ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি - হয় ক্রিস গেইল, নয় আন্দ্রে রাসেল- অবস্থাটা এমন ছিল যে, একজনকে বিদায় নিতেই হতো। কারণ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঐ দুই ক্যারিবীয় তারকাই ছিলেন মুখোমুখি। সেই লড়াইয়ে শেষ হাসি আন্দ্রে রাসেলের। মঙ্গলবার রাতে শেরে বাংলায় ২২ বলে ৫৪ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে নিজ দল রাজশাহী রয়ালসকে ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। তার ঐ অতিমানবীয় উইলোবাজির কাছেই হেরেছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সবার আগে সেরা চারে পৌঁছে, টি-টোয়েন্টির সেরা উইলোবাজকে দলে ভিড়িয়েও ফাইনাল খেলা হলো না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-ইমরুল কায়েসদের। স্বদেশী আন্দ্রে রাসেলের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ, বিনোদন, বিধ্বংসী উইলোবাজ ক্রিস গেইল। বিশ ওভারের ক্রিকেটের শুরু থেকেই তার ব্যাট যেন খোলা তরবারি। নিজের দিনে বিশ্বের যেকোনো বোলিং শক্তিকে দুমড়ে মুচড়ে বিধ্বস্ত করতে জুরি নেই গেইলের। বিপিএলেও তার সে উত্তাল উইলোবাজির নজির আছে অনেক। এক কথায় বিপিএলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনই গেইল। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে যত কিছু করা যায়- বিপিএলে গেইল তাই করে দেখিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (৫টি)। সর্বাধিক ছক্কার রেকর্ড তারই দখলে। গত আসর ছাড়া তার ব্যাট প্রায় প্রতিবার বিপিএলের আকর্ষণকে বাড়িয়েছে বহুগুণে। ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সকে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করেছেন। সেবার গেইলের উইলোর দ্যুতি আর ব্যাটের তান্ডবেই পেছন থেকে উঠে এসে শিরোপা জিতেছিল রংপুর রাইডার্স। সে আসরে ১১ ম্যাচে ৪৮৫ রান করে গেইল হয়েছিলেন টপ স্কোরার। যেখানে ছিল ২টি করে সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি, ৫৩.৮৮ গড় আর ১৭৬.৩৬ স্ট্রাইকরেটে গেইল ছিলেন তার মতই স্বপ্রতিভ, উজ্জ্বল আর বিধ্বংসী। একবার ০ রানে ফেরা এ ক্যারিবীয়ান বাকি ১০ ইনিংসে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৪৭টি। আর বাউন্ডারি ছিল ২৯টি। এর মধ্যে ছিল দুটি শতরান। দুটিই নকআউট পর্বে- একদম বাঁচামরার ম্যাচে। প্রথমটি এলিমিনেটরে আর পরেরটি ফাইনাল ম্যাচে। এলিমিনেটরে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ২৪৭.০৭ স্ট্রাইকরেটে ১৪ ছক্কা আর ৬ বাউন্ডারিতে ৫১ বলে ১২১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে একা দলকে কোয়লিফায়ার-২এ নিয়ে যান। এরপর কোয়ালিফায়ার-২এ আর দেখা যায়নি গেইল ম্যাজিক। সম্পূর্ণ স্বভাববিরোধী ব্যাটিংয়ে ১০ বলে ৩ রান করে আউট হন গেইল। ফাইনালে আবার শেরে বাংলায় আবার সেই গেইল ঝড়। ৬৯ বলে রেকর্ড ১৮ ছক্কা আর ৫ বাউন্ডারিতে ১৪৬ রানের টাইফুন ইনিংস উপহার দেন গেইল। তার ওপর ভর করে রংপুর পায় ২০৬ রানের বিশাল পুজি। তাতে করে ৫৭ রানের জয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মাশরাফির রংপুর। