রংপুর, ১৩ ফেব্রুয়ারি - ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম মুঘল সাম্রাজের অধিপতি সম্রাট আকবর। নিজের শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাট আকবর ইতিহাসকে যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, ততটা কম ভারতীয় শাসকই করতে পেরেছেন। এজন্য ইতিহাস তার নাম দিয়েছে আকবর দ্য গ্রেট। চারশ বছর পর ঠিক যেন মুঘল সাম্রাজ্যের মতোই ক্রিকেট সাম্রাজ্য বিজয় করলেন আরেক আকবর, আকবর আলি। বোনের মৃত্যুর ১৯ দিনের মাথায় শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশকে বিশ্বকাপ শিরোপার আনন্দে ভাসিয়েছেন এই আকবর। বাড়ি রংপুর শহরের পশ্চিম জুম্মাপাড়া মহল্লায়। শৈশব-কৈশোরের স্বর্ণালি দিনগুলো কেটেছে এখানেই। বাড়ির পাশে বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন আকবর। এখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১২ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ পান। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প। ক্রিকেটের জন্য ছোটবেলা থেকেই পাগল মফস্বল শহরের এই ছেলেটির হাত ধরে আজ বাংলাদেশ পেল বিশ্বজয়ের স্বাদ। এরই মধ্যে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন আকবর বাহিনী। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে রংপুরে আসার কথা বিশ্বজয়ী দলটির অধিনায়কের। এদিকে তার আগমন ঘিরে জুম্মাপাড়া ছাড়াও রংপুর নগরীতে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। নিজ পাড়ায় যেন বইছে ঈদের আনন্দ। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সকলেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়- কখন আসবেন ক্রিকেট সাম্রাজ্যের নতুন অধিপতি, তাদের প্রিয় আকবর! তবে এবারের আসাটা ঠিক যেন কোনো রাজ্য জয় করে ফেরার মতই। গত রোববার রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে যে বিজয়ের সূচনা হয়, তার ঢেউ এখনো আছড়ে পড়ছে আকবরের জন্মভূমি রংপুরে। এ কারণে নগরীর পাড়া-মহল্লা জুড়ে এখন একটাই নাম আকবর দ্য গ্রেট। এরইমধ্যে পশ্চিম জুম্মাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের আয়োজনে শুরু হয়েছে মঞ্চ তৈরির কাজ, দেয়া হবে সংবর্ধনা। সে সঙ্গে তাকে সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত রংপুর সিটি কর্পোরেশনও। বাড়ির পাশে সিটি বাজারে একসময় পেঁয়াজের ব্যবসা করতেন আকবর আলির বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা। বর্তমানে ফার্নিচার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। মা শাহিদা বেগম গৃহিণী। এই দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট আকবর। বুধবার বিকেলে রংপুর পশ্চিম জুম্মাপাড়ায় আকবর আলির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ভিড় করছেন সেখানে। প্রতিবেশী হাফিজ উদ্দিন জানান, ছোটবেলা থেকেই আকবর শান্ত স্বভাবের। বাড়িতে এলে তার সঙ্গে দেখা হতো। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে রংপুরে এসে তার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে নিয়েছিলেন আকবর। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুনো আকবরের স্কুলে গিয়েও দেখা যায়, সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে মূল ফটকে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার। একই পাড়ার আল-আমিন সুমন বলেন, যে গলিতে আকবর টেপ টেনিস বল দিয়ে খেলতো, সেই জুম্মাপাড়ার গলি থেকে উঠে আসা আকবরের হাতে টেপ টেনিস বলের বদলে এখন বিশ্বকাপ! এটা আমাদের রংপুরবাসীর জন্য গর্বের। আমরা মনে করি, সারা বাংলাদেশের সঙ্গে রংপুর আরো একধাপ এগিয়ে গেল এই আকবরের হাত ধরেই। পশ্চিম জুম্মাপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের হয়ে আকবর যে ক্রীড়া নৈপূণ্য দেখিয়েছে সেজন্য রংপুরের মানুষ হিসেবে আমরা গর্বিত। আর তাই ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা প্রদানের আয়োজন করা হচ্ছে। ভালোলাগার অনুভূতি ব্যক্ত করা থেকে পিছিয়ে নেই এই পাড়ার আকবর ক্ষুদে ভক্তরাও। তাদের প্রিয় আকবর ভাই বিজয়ী হয়েছে, এ যেন ঈদের দিনের মতই খুশি আর আনন্দের দিন। তাইতো আকবরের বাড়ির সামনেই ঘুরঘুর করছে ক্ষুদে বাহিনীর এ দলগুলো। তবে এতসব আনন্দ আয়োজনের মাঝেও বিষাদের কালো মেঘ যেন ছুঁয়ে আছে আকবরের পরিবারের মাঝে। যে শোকের ছায়া হয়তো আকবরের মনের এক কোণে জমা হয়ে আছে। বীরের বেশে বাড়ি ফিরবে ভাই, সেটা আর দেখা হবে না একমাত্র বোন খাদিজা খাতুনের। জমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গত ২২ জানুয়ারি মারা যান বাকশক্তিহীন খাদিজা। এমন খবরেও আকবর মুষড়ে যাননি, বোনকে হারানোর শোক থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে শিরোপার পথে দলকে নিয়ে গেছেন তিনি। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১৩ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2SGrSKT
February 13, 2020 at 02:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন