নয়াদিল্লী, ২০ জানুয়ারি - মানসিক অবসাদের কারণে ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেননি ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান জোনাথন ট্রট। এর আগে নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার রিচার্ড হ্যাডলিও বলেছিলেন ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থার ব্যাপারে জোর দেয়ার কথা। ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি গতবছরেও খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছেন খোলামেলা। অস্ট্রেলিয়ার মারকুটে অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অবস্থায়ও ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলেন স্রেফ মানসিক অসুস্থতার কারণে। এসব উদাহরণই প্রমাণ করে খেলোয়াড়দের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও কতোটা জরুরি। মানসিক অবসাদ ও হতাশার কারণে সবচেয়ে বড় শিরোনামটা হতে পারতেন ভারতের সাবেক পেসার প্রবীণ কুমার। যিনি কি না রিভলবার দিয়ে গুলি করে নিজেই নিজেকে মারতে বসেছিলেন। দল থেকে বাদ পড়ার পর এতোটাই অবসাদ্গ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, খুঁজে পাচ্ছিলেন না জীবনের অর্থ। যে কারণে চেয়েছিলেন নিজেকে শেষ করে দিতে। কিন্তু সে মুহূর্তেই নিজের বাচ্চাদের কথা মনে পড়ায় সামলে নেন প্রবীণ। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৩৩ বছর বয়সী প্রবীণ জানিয়েছেন ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়ার হতাশায় নিজ এলাকা মেরাটে এক শীতের সকালে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি, পকেটে ছিলো একটি রিভলবার। হরিদ্বারের রাস্তায় গতি বাড়িয়ে যেতে থাকেন যতদূর চোখ যায়। অন্ধকার এক রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে আপন মনে বলেন, এসব কী হচ্ছে? আমার নিজেকে শেষ করে দেয়া উচিৎ। ঠিক তখনই তার চোখ যায় গাড়িতে থাকা বাচ্চাদের ছবির দিকে। তা দেখে আবার ভাবেন যে নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না তিনি। প্রবীণ বলেন, আমি তখন বুঝতে পারলাম যে, আমার নিষ্পাপ বাচ্চাদের সঙ্গে এমন কিছু করা ঠিক হবে না। এটা করলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাবে। তাই আমি রিভলবার রেখে ফিরে আসলাম। অথচ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন প্রবীণ। মাত্র ২২ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে ভারতকে জিতিয়েছিলেন কমলওয়েলথ ব্যাংক সিরিজে। দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছিলেন প্রবীণ। কিন্তু ইনজুরি এবং শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার কারণে খুব বেশিদিন জাতীয় দলে খেলতে পারেননি তিনি। ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারতের জাতীয় দলে। সে বছর বাংলাদেশের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপের আসরটিই প্রবীণ কুমারের ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক মিশন। এরপর আর ফিরতে পারেননি দলে। উমেশ যাদভ, মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহদের মতো পেসাররা থাকায় জাতীয় দলে ফেরার কাজটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল তার জন্য। প্রায় ৮ বছর আগে দল থেকে বাদ পড়লেও, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যান উত্তর প্রদেশের এ পেসার। কিন্তু আর কোনো আশা না পেয়ে সে বছরের শুরুতে মাত্র ৩১ বছর বয়সে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন প্রবীণ। ইনজুরি ছাড়াও তার ব্যাপারে বড় অভিযোগ ছিলো অতিরিক্ত মদ পানের। যে কারণে দল থেকে বাদ পড়ার পর কারও সহানুভূতিও পাননি প্রবীণ। সাক্ষাৎকারে এ বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি। আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তার ব্যাপারে মানুষের নেতিবাচক ধারণাগুলোর। কিন্তু তিনিও যে অনেক ভালো কাজ করেছেন সেগুলোর ব্যাপারে কেউ কথা বলে না জানিয়ে প্রবীণ বলেন, আমাকে বলুন যে কে মদ পান করে না? মানুষ আমার ব্যাপারে এ বিষয়টা ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি জানি না এটা কেনো! কেউ আমার ভালো দিকগুলো নিয়ে কথা বলবে না। আরও যোগ করেন, আমি ছোট বাচ্চাদের পৃষ্ঠপোষকতা করি। আমি অন্তত ১০ জন মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি ক্রিকেটারদের আর্থিকভাবেও সাহায্য করে থাকি। ভারতে সবাই শুধু একটা হাওয়া ছড়িয়ে দেয় যে কারো ব্যাপারে। আমার হাওয়াটা নেতিবাচক বানানো হয়েছে। আর হাওয়া তো হাওয়াই, একবার ছড়িয়ে গেলে সেটা চলতেই থাকে। এ ব্যাপারে কারোই কিছু করার থাকে না। ভারতের হয়ে ৬৮ ওয়ানডে, ৬ টেস্ট ও ১০ টি-টোয়েন্টি খেলা প্রবীণ জানিয়েছেন একটি অজানা তথ্যও। তার ডান চোখে সমস্যা থাকার কারণে বল দেখতেন না ভালোভাবে। যে কারণে ব্যাটিংয়ের সময় প্রায়ই হাস্যকরভাবে আউট হতেন তিনি। তবে বোলিংয়ে কোনো সমস্যা হতো না বলেই জানান প্রবীণ। তার ভাষ্যে, আমি ডান চোখে ভালোভাবে দেখতে পারি না। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলার সময় একবার বল লেগেছিল। তখন দিল্লীতে আমার অপারেশন করা হয়। ডাক্তাররা বলেছিল, চাইলে চক্ষু প্রতিস্থাপন করা যাবে। কিন্তু তখন নিশ্চয়তা নেই যে চোখে দেখতে পাবো কি না। এজন্য প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি নেইনি। খেয়াল করলে দেখবেন আমি প্রায়ই স্লোয়ার ডেলিভারিতে হাস্যকরভাবে বোল্ড হয়ে যেতাম। কারণ বল দেখতেই পেতাম না। বাউন্সারেও সমস্যা হতো আমার। তবে লেন্থ ডেলিভারিতে কখনও ঝামেলা হয়নি। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টেনেছেন বছর দুয়েক আগে। তার বয়সের ক্রিকেটাররা এখনও মাতাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তবে প্রবীণ এখন চাচ্ছেন, তার রাজ্য দল উত্তর প্রদেশের বোলিং কোচ হতে। এ দলের প্রতি তার দায়বোধের কারণেই অন্য কোনো দলের দায়িত্ব নিতে চান না প্রবীণ। বর্তমানে উত্তর প্রদেশে কোনো বোলিং কোচ নেই বিধায় এ সুযোগটি লুফে নিতে চান তিনি। প্রবীণ বলেন, আমার এমন মনে হচ্ছে যে, সবাই ভাবছে প্রবীণ অবসর নিয়েছে কিন্তু তার হাতে অবসর সময় নেই। কেউ কি জানে যে উত্তর প্রদেশ দলের কোনো বোলিং কোচ নেই? আমার তো এখন দলের সঙ্গে কোচ হিসেবে থাকা উচিৎ, এখানে (মেরাটে) অলসভাবে বসে না থেকে। তিনি আরও বলেন, উত্তর প্রদেশের ক্রিকেটই আমাকে সব দিয়েছে। এটাই আমার বাড়ি। আমি অন্য কোথাও যেতে পারি না। যদি আপন লোক ফিরিয়ে দেয়, তাও ঘরের মধ্যেই রাখবে। কিন্তু বাইরের মানুষ কিছু করলে কোথায় ছুড়ে ফেলবে তার হদিস নেই। আমি বন্ধুদের বলেছি যে, সারাজীবন উত্তর প্রদেশের হয়ে খেলেছি, এখন এই দলেরই বোলিং কোচ হতে চাই। তরুণদের শেখানোর সামর্থ্য এবং প্যাশন আমার আছে। আমি এটা পারবো। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে বিনে পয়সায় কোচিং করাতেও রাজি প্রবীণ। যেকোনো মূল্যে ক্রিকেটে ফেরাটাই এখন তার লক্ষ্য, দেখুন টাকাপয়সা কখনোই আমার প্রথম পছন্দে ছিলো না। আমি সৌভাগ্যবান যে কিছু সুনাম কুড়িয়েছি। এখন আমি ক্রিকেটে ফিরতে চাই। আমি শুধু এই জিনিসটাই জানি এবং ভালোবাসি। কয়েকজন বলেছে রাজনীতিতে যোগ দিতে, ঘরে বসে নিশ্চয়ই রাজনীতি করা যাবে না। বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবো আমি? (হাসি)। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২০ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2TQdAK7
January 20, 2020 at 09:23AM
20 Jan 2020

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top