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই বিপজ্জনক আর বিধ্বংসী ওপেনার ক্রিস গেইল আগেরবার (বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে) একদমই নিজেকে খুঁজে পাননি। বেশিরভাগ আসরে মাঝপথে বা হঠাৎ খেলতে এসে উইলোর দ্যুতিতে মাঠ আলোকিত করেছেন। প্রতিপক্ষ বোলিং ফিল্ডিংকে তছনছ করে দিয়ে নিজ দলের বিজয় কেতন উড়িয়েছেন। কিন্তু গতবারই প্রথম গেইল ছিলেন নিজের ছায়া। অথচ সেবার প্রায় পুরো আসর জুড়ে খেলেছেন। কিন্তু এক ম্যাচেও নিজেকে খুঁজে পাননি। ১২ ম্যাচে অংশ নিয়ে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানো, মাঠ মাতানো সেঞ্চুরি ও দল জেতানো ইনিংস খেলা বহু দূরে, কিছুই করতে পারেননি। ১২ ইনিংসে ১ বার নট আউট থেকে করেছিলেন সাকুল্যে ২০৩ রান। সর্বোচ্চ ৫৫, গড় ১৮.৪৫, স্ট্রাইকরেট বড্ড বেমানান; ১০৬.৮৪। পঞ্চাশ ছিল একটি, শুন্য একবার, চার ১৬টি ও ছক্কা ১৩টি। চলতি বিপিএলেও আগের তিন ম্যাচে মেলেনি সেই চেনা গেইলের দেখা, রান পাননি। মাঝে মধ্যে দু একটি শট দেখে মনে হয়েছে গেইল খেলছেন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেরে বাংলায় কোয়ালিফায়ার-২এ মিলেছিল গেইল ঝড়ের পূর্বাভাস। রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে গেইল প্রায়ই ফিরে পেয়েছিলেন নিজেকে। দেখে মনে হচ্ছিল, আজ বুঝি কিছু একটা হবে। একদম শুরু থেকেই শতভাগ ইতিবাচক গেইল যেন পণ করেই নেমেছিলেন যে, ঝড় বইয়েই ছাড়বো। ছোট খাট একটা ঝড় অবশ্য বয়ে গেছেও। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুবর অফস্পিনে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড না হলে কী যে হতো? তা বলা কঠিন। ইনিংসের দশম ওভারে আফিফের অফস্পিনে প্রথম বলে অবলীলায় পায়ের পাতার ওপর ভর করে লং অন আর ওয়াইড মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানো গেইল, পরের বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান। তার আগে গেইলের ব্যাট থেকে আসে ২৫০.০০ স্ট্রাইকরেটে হাফ ডজন বাউন্ডারি ও পাঁচ ছক্কায় ২৪ বলে ৬০ রানের হ্যারিক্যান ইনিংস। অবলীলায় ও অনায়াসে নিখুঁত টাইমিংয়ে বড় বড় ছক্কা হাঁকানো দেখে মনে হচ্ছিলো গেইল এখনও ফুুরিয়ে যাননি। তার দিনে হয়ে যেতে পারে যেকোনো কিছুই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেল তার ব্যাটের দ্যুতি। এবার ঝড়ের পূর্বাভাস হয়েই থাকলেন গেইল। পঞ্চম আসরের মত পরপর দুবার আর ম্যাচ ভাগ্য গড়ে দিয়ে শিরোনামে জায়গা করে নেয়া হলো না এ ক্যারিবীয় তারকার। গেইল ঝড়ের দেখা মিললো না এবারও। অনেক আশা নিয়ে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে তাকে এনে পরপর দুই বার বিফল মনোরথে রংপুর রাইডার্স আর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তারা যে গেইলের উত্তাল উইলোবাজিই দেখতে চান। টানা দুই আসরে সেই চেনা গেইলকে না দেখে হতাশ ও অতৃপ্ত গেইল ভক্ত ও ক্রিকেট অনুরাগিরা। কে জানে আবার কবে মিলবে সেই গেইলের দেখা? বিপিএলে এরপর কি আর তার দেখা মিলবে? সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৬ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2FSDNPP
January 16, 2020 at 09:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন