চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় অর্জন কী?- যদি এমন একটা প্রশ্ন বার্সেলোনা সমর্থকদের করা হয়, তাহলে উত্তর পাওয়া যাবে- কোচ আর্নেস্ত ভালভার্দের বিদায় এবং তার জায়গায় নতুন কোচ কিকে সেতিয়েনের আগমন। গত কয়েক দশকে বার্সেলোনার সমর্থকদের মনে সবচেয়ে অপছন্দের কোচ যে ভালভার্দে তা বলা অপেক্ষা রাখে না। লুই ফন গালের পর বার্সেলোনার মাত্র দ্বিতীয় কোচ হিসেবে তাকে বরখাস্ত করেছে দলটি। দুটি লা লিগা জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বাজে পারফরম্যান্স ও প্রতিপক্ষের মাঠে খেই হারানো খেলার মাশুল গুনতে হয়েছে তাকে। সমর্থকদের কাছেও ম্লান তার এসব অর্জন। তবে ভালভারদের স্থলাভিষিক্ত হওয়া সেতিয়েন কেমন হবে- এ নিয়ে চলেছে জল্পনা কল্পনা। বার্সেলোনা কি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ঘরোয়া লিগে আগের মতো সেই দাপটের সঙ্গে খেলতে পারবে কি না, সেটা নিয়েও চলছে গুঞ্জন। বার্সেলোনার হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচ দুটোই এখন আলোচনার বিষয় ফুটবল পাড়ায়। সেতিয়েনকে নিয়ে চারদিকে আলোচনা-সমালোচনা হলেও তিনি বার্সা কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফের খেলার দর্শনের একজন ভক্ত হিসেবে পরিচিত। কোচিং ক্যারিয়ারে দুই স্প্যানিশ ক্লাব লাস পালমাস ও রিয়াল বেটিসে সেরকম খেলারই প্রদর্শন করেছেন সেতিয়েন। রিয়াল বেটিসের হয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ন্যু ক্যাম্পেই হারিয়েছেন বার্সেলোনাকে। যার মাধ্যমে ৪২ ম্যাচ পর হারের স্বাদ পায় বার্সোলোনা। ২০১৭-১৮ মৌসুমে লীগের দুই ম্যাচেই হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকেও। ফুটবলের বাইরে সেতিয়েন একজন দক্ষ দাবাড়ুও। সৈন্য দিয়ে দাবার ঘরের রাজা-মন্ত্রীকে রক্ষণ করেই খেলেছেন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপও। এতেই বোঝা যায় সেতিয়েন একজন পাকা মস্তিষ্কের ব্যক্তিত্ব। তিনি পছন্দ করেন প্রতিপক্ষের কৌশলের বিপক্ষে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে নামতে। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে কেমন হবেন কিকে সেতিয়েন এবং মৌসুম জুড়ে কী ধরনের ফরমেশনে খেলতে পারে বার্সেলোনা সে বিষয়টি তুলে ধরা হলো- ফুটবল দর্শন ব্যক্তিগত ফুটবল ক্যারিয়ারে সেতিয়েন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন। এজন্যই হয়তো আক্রমণাত্মক ফুটবল বেশি পছন্দ করেন তিনি। বল দখলে রেখে পাসিং ও হাই প্রেসিং ফুটবলে বিশ্বাসী তিনি। সেখানে ওয়ান টু ওয়ান ম্যান মার্কিংয়ের মাধ্যমে খেলিয়ে থাকেন তিনি। তবে তার খেলার সবচেয়ে বড় দিক হলো, দুই উইংব্যাককে দিয়ে আক্রমণ করা। এতে দলের ফরোয়ার্ডরা নিজেদের মধ্যে আরও কাছাকাছি থাকার সুযোগ পায়। যার কারণে খেই হারিয়ে ফেলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা। সুযোগ সৃষ্টি হয় গোলের। উইংব্যাকের খেলোয়াড়রা উপরে উঠে গেলে নিজেদের ডিফেন্সে ওয়াইড এরিয়াগুলোতে বেশি ফোকাস করে দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডাররা। সেক্ষেত্রে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে একজন সেন্ট্রাল ব্যাকের মতোই খেলতে দেখা যায়। ফরমেশন মূলত ৪-৩-৩ ফরমেশনটাই বেশি পছন্দ করেন ৬১ বছর বয়সী এ কোচ। রিয়াল বেটিস ও লাস পালমাসকে তিনি এ ফরমেশনেই বেশি খেলিয়েছেন। সেক্ষেত্রে দুজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, দুজন ফুলব্যাক/উইংব্যাক, তিন জন মিডফিল্ডার ও একজন বক্স