ঢাকা, ২১ জানুয়ারি - বনানী কবরস্থানে বাবার কবরে শেষ গন্তব্য হলো নাটকের মানুষ ইশরাত নিশাতের। এর আগে তিনি এসেছিলেন তাঁর প্রতিদিনের ঠিকানা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। কাফনে মোড়া তাঁর নিথর দেহ এসেছিল কফিনে বন্দী হয়ে। ফুলে ফুলে ভরে যায় তাঁর কফিন। বাংলাদেশের থিয়েটার অঙ্গনের পরিচিত মুখ ইশরাত নিশাত মারা গেছেন গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায়, গুলশানে বোনের বাসায়। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। সোমবার প্রথম প্রহরে ঢাকার নাট্যাঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে শোকের খবরইশরাত নিশাত আর নেই। এই নাট্যকর্মীর মৃত্যুর খবর শুনে দ্রুত অনেকেই হাজির হন গুলশানে তাঁর বোনের বাসায়। পরে শিল্পকলা একাডেমিতে আনা হলে শেষবার দেখতে এসেছিলেন সহশিল্পী, বন্ধু ও ভক্তরা। এসেছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ম. হামিদ থেকে শুরু করে নানা প্রজন্মের মঞ্চশিল্পী। তাঁদের দেওয়া ফুলে ফুলে ঢেকে যায় নিশাতের কফিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষ তাঁকে নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাবার কবরে শায়িত হন তিনি। শিল্পকলা একাডেমিতে নিশাতের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, বাংলাদেশের থিয়েটার অঙ্গনে বিদ্রোহী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ইশরাত নিশাত। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর কণ্ঠ ছিল সব সময় সোচ্চার। অসংখ্য নাটক, আবৃত্তি প্রযোজনায় মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করে সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি নিজেকে করে তুলেছেন অনন্য। আজ সারা দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে স্মরণ করেছেন ইশরাত নিশাতকে। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক বা সখ্যের গল্প এখন ঘুরছে অন্তর্জালে। নাট্যজন ম. হামিদ শিল্পকলা একাডেমির শেষবিদায় আয়োজনকে কেন্দ্র করে লিখেছেন, এ কেমন চলে যাওয়া নিশাত। কাল যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, হেঁটেছিলে, আজ সেখানেই কফিনে শুয়ে আছ তুমি। এ কেমন চলে যাওয়া? একই আয়োজনকে সামনে রেখে মঞ্চকুসুমখ্যাত শিমূল ইউসুফ বলেন, আজ প্রথমবারের মতো শুধু তোর জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। তোর জন্য আলাদা করে কোনো আয়োজন করার সুযোগ তুই আমাদের দিস নাই। এমন আয়োজন চাইনি নিশু। আজ ভোরেই নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দেন নিশাতের চলে যাওয়ার খবর। তিনি লেখেন, বাংলাদেশের নাটকের বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর ইশরাত নিশাত, কন্যা আমার, এভাবে কি চলে যেতে হয়! নাট্য নির্দেশক শুভাশিস সিনহা লেখেন, এই চাহনিতে আমরা অনেকেই চমকে গিয়েছি, কখনো বিব্রত হয়েছি, সংকোচে পড়েছি, আমাদের সকল গতি একেকবার থমকে গেছেই এই চাউনির সামনেকী যে বলে উঠবেন! কী যেন মানে করবেন! তারপর নাটকীয়ভাবে হঠাৎ পিঠ চাপড়িয়ে দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা! শিল্পকলার গেটের কোণে এই মূর্তিমান মহানাট্য আর দেখব না! এই তীক্ষ্ণ প্রশ্ন মধুর ভালোবাসা আর পাওয়া হবে না এ জীবনে! জীবন ছোট, তবু, বেশি ছোট হয়ে গেল না, নিশাত আপা? থিয়েটারকর্মী বাকার বকুল লিখেছেন, হাসেন নিশাত আপা, হাসেন। অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। চলেন দুজনে একসাথে হাসি। কিন্তু আমি এখন যা করি তাকে হাসির মতো দেখালেও তা হাসি নয়। কেননা, হাসিতে চোখের কোনো নোনা জল জমে না। কিন্তু আমার তাই হয়। হাসিতে বুকের গহিনে চিনচিন ব্যথা করে না। আমার যে ব্যথা করে। হাসি আর কান্নার ভেদাভেদ আমি ভুলে গেছি, নিশাত আপা। ভুলে যাই, ভুলে যাই সব, ভুলতে চেষ্টা করি। একখণ্ড বিভ্রান্ত থিয়েটারপল্লির কথা, মধ্যরাত অবধি গলার রগ ফুলিয়ে থিয়েটার নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা। ভুলে যাই, ভুলে যাই সব, ভুলতে চেষ্টা করি। কেননা, ভুলতে পারাই একমাত্র নিরাপদ ধর্ম। অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ লেখার একটি অংশ ছিল এমন, থিয়েটারের সব সেক্টরেই তাঁর দখল ছিল! এ রকম একজন মানুষ, বন্ধু চলে গেলেন হুট করেই! ভালোই হয়েছে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা দুস্থ শিল্পীর তালিকায় আপনার নাম দেখতে হয়নি, নিশাত আপা! আসলে বেঁচে থাকাটাই আকস্মিক! আপনাকে নিশ্চয়ই অনেক মিস করব! ভালো থাকবেন! নীলমণি ফুলের ছবি দিয়ে শাওন মাহমুদ লিখেছেন, ...নিজের মতন জীবন যাপন করেছে নিশি। কাউকে কখনো বিরক্ত করে নাই। এমনকি যাবার সময়ও না। ভালোবাসার মানুষের মৃত্যুদিন থাকতে নেই। সে বেঁচে থাকে তার ভালোবাসার মানুষের চোখের পাতায়। এখন থেকে তোমার জন্য নীলমণি ফুল ফুটবে আমার ছাদবাগানে। গুডবাই নিশি। ভালোবাসা। নাট্যকর্মী শাহাদাত হোসেন রুবেল লিখেছেন, মঞ্চ আলোকিত করাই যার ধ্যানজ্ঞান। একজন আপাদমস্তক শিল্পের মানুষ। ইশরাত নিশাত নাট্যদল দেশ নাটকএর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চে একাধারে অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় দেশ নাটক প্রযোজনা অরক্ষিতা প্রশংসিত হয়। অসংখ্য নাটক ও আবৃত্তি প্রযোজনায় মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করেন। এন এইচ, ২১ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36cIPRZ
January 21, 2020 at 04:47AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন