ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর - এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ধুঁকছে ঢাকাই সিনেমা। ভালো ও মৌলিক গল্পের অভাব, ভালো নির্মাণের অভাব, হল নিয়ে নোংরা রাজনীতি, তারকায় তারকায় বিভেদ, পরিচালক-প্রযোজক-শিল্পীসহ কলাকুশলীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, সিনেমা বাজারজাতকরণের দুর্বলতা, শ্রুতিমধুর গানের অভাব; নানা সংকটে জর্জরিত এই শিল্পটি বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে আছে বলা চলে। ৬ ঋতুর বছরে ৬টি ব্যবসা সফল ছবির দেখাও পাওয়া যায় না ইন্ডাস্ট্রি। ব্যবসা সফল শব্দটি তো বিরল প্রজাতির শব্দেই পরিণত হয়েছে। সিনেমা তৈরির কারখানা বিএফডিসির চারদিকে বিষাদের ছাপ। পুরনো দালানগুলোর চারদেয়াল ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকতেই যেন পরগাছা শ্যাওলায় মুখ লুকিয়েছে। যেখানে শুটিং আর আড্ডায় মুখর হয়ে উঠতো পরিবেশ সেখানে আজ বছরের ১০ মাসই বাজে নির্জনতার করুণ সুর! রোজ রোজ মিটিং হয়, মিছিল হয়, ঘোষণা আসে সিনেমার উন্নতির ভাবনায়। সেসবের কোনো বাস্তবায়ন নেই। পরিচালক, স্টার-সুপারস্টার, প্রযোজকসহ সিনেমার সকল বিভাগের মানুষদেরই যথেষ্ট যোগান আছে এখানে। তাদের হয়ে সমিতিগুলোও সারা বছর থাকছে আলোচনায়। কিন্তু সিনেমার উন্নয়ন হচ্ছে না কিছুতেই। অনেক প্রত্যাশার প্রযোজক সমিতি নতুন করে গঠিত হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। চার মাস পার হয়ে গেলেও ২১ জন নিয়ে নির্বাচিত কমিটির ১ জনও একটা সিনেমার ঘোষণা দিতে পারলেন না! সবাই নানা সমস্যার কথা বলেন প্রতিদিন। সমাধানের পথও বাতলে দেন। নানা উদ্যোগের কথাও শোনা যায়। তবুও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দুর্দিনের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পারছে না ঢাকাই সিনেমা। ভাবটা এমন, বিরাট কোনো রহস্যময় সমস্যায় আটকে গেছে ঢালিউড। জেমস বন্ড বা ফেলুদার মতো কাউকে হয়তো নিয়োগ দিতে হবে এই রহস্যের জট খুলতে। তবুও আশাবাদী মানুষ। স্বপ্ন দেখাই মানুষের প্রকৃতি। সবাই স্বপ্ন দেখছে। কিছু একটা হবে। কোনো একটা মিরাকলে ফিরবে সুদিন। কিন্তু সেটা কবে কীভাবে কার হাত ধরে হবে তা অজানা। আপাতত মন দেয়া যেতে পারে আসছে বছরে মুক্তি পাবে এমন ছবিগুলোর দিকে। ছবির নাম-মান, পরিচালক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, শিল্পীদের তালিকা কিছুটা হলেও যেন আশা জাগায় ভালো একটা বছরের। আলোচনা শুরু করা যায় অপারেশন সুন্দরবন ছবি দিয়ে। ঢাকা অ্যাটাক খ্যাত পরিচালক দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত এই ছবিটি তৈরি হচ্ছে সুন্দরবনে র্যাবের কিছু দঃসাহসিক অভিযানকে কেন্দ্র করে। সফল পরিচালক, নায়ক রিয়াজের প্রত্যাবর্তন, সফল নায়ক সিয়াম, দুই বাংলার পরিচিত মুখ নুসরাত ফারিয়া, সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা রোশান, মনোজ প্রামাণিক, তাসকিন রহমান, শতাব্দী ওয়াদুদের মতো তারকারা ছবিটির রোশনাই বাড়িয়েছেন। তবে এই ছবির মূল নায়ক হবে গল্প ও অভিযানের দৃশ্যগুলো। যা দর্শককে হলে টানবে। সেইসঙ্গে র্যাব সদস্যদে অংশগ্রহণও ছবিটিকে বাড়তি আকর্ষণ দেবে। ২০২০ সাল মাতাবেন শাকিব খান, এটাও আগাম বলে দেয়া যায়। এই অসময়েও শাকিব সেই তারকা যার নামে দর্শক হলে আসে। হল মালিকরা যার উপর ভরসা করে চোখ বন্ধ রেখেই সিনেমা চালান। আসছে বছর এই নায়কের বীর, শাহেনশাহ, একটু প্রেম দরকার ছবিগুলো মুক্তি পাবে। তারমধ্যে কাজী হায়াত পরিচালিত বীর ছবিতে বুবলীকে নিয়ে বাজিমাত করবেন শাকিব এই প্রত্যাশা করছেন সবাই। নুসরাত ফারিয়ার ও রোদেলা জান্নাতের সঙ্গে শাহেনশাহ ছবিটিও ভালো চলবে বলে আশা করা যায়। সেইসঙ্গে শাহীন সুমনের একটু প্রেম দরকার ছবিতে শাকিবের বিপরীতে আছেন বুবলী। শাকিব-বুবলী জুটির ছবি সাধারণত সবসময়ই দর্শক পেয়েছে। সেদিক থেকে এই ছবি দিয়ে সফল হবেন দুই তারকা আশা করাই যায়। ২০২০ সালে চমক দেখাবেন আরিফিন শুভও। বেশ কিছু ছবি দিয়ে বাজিমাত করবেন তিনি, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। তার ভিড়ে আপাতত নাম নেয়া যায় মিশন এক্সট্রিম ছবিটির। ঢাকা অ্যাটাকর বিশাল সাফল্যের পর একই প্রযোজনা সংস্থা নির্মাণ করছে ছবিটি। এখন পর্যন্ত সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ বেশ। আগের সিনেমার মতো এই সিনেমাতেও আছেন আরেফিন শুভ, তাসকিন আহমেদ, শতাব্দী ওয়াদুদের দেখা মিলবে। নতুন করে তাদের সঙ্গী হয়েছেন মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ঐশী, মনোজ কুমার, ইরেশ যাকেরসহ আরো অনেকে। ২০২০ সালে পাপ পূণ্য নামের নতুন ছবি নিয়ে আসছেন মনপুড়াখ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম। দীর্ঘদিনের বিরতি ভেঙে ২০১৮ সালে স্বপ্নজাল নিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। সেই ছবি ব্যবসা না করলেও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবার তিনি নির্মাণ করছেন লাভ থ্রিলজি ধাঁচের সিনেমা। দর্শক এই ছবির মধ্য দিয়ে আবারও একসঙ্গে পেতে যাচ্ছেন মনপুড়া ছবির পরিচালক-নায়ক জুটিকে। সেলিমের পরিচালনায় আবারও চঞ্চল চৌধুরীকে দেখবেন দর্শক। সেইসঙ্গে ছবিটিতে চমক হিসেবে থাকবে জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম আহমেদের সঙ্গে নতুন মুখ শাহনাজ সুমী। আরও আছেন সবার প্রিয় আফসানা মিমি, ফজলুর রহমান বাবুর মতো তারকারা। ২০২০ সালটা হতে পারে পরিচালক রায়হান রাফীর রাজত্বের বছর। একে একে মুক্তি পাবে তার তিনটি সিনেমা। তারমধ্যে দর্শকপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকতে পারে তার ইত্তেফাক ছবিটি। এখানে চিত্রনায়ক সিয়ামের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বিদ্যা সিনহা মিম। পাশাপাশি রাফীর পরিচালনায় পরাণ ছবিটি মুক্তি পাবে ভালোবাসা দিবসে। ইয়াশ রোহান ও শরীফুল রাজের এই ছবিতে দেখা যাবে লাক্স সুপারস্টার মিমকে। ত্রিভূজ প্রেমের এই ছবিটি নিয়ে এরইমধ্যে দর্শকের বেশ আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। সর্বশেষ স্বপ্নবাজি নামের একটি ছবি নির্মাণ করছেন পোড়ামন ২খ্যাত নির্মাতা রাফী। এখানে মাহিয়া মাহি, পিয়া জান্নাতুল ও সিয়াম আহমেদকে দেখা যাবে। তবে ছবিটির ভবিষ্যত নিয়ে আছে নানা সংশয়। টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম চলচ্চিত্র হাওয়া নিয়েও বেশ আশাবাদী সিনেমার মানুষেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ করা গেছে দর্শকেরও। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে আছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজসহ আরো অনেকে। ২০২০ সাল নায়কদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন সিয়াম আহমেদ। এখন পর্যন্ত যা হিসেব তাতে করে হাফ ডজনেরও বেশি সিনেমা মুক্তি পাবে তার। সেই তালিকায় অন্যতম নাম শান। আগামী ঈদ উল ফিতরে মুক্তি দেবার লক্ষ্যে পুলিশ থ্রিলার ছবিটি নির্মাণ করছেন নবীন নির্মাতা এম রহিম। সিয়াম, পূজা ও তাসকিন অভিনীত সিনেমাটি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন অনেকেই। জয়া আহসান এখন পুরোদস্তুরই কলকাতার অভিনেত্রী। কালেভদ্রে তাকে দেখা যায় ঢাকাই সিনেমাতে। ২০২০ সালে তাকে বিউটি সার্কাস ছবিতে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শক। মাহমুদ দিদার পরিচালিত ছবিটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে চারদিকে। ভিন্ন ভাবনার এই ছবিটিতে জয়ার বিপরীতে দেখা যাবে চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে। আরও অভিনয় করছেন তৌকীর আহমেদসহ অনেকেই। এছাড়া জয়ার প্রযোজনায় ফুড়ুৎ ছবিটির দেখাও এই বছরে মিলতে পারে। ঢাকাই সিনেমার সফল দুই চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক ও বাপ্পী চৌধুরীকেও নতুন করে পাবেন দর্শক। সাইমন পর্দায় আসবেন মাহিয়া মাহিকে নিয়ে আনন্দ অশ্রু ছবিতে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের নির্মাণে রোমান্টিক গল্পেই দেখা যাবে তাদের। ২০১৮ সালের জান্নাত সিনেমার মতো আনন্দ অশ্রু দিয়ে দর্শক মাতাবেন সাইমন-মাহি এই প্রত্যাশা করাই যায়। অন্যদিকে চিত্রনায়ক বাপ্পী নিজেকে আমূল বদলে নিয়ে হাজির হবেন ঢাকা ২০৪০ ছবিতে। দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত এই ছবিতে বাপ্পীর নায়িকা নুসরাত ফারিয়া ও নুসরাত ইমরোজ তিশা। এছাড়াও বাপ্পীর ডেঞ্জার জোন ছবিটি দর্শক টানতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানে তার নায়িকা হিসেবে দেখা যাবে জলিকে। ২০২০ সালে সাফল্যের নির্মাতা হতে পারেন দেশা দ্য লিডারখ্যাত নির্মাতা সৈকত নাসিরও। তার দুটি ছবি মুক্তি পাবে। যার একটি নিরব-বুবলীকে নিয়ে ক্যাসিনো। বেশ জমজমাট এক গল্পে এই ছবিটি নির্মাণ করছেন তিনি। আর দর্শককে উপহার দিচ্ছেন নায়ক নিরবের সঙ্গে বুবলীর জুটিকে। এখানে আরও অভিনয় করছেন তাসকিন রহমান। অন্যদিকে নায়ক ইমনকে নিয়ে সৈকত নাসির নির্মাণ করবেন আকবর। এই ছবিতে ইমনের বিপরীতে প্রথম সারির একজন অভিনেত্রীর দেখা মিলবে। রোমান্টিক থ্রিলারধর্মী এই ছবিটিও দর্শক মাতিয়ে দিতে পারে। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় পরিচালক অনন্য মামুনও হাজির থাকবেন নতুন বছরের সাফল্যের প্রতিযোগিতায়। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন সাইকো নামের একটি ছবি নির্মাণের। রোশান ও পূজাকে জুটি করে এই ছবিটি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন তিনি। ২০২০ সালটা ভালো কাটবে চলচ্চিত্র পরিচালক সাইফ চন্দনের। এরই মধ্যে ওস্তাদ নামে ছবির ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করেছেন তিনি। ছবিতে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান ও নবাগত উষ্ণ। আরও রয়েছেন তাসকিন, শানুশিবা, ডন প্রমুখ। এ ছবি ছাড়াও সাইফ চন্দন গুছিয়ে নিয়েছেন মন্ত্র নামের আরেকটি ছবির প্রাথমিক কাজ। শিল্পী হিসেবে শোনা যাচ্ছে সিয়াম ও জয়া এখানে কাজ করতে পারেন। যদি এমনটি হয় তবে আসছে বছরের সফল ছবির তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে মাসুম রেজার চিত্রনাট্যের এই সিনেমা। ফেরদৌস-পূর্ণিমা জুটির গাঙচিল ছবিটিও মুক্তি পেতে পারে ২০২০ সালে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবিটি নির্মাণ করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। একই পরিচালক আরিফিন শুভ ও পূর্ণিমাকে নির্মাণ করছেন জ্যাম নামের আরও একটি ছবি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই ছবিটিও মুক্তি পাবে নতুন বছরে। জাজ মাল্টিমিডয়ার ব্যানারে সিনেমায় আসতে চলেছেন ছোটপর্দার সুপারস্টার সজল। পূজাকে নিয়ে তিনি জ্বিন ছবিতে হাজির হবেন নাদের চৌধুরীর পরিচালনায়। জাজের ঘোষণা অনুযায়ী মাসুদ রানা ছবিটিও ২০২০ সালে মুক্তির জন্য নির্মিত হবার কথা। তবে এখন পর্যন্ত ছবিটির শুটিং শুরু হয়নি। এছাড়াও মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ঐশী অভিনীত আদম, পরীমনি অভিনীত বিশ্বসুন্দরী, স্পর্শিয়ার কাঠবিড়ালী, কেয়া অভিনীত ইয়েস ম্যাডাম ছবিগুলো ভিন্ন ভিন্ন ধারার দর্শককে বিনোদিত করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা যায়। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তি পাবে অমিতাভ রেজার রিক্সা গার্ল ছবিটি। অন্যদিকে সেন্সর বোর্ডের জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে প্রশংসিত একটি ছবি হিসেবে তালিকা সমৃদ্ধ করতে পারে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর শনিবার বিকেল। তানভীর মোকাম্মেলের রূপসা নদীর বাঁকে ছবিটিও ভিন্ন ভাবনার দর্শকের মন ভরাতে পারে। এছাড়াও নতুন বছরে মুক্তি পাবে বলে আরও বেশ কিছু সিনেমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে আছে শাবনূরকে নিয়ে জাজ, কলকাতার দেবকে নিয়ে শাপলা মিডিয়ার ছবি দুটো উল্লেখ করা যায়। এ তালিকায় আরও আছে তৌকীর আহমেদের ঘোষণা দেয়া ছবি। ছবিগুলো যদি নির্মিত হয় তবে সেগুলো আলোচনার শীর্ষে থাকবে তা অনুমান করা যায়। সেইসব ছবির গল্প ও কলাকুশলীদের উপর নির্ভর করে ২০২০ সাল হতে পারে ঢাকাই সিনেমার জন্য সফল একটি বছর। এন এইচ, ৩১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2SJJreH
December 31, 2019 at 11:39AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top