স্ট্রাইকার সহ তিনজন আক্রমণ সামলাবে। এই ফরমেশনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের রক্ষণভাগেই বেশি নজর দিতে হয়। আর দুজন হোল্ডিং মিডফিল্ডার মাঝমাঠ সামলাবে। আর দুই ফুলব্যাক রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণেও যোগ দেবে। মাঝেমাঝে ৩-৪-৩ ফরমেশনেও খেলিয়ে থাকেন সেতিয়েন। সেক্ষেত্রে তিনজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার, চারজন মিডফিল্ডার ও তিনজন আক্রমণে থাকেন। এই ফরমেশনেও ডানে-বামে দুইজন উইংব্যাকের মতো খেলে থাকে। তবে খেলার ধরন অনুযায়ী অন্য যেকোনো ফরমেশনে খেলাতে পারেন তিনি। যেমন হতে পারে সেতিয়েনের লাইনআপ ৪-৩-৩ ফরমেশন: গোলরক্ষক- মার্ক টের স্টেগান; সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার- ক্লেমেন্ট লংলে, জেরার্ড পিকে; রাইট ব্যাক- সার্জিও রবার্তো/নেলসন সেমেদো; লেফট ব্যাক- জর্ডি আলবা/জুনিয়র ফিরপো; মিডফিল্ডার- সার্জিও বুসকেটস, ফ্রেংকি ডি ইয়ং, আর্থুর মেলো; ফরোয়ার্ড- লিওনেল মেসি, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান ও লুইস সুয়ারেজ। ৩-৪-৩ ফরমেশন: গোলরক্ষক- মার্ক টের স্টেগান; সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার- ক্লেমেন্ট লংলে, জেরার্ড পিকে, স্যামুয়েল উমতিতি; মিডফিল্ডার- সার্জিও রবার্তো, জর্ডি আলবা, ফ্রেংকি ডি ইয়ং, আর্থুর মেলো; ফরোয়ার্ড- লিওনেল মেসি, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান ও লুইস সুয়ারেজ। দেখা যেতে পারে যেসব নতুন মুখ আগমনের পরপরই নতুনদের জন্য খুশির সংবাদ দিয়েছেন কিকে সেতিয়েন। সামর্থ্য থাকলে মূল দলে জায়গা পাবে তরুণরা- এমনটা মন্তব্যও করেছেন। মিডফিল্ডার রিকি পুইগের খেলার ধরনের প্রশংসা করেছেন তিনি। তার অধীনে তরুণ এ মিডফিল্ডার যে দলে নিয়মিত হতে যাচ্ছে, এটা এখন অনুমেয় সত্য। এছাড়া আনসু ফাতি, কার্লেস পেরেজ, মুসা ওয়াগু ও জুনিয়র ফিরপোদের প্রতি বিশেষ নজর থাকবে এ কোচের। কী প্লেয়ার অবশ্যই লিওনেল মেসির মতো একজন ফুটবলার যেকোনো কোচের কী প্লেয়ার হবেন সেটাই স্বাভাবিক। সেতিয়েনও এ কথা উল্লেখ করেছেন। তবে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সার্জিও বুসকেটস যে তার বিশেষ তালিকায় থাকবেন, এটা সেতিয়েনের কোচিং ধরন দেখলেই বোঝা যায়। এদিকে দায়িত্ব নিয়েই কিকে সেতিয়েন জানিয়েছেন, তিনি প্রস্তুত। বার্সেলোনাকে কোন ফরমেশনে খেলাবেন- সে সম্পর্কে কিছু না বললেও, তার দল ভালো খেলবে সেটা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন। দলের সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মেসিদের নতুন কোচ। তবে সেতিয়েনের বার্সেলোনা কেমন খেলে সেটা দেখার জন্য রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাত ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেতিয়েনের অধীনে গ্রানাডার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবেন মেসি-বুসকেটসরা। ফুটবল ও দাবার মস্তিষ্ক দিয়ে ন্যু ক্যাম্পে গ্রানাডার বিপক্ষে মেসি-গ্রিজম্যানদের ব্যবহার কেমন চাল দেন সেতিয়েন- সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে নিজের প্রথম ম্যাচে সেতিয়েন দলে পাচ্ছেন না লুইস সুয়ারেজ ও ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের মতো তারকাদের। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৯ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2R7ZQIT
January 19, 2020 at 06:16AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন