ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি- বাংলাদেশের আলোচিত পাকিস্তান সফরে পিসিবি চেয়েছিল টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট ম্যাচ। তখন টি-টোয়েন্টি ছাড়া কোনো ফরম্যাটেই সম্মতি দেয়নি বিসিবি। সেখান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টের ফাঁকে একটা ওয়ানডেও খেলতে চলেছে বাংলাদেশ।আগের অবস্থান থেকে একেবারে সরে বিসিবি পূর্ণ সফরে রাজি হয়ে যাওয়ায় সবাই বিস্মিত। নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে। সব প্রশ্নই যৌক্তিক। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- হঠাৎ কেন পাকিস্তানকে একটা ওয়ানডে ম্যাচ বোনাস দেয়া হলো? নিরাপত্তাঝুঁকি কি হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে? অবশ্য নিরাপত্তা নিয়ে বড় গলায় প্রশ্ন তোলার নৈতিক অবস্থান আগেই হারিয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। নারী দল সফর করেছে, বয়সভিত্তিক দলও সফর শেষ করে ফিরেছে নিরাপদে; তারপর এমন প্রশ্নকে কিছুটা আরোপিত, কিছুটা রাজনৈতিক তো পিসিবি বলতেই পারে। আকারে-ইঙ্গিতে তেমনটাই বলছিল তারা। নিরাপত্তার ঝুঁকি যে আগের মতো নেই তা সাম্প্রতিক কয়েকটি সিরিজ সফলভাবে আয়োজন করে কিছুটা প্রমাণও করেছে পাকিস্তান। তবে এ কথা ঠিক যে, পাকিস্তান এখনো মোটেই জঙ্গিমুক্ত নয়। সন্ত্রাসী হামলা এখনো বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় অনেক বেশি হয় সেখানে। গত ৮ জানুয়ারিই ডন-এর এক প্রতিবেদনে পাকিস্তান ইন্সটিটিউট ফর পিস স্টাডিজ (পিআইপিএস)-এর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পিআইপিএস বলছে, ২০১৯ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ১৩ ভাগ কমেছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ সমফরে তিন দফায় তিনটি টি-টোয়েন্টি, একটি ওয়ানডে এবং দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ২৪ ,২৫ ও ২৭ জানুয়ারি লাহোরে তিনটি ম্যাচ খেলে দেশে ফিরবে টি-টোয়েন্টি দল। তারপর রাওয়ালপিন্ডিতে ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম টেস্ট। তারপর ৩ এপ্রিল করাচিতে হবে একমাত্র ওয়ানডে। দুদিন পর সেখানেই শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। এটা বড় কোনো স্বস্তির খবর নয়, কারণ, পিআইপিএস জানিয়েছে, পাকিস্তানে মোট ২২৯টি হামলা হয়েছে ২০১৯ সালে, সেসব হামলা কেড়ে নিয়েছে ৩৫৭ জন মানুষের প্রাণ। এই বাস্তবতার মাঝেই অবশ্য কয়েকটি সিরিজ ভালোভাবে শেষ করেছে পিসিবি। এমনকি পাকিস্তানে যাদের দল প্রায় সরাসরি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল, সেই শ্রীলঙ্কাও দু-দুবার দল পাঠিয়েছে ২২৯টি হামলার বছরেই। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা দিতে পাকিস্তান সক্ষম এ কথা মানতে হবে। তাছাড়া দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড সফর চূড়ান্ত করার পর তো আর পিছিয়ে আসা যায় না। সফর হোক। তবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার বিষয়টা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাক, এটাই সবার কামনা। এবার ফেরা যাক উড়ে এসে জুড়ে বসা ওয়ানডে ম্যাচটির প্রসঙ্গে। অনেকেই এই ম্যাচের কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছেন না। করাচির ওই ম্যাচটি যেন সুস্থ দেহে বড়সড় এক টিউমার। টেস্ট ম্যাচের ঠিক আগে আগে একটা মাত্র অনাকাঙ্খিত ওয়ানডেকে এর চেয়ে ভালো আর কী মনে হতে পারে? কিন্তু বিসিবিকে হঠাৎ একটু ইতিবাচক অর্থে চতুর ভাবতে ইচ্ছে করছে। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন পাকিস্তান সফরের সূচি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বলেছিলেন, মাশরাফি চাইলে তাকে এমনভাবে অবসর নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে, যে সুযোগ, যে সম্মান অতীতে কেউ পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। খুব বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল কথাটা। তা টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট সিরিজের মাঝখানে পাকিস্তান না চাইতেই একটা ওয়ানডে ঢুকিয়েও তো বাড়াবাড়িই করেছে বিসিবি। এখন এই অপ্রত্যাশিত ম্যাচটিকেও কিন্তু অর্থবহ করে তোলা যায়।এখানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিসিবি কি তা ভেবেছে? ভেবে না থাকলেও ভাবার সুযোগ আছে। যে যেমন অবস্থান থেকে যত কথাই বলি না কেন, মাশরাফির তো এমন একটা সুযোগ প্রাপ্য! তাকে এ উপহার দিতেই পারে বাংলাদেশ। সূত্র: ডয়চে ভেলে আর/০৮:১৪/১৭ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2G1bi2m
January 17, 2020 at 04:08PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top