শিল্পী সমিতিকে বাঁচাতে হবে। আমি যদি শিল্পীদের পাশেই দাঁড়াতে না পারি। আমি ওখানে কেনো যাব? তারা যাচ্ছে যাদের হাতে কোনো সিনেমা নাই। তারা গিয়ে ওখানে বসে আছে। দিন রাত ২৪ ঘন্টা সমিতিতে বসে থাকে। এটাকে নিজের পার্সোনাল অফিস হিসেবে ব্যবহার করে। এটা খুব বাজে ব্যপার। অন্যায়ভাবে শিল্পীদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে, এটা কী ঠিক হয়েছে! যারা শিল্পীদের সম্মান করতে জানেন না, তাদেরকে আমি শিল্পীই মনে করি না। এই সমস্ত কিছু মানুষের হাতে শিল্পী সমিতি পড়ে আছে। গেল দুই বছরে অনেক কিছু দেখা হয়েছে। কিছু বলতে গেলেই তোষামোদ করে, নানাভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাহলে আপনারা যারা শিল্পী সমিতি নিয়ে ভালো কিছু স্বপ্ন দেখেন, প্রত্যাশা করেন তারা কেন এগিয়ে আসছেন না? কেন আপনারা কেউ নির্বাচনে নেই এই বছরে? জবাবে ফেরদৌস বলেন, আমি বলবো আমার হাতে অনেক কাজ আমি সেই সময়টা দিতে পারব না। আমার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব আমি শিল্পীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। এটা শিল্পীরাও ভালো জানেন। শিল্পীদের জন্য কিছু করতে আসলে সংগঠনের জন্য বেশি জরুরি মানসিকতা। সেটা আমার আছে ইনশাল্লাহ। কিন্তু এখন শিল্পী সমিতিতে যে অনাচার শুরু হয়েছে এটার সমাধান হওয়া দরকার। এটাতো একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এখান থেকে তো কেউ বেতন পাচ্ছে না। তাহলে যারা এটাকে আঁকড়ে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করছে তাদের কেন এতো আগ্রহ? কেন এখানে তারা এতো টাকা খরচ করে। শুনেছি নির্বাচন করতে নাকি ২০ লাখ ৩০ লাখ টাকা তারা খরচ করে। তারা ভোট কেনে। শিল্পীদের বোঝা উচিৎ তারা প্রতি ভোটের সময় একবার করে তাদের কাছে বিক্রি হবে কী না! কারণ বিক্রি হলে প্রতিনিধিদের কাছে জবাবদিহি চাওয়ার সাহসটা মরে যায়। গতবার আমিও নির্বাচন করেছিলাম। আমার মাত্র ৬০০ টাকা খরচ হয়েছিলো। তারা নাকি ৩০ লক্ষ ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে এখানে নির্বাচন করেছে। কেন? কিসের লাভ তাদের, কীসের লোভ তাদের? এটা বুঝতে পারছি না। এটা খতিয়ে দেখা উচিত সবার। আর সদস্যদের উচিৎ সঠিক মানুষকে নির্বাচিত করা। আমি এবার নতুনের পক্ষে। সদ্য শেষ হওয়া এজিএমে কমিটির সহসভাপতি রিয়াজের সঙ্গে বিতর্কিত আচরণ করা হয়েছে দাবি করে হঠাৎ বৃষ্টিখ্যাত নায়ক ফেরদৌস বলেন, শুক্রবার এজিএমে রিয়াজের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে সেটা মেনে নেয়ার মতো কী? শতবছর গেলে যার মতো একজন শিল্পীর জন্ম হবে না তার মতো একজন মানুষকে এজিএমে নিয়ে গিয়ে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। এটা তো ঠিক না। তারা এজিএমের নামে তাদের নতুন প্যানেলের পরিচিতি দিয়েছে। এটাও তো অন্যায়। তারা কথায় কথায় বলে তারা নাকি সিনিয়র শিল্পীদের সম্মান করে। যারা মুখে সম্মান নিয়ে ফেনা তুলে তারা কখনোই আসলে সম্মানটা অন্তর থেকে করে না। সবই লোক দেখানোর জন্য। আমার সামনে অনেক সিনিয়র শিল্পীকে গালাগাল করেছে তারা। অঞ্জনা আপার মতো একজন শিল্পীকে যখন তাদের পাশে দেখি আমি বিস্মিত হই। তিনি কী নিজের ব্যক্তিত্ব, সম্মানবোধ হারিয়ে ফেলেছেন? কী করে তিনি সব ভুলে এদের সাথে আবার দল বাঁধতে পারেন। সমিতিকে ঘিরে তারা যে আচরণগুলো করছে। অন্যের কল্যাণ করতে এসে কেউ যদি নিজের কল্যাণ করতে শুরু করে তাহলে তো বিপদ। এই সমিতির কোনো শিষ্টাচার থাকবে না। কয়েকদিন পরে আমাদের বলবে তোমারা এফডিসি থেকে বেরিয়ে যাও। শিল্পী সমিতির নানা অনাচার নিয়ে এ নায়ক বলেন, বিভিন্ন ক্লাব ও সমিতির নামে ঢাকা শহরে যে ধরণের অনাচার চলছে, শিল্পী সমিতিতে এখন যা হচ্ছে সেগুলোর চেয়ে কম না কিন্তু। সমিতির একটা নির্দিষ্ট সময় থাকবে এটা কখন খুলবে, কখন বন্ধ হবে। কারও ইচ্ছে হলে সেখানে রাত বারোটা পর্যন্ত আড্ডা মারতে পারবে না। শিল্পী সমিতি রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কেন? কী প্রয়োজনে? কী হয় সেখানে? এফডিসির কর্মকর্তারা বিরক্ত এভাবে রাত বিরাতে সমিতি খুলে রাখায়। কোনো জবাবদিহিতা নেই। নিজের খুশিমতো পিকনিকে খরচ করে, কাউকে কোনো হিসেব দেয় না। আমাদের চলচ্চিত্র দিবসের ২৫ লক্ষ টাকার কোনো হিসেব নেই। একটা শিল্পী অসুস্থ হলে তাকে ৫০০০ টাকা দেয়। তারা আবার ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পিকনিক করে। এটা তো কল্যাণ নয়, নিজের ব্র্যান্ডিং করা। একজনকে দেখতে গেলাম, ফেসবুকে ছবি দিয়ে সাংবাদিক ডেকে নিউজ করালাম, ব্যাস হয়ে গেল। তারা বলে আমরা শিল্পীদের খোঁজ নেই না। আমরা তাদের মতো ব্র্যান্ডিং করি না। আমরা কেমন সেটা এই ইন্ডাস্ট্রি বিশ বছর ধরেই জানে। একজন অ-শিল্পী শিল্পীদের ঘাড়ের উপর বসে নিজের ব্র্যান্ডিং করে যাচ্ছে আর সবাই এটা সহ্য করছে। আমি এটা সহ্য করবো না। আমি এবার নির্বাচন করিনি। কারণ হলো নির্বাচনের তারিখ পেছাতে বলেছিলাম। দুটি সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ততা। মিস ওয়ার্ল্ডের বিচারক হিসেবে কাজ করছি। তাই তারিখটা পেছাতে বলেছিলাম। মিশার পক্ষের লোকজন নির্বাচন পেছানোর পক্ষে ছিলেন না। পরে নিজেদের প্রয়োজনে তারা ঠিকই নির্বাচন পিছিয়েছে। আসলে কী বলবো, ক্ষমতায় থাকতে ওরা যে কী পরিমাণের পলিটিক্স শিখেছে এবং করছে সেটা কেউ অনুমানও করতে পারবে না। দিনে এক, দুপুরে এক, সন্ধ্যায় এক আর রাতে আরেক। মুখে সম্মানের ফেনা তুলে সিনিয়রদের বলা চলে জিম্মিই করে রেখেছে। কারণে যে সিনিয়র শিল্পীকে নিয়ে তারা অসম্মানসূচক কথা বলেছে সেই সিনিয়র শিল্পীকেও তাদের হয়ে নির্বাচনে কথা বলতে দেখছি। স্ট্রেঞ্জ! চিত্রনায়কা মৌসুমীর প্যানেল থেকে তো আপনিসহ অনেক তারকারই নির্বাচন করার কথা ছিলো, কিন্তু পরে সবাই সরে গেলেন কেন? জবাবে ফেরদৌস বলেন, এবারও নির্বাচন করার ইচ্ছে ছিলো সদস্য পদে। মৌসুমীর প্যানেল থেকেই করতাম। আলাপও হয়েছিলো। কিন্তু ওই যে সময়ের অভাব। পাশাপাশি কিছু ঝামেলাও ছিলো প্যানেল নিয়ে। সেসব এখন না বলি। হয়তো একদিন সবাই জানবে। তো এসব কারণেই শেষ পর্যন্ত প্যানেলটা গোছানো হয়নি। তবে আমি মৌসুমীর সফলতা কামনা করছি। আমি চাই তার মতো ব্যক্তিত্ব শিল্পী সমিতিকে গর্বিত করুক। এন এইচ, ০৭ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/35c6TVQ
October 07, 2019 at 10:55AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন